সম্পদ ক্ষমতা ও মর্যাদার ভিত্তিতে সাধারণত দামি লোক নির্বাচন করা হয়। কিন্তু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন ভিন্ন কথা। আবার কোরআনের বর্ণনায়ও প্রিয় নবির কথার মিল পাওয়া যায়। তবে প্রকৃতপক্ষে দামি লোক কে? মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাকে দামি লোক বলেছেন?
Advertisement
সম্মানিত ও দামি লোকের বর্ণনা শুধু হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই ঘোষণা করেননি বরং কোরআনের বর্ণনায়ও সবচেয়ে দামি ও সম্মানিত ব্যক্তিত্বের কথা ওঠে এসেছে এভাবে-
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ ذَکَرٍ وَّ اُنۡثٰی وَ جَعَلۡنٰکُمۡ شُعُوۡبًا وَّ قَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوۡا ؕ اِنَّ اَکۡرَمَکُمۡ عِنۡدَ اللّٰهِ اَتۡقٰکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ
‘হে মানুষ! আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে। আর তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে; যাতে তোমরা একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে ব্যক্তিই বেশি মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়াবান (আল্লাহকে ভয় করে)। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১৩)
Advertisement
তাহলে সবচেয়ে দামি ব্যক্তি কে?
এ প্রসঙ্গে এক সাহাবার সঙ্গে কথাবার্তায় প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও জানা যায় কে সবচেয়ে দামি লোক। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে-
হজরত সাহল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তাঁর কাছে বসা লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন- এই যে লোকটি গেল; তার সম্পর্কে তোমার ধারণা কী?
সে (সাহাবা) বললো- ইনি তো সম্ভ্রান্ত লোকদের একজন। আল্লাহর শপথ! ইনি এমন যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি যে, সে যদি কোনো নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তখন তার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হবে। আর যদি সে কারও সম্পর্কে সুপারিশ করে তখন তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।
Advertisement
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (কিছুক্ষণ) নীরব থাকলেন।
এসময় অন্য এক ব্যক্তি ওই পথ অতিক্রম করলো। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (এ ব্যক্তি সম্পর্কেও তাকে) প্রশ্ন করলেন-
এ লোকটি সম্পর্কে তোমার ধারণা কী?
উত্তরে সে (সাহাবা) বললো- হে আল্লাহর রাসুল! তিনি তো দরিদ্র মুসলিমদের একজন। তিনি তো এরই উপযোগী যে, যদি তিনি কোনো নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তবে তার সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হবে না। আর যদি তিনি সুপারিশ করেন, তাও গ্রহণ করা হবে না। আর যদি তিনি কথা বলেন তা-ও শোনা হবে না।
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, (তুমি যার প্রশংসা করেছ) সারা পৃথিবীর মধ্যে তার মতো লোকে ভরপুর থাকলেও তাদের (সবার) তুলনায় এ (দ্বিতীয় দরিদ্র মুসলিম) লোকটি উত্তম (যার তুমি দুর্নাম করেছ)।’ (বুখারি, মুসলিম, ইবনে মাজাহ)
কোরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে একটি বিষয় সুস্পষ্ট যে, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি ধন-সম্পদের মালিক সন্মানিত বা দামি নন। ইসলাম ও মুসলমানদের কাছেও ধন-সম্পদশালীরা মর্যাদার অধিকারী নয়। বরং যে ঈমানের আলোকিত। ইসলামে বিশ্বাসী। আল্লাহকে বেশি ভয় করে। ইসলামের সঠিক পথের ওপর চলাফেরা করে। সে ধন-সম্পদের মালিক হোক কিংবা না হোক; ইসলামে মর্যাদাবান ও দামি ব্যক্তি সেই। এ ব্যক্তিই আখলাক-চরিত্রসহ সর্বদিক থেকে আল্লাহকে বেশি ভয় করে।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ধন-সম্পদের প্রতি অন্ধভাবে ছুটলে চলবে না। নিজের চরিত্রকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। আল্লাহর ভয় অর্জন করতে হবে। পরিশুদ্ধ চরিত্র ও আল্লাহর ভয়ের মাধ্যমে ধন-সম্পদ অর্জনের দিকে যেতে হবে। তাতে মিলবে রহমত ও বরকত। সে হবে মহান আল্লাহর কাছে সবচেয়ে দামি ও মর্যাদাবান।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে পরিশুদ্ধ চরিত্রের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। সব কাজে আল্লাহকে বেশিবেশি ভয় করার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর উপর যথাযথ আমল করার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের সম্মান ও মর্যাদাবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম