ধর্ম

নামাজের মধ্যে থুতু এলে কী করবেন?

নামাজের মধ্যে অনেকেরই থুতু আসে। থুতু এলে কী করতে হবে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এমনিতে মসজিদে থুতু বা কফ ফেলাকে গুনাহের কাজ বলা হয়েছে। আবার থুতু ফেলার কারণে এর কাফফারাও আছে। তবে একান্তই যদি কারো থুতু বা কফ চলে আসে তবে করণীয় কী? এ সম্পর্কে হাদিসের একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়-

Advertisement

> নামাজে ডান দিকে থুতু না ফেলা

১. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন তার সামনে বা ডানে থুতু নিক্ষেপ না করে; বরং তার বামে অথবা বাম পায়ের নীচে ফেলে।’ (বুখারি)

২. হজরত আবু হুরায়রা ও আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদের দেয়ালে কফ দেখলেন। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু কাঁকর নিলেন এবং তা মুছে ফেললেন। এরপর তিনি বললেন, তোমাদের কেউ কফ ফেললে তা যেন সে সামনে অথবা ডানে না ফেলে। বরং সে বাম দিকে কিংবা বাম পায়ের নীচে ফেলে।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

Advertisement

> থুতু ফেলবে বাম দিকে

১. হজরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুমিন যখন নামাজে থাকে, তখন সে তার প্রতিপালকের সাথে নিভৃতে কথা বলে। কাজেই সে যেন তার সামনে, ডানে থুতু না ফেলে, বরং তার বাম দিকে অথবা (বাম) পায়ের নিচে ফেলে।’ (বুখারি)

২. হজরত আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা মসজিদের কেবলার দিকের দেয়ালে কফ দেখলেন, তখন তিনি কাঁকর দিয়ে তা মুছে দিলেন। এরপর সামনের দিকে অথবা ডান দিকে থুতু ফেলতে নিষেধ করলেন। কিন্তু (প্রয়োজনে) বাম দিকে অথবা বাম পায়ের নীচে ফেলতে বললেন।’ (বুখারি)

> মসজিদে থুতু বা কফ ফেলার কাফ্ফারা

Advertisement

১. হজরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মসজিদে থুতু ফেলা গুনাহের কাজ, আর তার কাফফারাহ (প্রতিকার) হচ্ছে তা দাবিয়ে দেওয়া (মুছে ফেলা)।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)

২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তোমাদের কেউ নামাজে দাঁড়ালে সে তার সামনের দিকে থুথু ফেলবে না। কেননা সে যতক্ষণ তার মুসল্লায় থাকে, ততক্ষণ মহান আল্লাহর সঙ্গে চুপে চুপে কথা বলে। আর ডান দিকেও ফেলবে না। তার ডান দিকে থাকেন ফেরেশতা। সে যেন তার বাম দিকে অথবা পায়ের নীচে থুথু ফেলে এবং পরে তা দাবিয়ে দেয় (মুছে ফেলে)। (বুখারি)

> থুতু ফেলতে বাধ্য হলে

যদি কারো থুতু ফেলার একান্ত প্রয়োজন হয় তবে সে কি করবে এ প্রসঙ্গে হাদিসে পাকে প্রিয় নবি ঘোষণা করেন-

হজরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবলার দিকে (দেয়ালে) কফ দেখে তা নিজ হাতে মুছে ফেললেন আর তাঁর চেহারায় অসন্তোষ প্রকাশ পেল। বা সে কারণে তাঁর চেহারায় অসন্তোষ প্রকাশ পেলো এবং এর প্রতি তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ পেল। তিনি বললেন, যখন তোমাদের কেউ নামাজে দাঁড়ায়, তখন সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে চুপে চুপে কথা বলে। অথবা (বলেছেন) তখন তার প্রতিপালক, কেবলা ও তার মাঝখানে থাকেন। কাজেই সে যেন কেবলার দিকে থুতু না ফেলে; বরং (প্রয়োজনে) তার বাম দিকে বা পায়ের নীচে ফেলবে। এরপর তিনি চাদরের (পোশাকের) কোণ ধরে তাতে থুতু ফেলে এক অংশের উপর অপর অংশ ভাঁজ করে দিলেন এবং বললেন- অথবা এমন করবে।’ (বুখারি)

হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী একান্তই যদি কারো নামাজে থুতু আসে তবে তার উচিত, বাম দিকে বা বাম পায়ের নিচে কিংবা পরিহিত পোশাকে এক কোণে ফেলে কাপড় ভাজ করে রাখা। আবার কেউ যদি মসজিদে থুতু ফেলে তবে নামাজের পরে তা মুছে ফেলাই হচ্ছে এর কাফফারা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে থুতু ফেলার ব্যাপারে হাদিসের দিকনির্দেশনা মেনে চলার তাওফিক দান করুন। হাদিসের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস