দেশজুড়ে

মানবপাচার রোধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজন

বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সদস্য অ্যাড. ফৌজিয়া করিম ফিরোজ দাবি করেছেন মানবপাচার রোধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল চালু করা প্রয়োজন।তিনি বলেছেন, যে হারে মানবপাচার হচ্ছে সে তুলনায় মামলা নগণ্য। তারপরও এই মামলাগুলো দিনের পর দিন ঝুলে থাকছে। বিচারকরা মানবপাচারের মামলায় বিশেষভাবে নজর না দেয়ায় অভিযুক্তরা সহসায় জামিন পেয়ে যান। এ পর্যন্ত মানবপাচারে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। তাই ‘বিশেষ ট্রাইব্যুনাল’ স্থাপন করে মানবপাচার মামলাগুলো পরিচালনা করা প্রয়োজন।রোববার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে কক্সবাজার জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘শিশু পাচার প্রতিরোধে প্রচলিত আইনের যথাযথ প্রয়োগ এবং সুরক্ষা কাঠামো কার্যকর করার দাবিতে’ বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।অ্যাড. ফৌজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, দেশের বেশকিছু জেলায় ইতিমধ্যেই সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারীদের বিচরণ গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কক্সবাজার এসব জেলার মধ্যে অন্যতম। কক্সবাজার থেকে মানবপাচারের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাগরপথে মানবপাচারের ক্ষেত্রে বহু রকম ভীতিকর ও করুণ কাহিনী জন্ম হয়েছে। মূলত বাংলাদেশের চার হাজার কিলোমিটারেরও বেশি উন্মুক্ত সীমান্ত পথ দিয়ে মানুষ বেচাকেনার ঘৃণ্যতম বাণিজ্যের প্রধান টার্গেট নারী ও শিশু।তিনি আরো বলেন, সাগর উপকূল সীমান্ত জেলা কক্সবাজার এখন মারাত্মক ক্রাইম জোনে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের যেসব দেশে রোহিঙ্গা প্রবেশ ঘটে সেখানে অন্যায় অপকর্মও বেশি হয়। তাই রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এই জেলার বেশিরভাগ অপরাধের সঙ্গে রোহিঙ্গারা জড়িত। প্রতিদিন হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে ইয়াবা পাচারের নতুন নতুন মামলা দেখা যায়। এসবের বেশির ভাগই কক্সবাজারের মানুষের।মানবপাচার মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় ধীরগতি একটি হতাশাজনক বিষয় উলে­খ করে তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি নারী ও শিশু পাচার ট্রাইব্যুনাল থাকলেও এসবের দৃশ্যমান কোনো কাজ নেই। এটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল হলেও পাচারকারীরা সহসায় জামিন পেয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে তিনি সহসায় জামিন পাওয়াকে আইনের মারপ্যাজ বলে উলে­খ করেন।তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি দীর্ঘদিন ধরে মানপাচার নিয়ে কাজ করছে। পাচারের শিকার নারী শিশু ও পুরুষদের সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসন করতে কাজ করে আসছে। ২০১৫ সালে সারাদেশে পাচারের শিকার ১৩২ জনকে পুনর্বাসন ও তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে কক্সবাজারের রয়েছে তিনজন।অ্যাড. ফৌজিয়া করিম বলেন, এক সময় মানবপাচার বলতে বুঝানো হতো যৌনাচারের জন্য বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের বিদেশে পাচার করা। কিন্তু এখন মানবপাচারের চিত্র ভিন্ন। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দরিদ্র পরিবারের বেকার যুবকদের প্রলোভন দেখিয়ে সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া পাচার করছে মানবপাচারকারীরা। এক পর্যায়ে জোরপূর্বক বিভিন্ন স্কুল পড়ুয়া শিশুদেরও পাচার করার মতোও নেক্কার জনক ঘটনা দেখা গেছে।তাই মানবপাচারের বিচার প্রক্রিয়া চালাতে হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে। যাতে প্রকৃত মানবপাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি নিশ্চিত হয়। এজন্য তিনি সরকারের কাছে কক্সবাজারে মানবপাচারের বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করার দাবি জানান। পাশাপাশি একটি মনিটরিং সেল করারও উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান।সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার আইন কলেজের শিক্ষক অ্যাড. প্রতিভা দাশ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের এপিপি অ্যাড. সাকি এ কাউছার, অ্যাড. রোজি, সিনিয়র লিগ্যাল অফিসার সাজ্জাতুন নেছা লিপি, কক্সবাজার অফিসের প্রকল্প পরিচালক এরশাদুজ্জামানসহ ভিকটিম, অভিভাবক, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।সায়ীদ আলমগীর/বিএ

Advertisement