ধর্ম

জুমার দিন আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গে করণীয় কী?

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবারিক কাজে স্ত্রীদের সময় দিতেন। তাদের সহযোগিতা করতেন। আর নামাজের আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গে সব কাজ ছেড়ে দিতেন। এটি ছিল প্রিয় নবির সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ সুন্নাত কাজ।

Advertisement

কিন্তু জুমার দিন আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কী করতে হবে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা নিজেই দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যা হুবহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের সঙ্গে সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে। কী সেই মিল? অজান হওয়ার পরও কি কাজ করা যাবে?

আজান হওয়ার পর কোনো কাজ কর্ম করার সুযেগ নেই। কোরআনুল কারিমের ভাষ্যমতে এমটিই প্রমাণিত। আল্লাহ তাআলা বলেন-

১. يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ

Advertisement

হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ।' (সুরা জুমআ : আয়াত ৯)

এ আয়াতে কারিমায় সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা এসেছে, জুমআর নামাজের আজান হওয়ার সঙ্গ সঙ্গে হাতের সব কাজ রেখে মসজিদের দিনে নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে ছুটে চলা। আর প্রিয় নবি সব ওয়াক্তে আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গে কী করতেন? তা-ও এসেছে হাদিসের বর্ণনায়-

২. হজরত আসওয়াদ বিন ইয়াজিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়ীতে কি কি ধরনের কাজ করতেন? উত্তরে তিনি বললেন-

كان يكون في مهن أهله، فإذا سمع بالأذان خرج

Advertisement

‘তিনি তার পরিবারের সব কাজে নিয়োজিত থাকতেন, তবে আজান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেন।’ (বুখারি)

৩. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে কী কী কাজ করতেন? তিনি উত্তর দেন-

كان بشرًا من البشر: يفلي ثوبه ويحلب شاته، ويخدم نفسه

‘তিনি একজন মানুষ ছিলেন, তিনি তাঁর কাপড় সেলাই করতেন, ছাগলের দুধ দহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)

সুতরাং প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি সাংসারিক সব কাজ আঞ্জাম দিয়ে আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মসজিদে নামাজের জন্য যেতে পারেন তবে মুমিন মুসলমানের কী হলো যে, তারা আজান শোনার পরও ঘরে বসে থাকবে?

আজান হলে মসজিদে যেতে হবে এনির্দেশনা দিয়েই মহান আল্লাহ থেমে থাকেননি বরং নামাজ শেষ হলে কী করতে হবে তাও বলেদিয়েছেন সুস্পষ্টভাষায়। তাহলো-

فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ

এরপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জীবিকা অর্জর্নের উদ্দেশ্যে) ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) সন্ধান কর। আর আল্লাহকে অধিকরূপে স্মরণ করতে থাকো। যাতে তোমরা (উত্তম জীবিকা পেয়ে) সফলকাম হও।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ১০)

যেহেতু আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশনা হলো হাতের কাজ ফেলে রেখে মসজিদের প্রস্তুতি নিয়ে নামাজের ছুটে যাওয়া। আবার নামাজ শেষে কী করতে হবে তাও দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাই কোরআনের দিনির্দেশনা অনুযায়ী নামাজ শেষ হলে আল্লাহর উপর ভরসা করে এ দোয়া পড়ে জমিনে উত্তম রিজিক ও অনুগ্রহের অনুসন্ধানে নেমে পড়া। তাহলো-

اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَسْئَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ

উচ্চারণ :‘ আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিক।’

অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে রিজিক ও অনুগ্রহ চাই (আপনি উত্তম রিজিকের ব্যবস্থা করে দিন।)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আজানের সঙ্গে সঙ্গে নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। আবার নামাজের পর রিজিকের অনুসন্ধানে বরকত দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস