ভ্রমণ

ব্রাহ্মসমাজের স্মৃতিচিহ্ন

ব্রাহ্মসমাজ বা ব্রাহ্মসভা ১৯ শতকে স্থাপিত এক সামাজিক ও ধর্মীয় আন্দোলন যা বাংলার পুনর্জাগরণের পুরোধা হিসেবে পরিচিত। ১৮২৮ সালের ২০ আগস্ট কলকাতায় হিন্দুধর্ম সংস্কারক রাজা রামমোহন রায় ও তার বন্ধুবর্গ মিলে এক সার্বজনীন উপাসনার মাধ্যমে ব্রাহ্মসমাজ শুরু করেন। তাঁদের উপাস্য ছিল ‘নিরাকার ব্রহ্ম’। সেই থেকেই নিজেদের ধর্মের নাম রাখেন ব্রাহ্ম। তবে ঢাকায় একটি ব্রাহ্মসমাজ মন্দির রয়েছে। সময়-সুযোগ পেলে আপনি ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকে। তার জন্য খুব বেশি সময়ও ব্যয় করতে হবে না। অবস্থানঢাকা ব্রাহ্মসমাজ মন্দির রাজধানীর ইসলামপুরের পাটুয়াটুলি এলাকায় ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের পাশে অবস্থিত। এটি ‘পূর্ব বাঙ্গালা ব্রাহ্মসমাজ মন্দির’ নামেও পরিচিত। ১৮৬৯ সালের ২২ আগস্ট মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১৮৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর মন্দিরটি উদ্বোধন করা হয়।ঢাকায় ব্রাহ্মসমাজঢাকার শিক্ষা, সংবাদপত্রসহ বহু সমাজসেবামূলক কাজে ব্রাহ্মসমাজের অবদান উল্লেখযোগ্য। ঢাকার পাটুয়াটুলি, আরমানিটোলা ও নিমতলি কুঠির বিধানপল্লীতে ছিল তাদের উপাসনালয়। ১৮৬৬ সালে দীননাথ সেন ঢাকায় ব্রাহ্মদের নিজস্ব উপাসনালয় নির্মাণের প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ২৫ আগস্ট ১৮৬৬ সালে ৯ সদস্যের নির্মাণ কমিটি গঠন করা হয়। মন্দিরটি স্থাপনের আগে ঢাকার ব্রাহ্মরা উপাসনার জন্য একত্রিত হত আরমানিটোলার ব্রাহ্মসমাজগৃহে।নির্মাণের ইতিহাসএকজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট নিজের বাড়িটি ব্রাহ্মসমাজকে দান করেন। মতান্তরে এই জমির মালিক ছিলেন কলতাবাজারের জমিদাররা। ব্রাহ্ম মন্দিরের জন্য মোট ৫ হাজার ৮৭৫ জন চাঁদা দেয়। এই জমি রেজিস্ট্রি করা হয় ১০ সেপ্টেম্বর ১৮৬৮ সালের দিকে। অবশ্য এপ্রিল ১৮৬৭ সালেই অভয় কুমার দত্ত পাটুয়াটুলির মোড়ে মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। উমাকান্ত ঘোষ এই মন্দির ভবনের নকশা প্রস্তুত করেন; রামমাণিক্য সেন নির্মাণ কাজ পরিচালনা করেন। দোতলা সমান উচ্চতার একতলা এ মন্দিরটি নির্মাণ ব্যয় হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা।মন্দিরের বর্ণনামন্দিরের মূল হলঘরটির দৈর্ঘ্য ৫৫ ফুট, প্রশ্বস্ত ২২ ফুট এবং উচ্চতা ২১ ফুট। হলটির চতুর্পাশে ১০ ফুট প্রশ্বস্ত বারান্দা রয়েছে; যা দক্ষিণ দিকে (সম্মুখ ভাগ) ২০ ফুট হলেও অপর তিন দিকে ১২ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন। চার ফুট উঁচু মঞ্চের উপর পূর্ব-পশ্চিমে আয়তকার মন্দিরটি ব্রিটিশ স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত। মন্দির ভবনের ছাদের সামনের অংশে একটি নকশাদ্বার চূড়ায় লেখা আছে ‘ব্রাহ্মসমাজ’। সাদামাটা এ মন্দিরে প্রবেশ করতে হয় পাঁচটি প্রশস্ত সিঁড়ি বেয়ে। সিঁড়িগুলো উপরের দিকে পাশে ক্রমশ কমে গেছে। সিঁড়ির ঠিক মাঝখানে উন্মুক্ত খিলান প্রবেশপথ।বৈশিষ্ট্যপ্রায় ১০০ ফুট দীর্ঘ ও ৫৫ ফুট প্রশস্ত মন্দিরটির চারপাশে ১৫ ফুট প্রশস্ত বারান্দার ঠিক মাঝখানে বিশাল একটি হলঘর। বারান্দার চারকোণের উপরের অংশে আছে চারটি বর্গাকার কক্ষ। পেছন দিকের বারান্দার অংশে ঘরগুলোতে ওঠার জন্য দুটি আলাদা সংকীর্ণ সিঁড়ি। ২১ ফুটের হলঘরটি উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চারপাশের বারান্দা থেকে হলঘরে প্রবেশের নির্দিষ্ট দূরত্বে মোট ১৬টি প্রবেশপথ আছে। এরমধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ৫টি করে আর পূর্ব-পশ্চিমে ৩টি করে প্রবেশপথ আছে। বিশালাকার এই প্রবেশপথগুলো সবই খড়খড়ির। হলঘরের উত্তর অংশের ঠিক মাঝখানে চার ফুট উঁচু বেদিতে উঠতে হয় চারটি প্রশস্ত সিঁড়ি বেয়ে। হলঘরটির পূর্ব ও পশ্চিম দিকের উপরের অংশে আছে রেলিং দেওয়া আয়তকার বারান্দা। মন্দির নির্মাণের সময়ই মন্দিরের পেছনের অংশে সমাজের প্রচারকদের জন্য কয়েকটি ভবন নির্মাণ করা হয়। দর্শনের সময়প্রতি রবিবার সন্ধ্যায় এখানে প্রায় তিনশ’ সভ্য উপাসনার জন্য উপস্থিত হত বলে জানা যায়। সে হিসেবে প্রতি রবিবার বিকাল ৫টা অথবা সাড়ে ৫টার দিকে খোলা হয়। আর ভিতরে অবস্থিত রাজা রামমোহন রায় লাইব্রেরি প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।এসইউ/আরআইপি

Advertisement