প্রয়াত সংগীতশিল্পী সঞ্জীব চৌধুরী আর বাপ্পা মজুমদার মিলে গড়ে তুলেছিলেন গানের দল ‘দলছুট’। তাদের বেশ কিছু গান জনপ্রিয়তাও পেয়েছিল। ১৯৯৭ সালে দলছুট তাদের প্রথম অ্যালবাম আহ প্রকাশ করে। একটু দেরিতে হলেও অ্যালবামটি দেশজুড়েই ব্যাপক সাফল্য পায়। সেই ধারাবাহিকতায় আকাশ ছুঁয়ে চলা ভিন্ন ধর্মী গানের এই দলটি ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে হোচট খায়। যখন মৃত্যুর অমোঘ নিয়মে অকালেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান সঞ্জীব চৌধুরী। তার মৃত্যুর আগে আরো তিনটি অ্যালবাম প্রকাশ হয় দলছুটের। সঞ্জীব চৌধুরীর মৃত্যুর পর দলটির দায়িত্ব নেন বাপ্পা মজুমদার। পাশাপাশি নানাভোবে তিনিই প্রিয় সঙ্গীর জন্ম ও মৃত্যুদিনগুলো বৈচিত্রময় আয়োজনে পালন করে আসছেন। বাপ্পা ‘আয় আমন্ত্রণ’ নামে দলছুটের সর্বশেষ অ্যালবামটি প্রকাশ করেন ২০১০ সালে। সেটিও বেশ ভালো সাড়া পায়।কিন্তু বিগত পাঁচ বছর ধরে কোনো এক অজানা কারণে স্থগিত হয়ে আছে দলছুটের কার্যক্রম। এ বিষয়ে বারবার সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে বাপ্পা স্বভাবসুলভ হাসিতে বলেন, ‘দলছুট ছিলো দলছুট আছে। কিছুদিনের জন্য সাময়িকভাবে এর কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে।’ পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও এই সাময়িকতা ফুরায়নি পরী’খ্যাত শিল্পীর। এদিকে ‘বাপ্পা মজুমদার অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’ নামে নতুন ব্যান্ড দল গঠন করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বাপ্পা মজুমদার। সংগীতের নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে, নানা ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে দলছুটের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন তিনি। তবে নতুন ব্যান্ড গঠন করলেন কী করে? তবে কি বাপ্পা মজুমদার সঞ্জীব চৌধুরীর বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন? কেননা, এ কথাতো স্বীকৃত যে, আজকের বাপ্পা মজুমদারের যত নাম যশ সবই দলছুটের কল্যাণে, সঞ্জীব চৌধুরীর সঙ্গী হিসেবে। সঞ্জীবের মৃত্যুর পর বাপ্পা দলছুট আর সঞ্জীবের ব্র্যান্ড ব্যবহার করেই নিজেকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। তাই যেখানেই তিনি যান সেখানেই উঠে আসে এ দুটি। হোক সে গণমাধ্যমের সাক্ষাতকার, হোক সেটা টিভি সেলিব্রেটি শো কিংবা লাইভ কনসার্ট। তাই তিনি হয়তো খ্যাতির এই সময়টাতে এসে আর নিজের সংগীত সাধনার সঙ্গে দলছুট, বিশেষ করে সঞ্জীব চৌধুরীর নাম জড়াতে চাইছেন না। এ বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকেও অনেকে নানা মত প্রকাশ করেছেন। আর এটির শুরু হয়েছে বাপ্পার নতুন দল গঠনের পর থেকেই।এমনি সমালোচনার ক্ষণে নতুন ব্যান্ড ‘বাপ্পা মজুমদার অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’র প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম ‘বেনানন্দ’ প্রকাশ হলো সম্প্রতি। এ উপলক্ষে গেল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি রেঁস্তোরায় অ্যালবাম প্রকাশনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সেখানে বাপ্পা মজুমদারকে এই বিষয়গুলো অবহিত করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সবকিছুতেই সমালোচনা হওয়া ঠিক নয়। আমার কাছে দলছুট ও সঞ্জীব দা সমালোচনার বাইরের বিষয়। দলছুট আছে, দলছুট থাকবে। দলছুট আমার কাছে অনেক আবেগের জায়গা। সঞ্জীব দা’ও তাই। যারা আমার কাছের মানুষ তারা বিষয়টি জানেন। শুধু শুধু সমালোচনা করে লাভ নেই। আর নতুন এই দলটি করা হয়েছে ভিন্ন চিন্তা থেকে। ভিন্ন আঙ্গিকের গান করার ভাবনা থেকে।’তবে দলছুটের নতুন কোনো অ্যালবাম বা গান কবে নাগাদ পাওয়া যাবে জানতে চাইলে বাপ্পা মজুমদার নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘বাপ্পা মজুমদার অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’ ব্যান্ডের ম্যানেজার শাহান কবন্ধ জাগো নিউজকে বলেন, ‘দলছুট বন্ধ করা হয়নি। যে কোনো সময়ই হয় তো বাপ্পা দা দলছুটের গান নিয়ে হাজির হবেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘সবকিছু নিয়েই সমালোচনা করা আমাদের অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে। এসব নিয়ে না ভেবে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। আর সঞ্জীব দা’র সঙ্গে বাপ্পা দা’র সম্পর্ক বরাবরই সুন্দর এবং অমলিন।’প্রসঙ্গত, জিরোনা বাংলাদেশের ব্যানারে প্রকাশ হওয়া ‘বাপ্পা মজুমদার অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’ ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম ‘বেনানন্দ’ সাজানো হয়েছে ৮টি লোক গান দিয়ে। লালন, রাধারমন, হাছন রাজা, মন মোহন দত্তের গানগুলো নতুন সংগীতায়োজনে গেয়েছেন বাপ্পা।অ্যালবাম প্রসঙ্গে বাপ্পা বলেন, ‘ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম বলে এটি নিয়ে আমাদের অনেক ভাবতে হয়েছে। অ্যালবামের বিশেষত্ব হলো সবগুলো গানই ম্যানুয়ালি বাজানো। যার ফলে সাউন্ডেও নতুনত্ব এসেছে। আশাকরি সবার ভালো লাগবে।’বাপ্পা মজুমদার অ্যান্ড ফ্রেন্ডসের সদস্যরা হলেন- বাপ্পা মজুমদার (ভোকাল, গিটার ও দলনেতা), সোহেল আজিজ (কী-বোর্ড), জন শার্টন (বেজ), মামুস (গিটার), ডানো (ড্রামস) এবং শাহান কবন্ধ (ম্যানেজার)। এদিকে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আগামীতে নজরুল সংগীতের অ্যালবাম করার ঘোষণা দেন বাপ্পা মজুমদার।এলএ
Advertisement