দেশজুড়ে

শুধু খরচই বেড়েছে, সুবিধা বাড়েনি কুমিল্লা সিটিবাসীর

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পেরিয়ে ১১ বছরে পদার্পণ করেছে চলতি বছরের ১০ জুলাই। প্রতিষ্ঠার পর এই দীর্ঘ সময়ে সিটিতে বসবাসকারীদের ব্যয় বড়লেও বাড়েনি নাগরিক সুবিধা। বিশেষ করে নগরীর প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা এবং যানজট ১১ বছরেও সমাধান করতে পারেনি সিটি করপোরেশন। এনিয়ে নাগরীকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

Advertisement

সূত্র মতে, ২০১১ সালের ৬ জুলাই স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে কুমিল্লাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। তখন স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ধারা ৩ (৩) এবং উক্ত বিধিমালার বিধি ৬-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার কুমিল্লা পৌরসভা ও সদর দক্ষিণ পৌরসভার ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

১০ জুলাই বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন আইনের বিষয়টি প্রকাশিত হয়। এরপর নিয়োগ দেওয়া হয় প্রশাসক। এর আয়তন ৫৩ দশমিক ০৪ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর দুই দফায় নির্বাচন হয়েছে। দু’বারই বিএনপি থেকে মেয়র নির্বাচিত হন মনিরুল হক সাক্কু।

নগরীতে বসবাসকারী একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার আগ থেকেই কুমিল্লা নগরীতে জলাবদ্ধতা ও যানজট সমস্যা ছিল নম্বর ওয়ান তালিকায়। গত প্রায় ১১ বছরেও এ প্রধান দুইটি সমস্যার সমাধান করতে পারেননি টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা নগর পিতা মনিরুল হক সাক্কু।

Advertisement

তার দাবি অপরিকল্পিতভাবে নগরীতে সড়ক ও ড্রেনের সংস্কার কাজ করায় জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। আর ফুটপাত দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বসানোর কারণে নগরীতে যানজট নিত্যদিনের সঙ্গী। দীর্ঘ সময়েও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে কুমিল্লাকে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে কথা হয় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুমের সঙ্গে।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন যেন নামেই সিটি করপোরেশন। এক কথায় বলতে গেলে কুমিল্লা সিটি হয়েছে, কিন্তু নগরীকরা দৃশ্যমান কোনো সুবিধাই ভোগ করতে পারছেন না। সিটির ব্যবস্থাপনায় যারা রয়েছেন তাদের অপরিকল্পিত নগর ব্যবস্থাপনায় যত্রতত্র ঘর-বাড়ি নির্মাণ, সড়ক সংস্কার, লোক দেখানো উন্নয়ন আর ফুল বাগানে সীমাবদ্ধ রয়েছেন তারা। শিশুদের বাসযোগ্য শহর আর নাগরীক সুবিধার কথা যেন ভুলেই গেছেন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী বলেন, পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশন নামের পরিবর্তন ছাড়া কুমিল্লা সিটির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। যেভাবে নগরে জনসংখ্যা বেড়েছে, সে তুলনায় নাগরীক সেবা ও নগর উন্নয়ন অপ্রতুল।

মেয়র মনিরুল হক বলেন, নাগরীকদের প্রত্যাশা পূরণে আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি। নিজের পরিবারকে ভুলে তাদের সেবায় নিয়জিত রয়েছি। যতটুকু বরাদ্দ পাচ্ছি তা দিয়ে নগরের রাস্তাঘাট, খাল খনন ও সৌন্দর্য বর্ধন করেছি। নগর মাতৃসদন কেন্দ্র চালু করেছি। সরকারদলীয় মন্ত্রী ও এমপিদের পরামর্শ নিয়ে নগরের উন্নয়ন করে যাচ্ছি।

Advertisement

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে নাগরিক সমাজের ব্যানারে একবার এবং ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ বিএনপির মনোনয়নে মেয়র নির্বাচিত হন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মনিরুল হক।

জাহিদ পাটোয়ারী/এফএ/এএসএম