সালতামামি

অশান্তিতে শুরু সফলতায় শেষ

হৃদয়বিদারক, নিষ্ঠুর ও ভয়ংকর সব ঘটনায় পূর্ণ ছিল বিদায়ী বছর। বিশ্বজুড়ে অশান্তি ও নাটকীয়তায় দেখা গেছে ইতিহাসের ভয়াবহ মানবিকতা। জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর হাতে শিরশ্ছেদ, বিমান বিধ্বস্ত, প্রাকৃতিক দুর্যোগে পূর্ণ ছিল বিদায়ের অপেক্ষায় থাকা ২০১৫ সাল।তবে মুদ্রার উল্টো পিঠে ছিল সফল ও আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু ঘটনা। জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য বছরজুড়ে নানা ঘটনার সফলতা ও ব্যর্থতা তুলে ধরা হলো।আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ :চলতি বছরে ইরাক এবং সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিদের অবস্থানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট বিমান হামলা শুরু করে। তবে এর ফলাফল নিয়ে এখনো আশাবাদী হওয়ার মতো কোনো অগ্রগতি নেই।  যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছিলেন, ইরাকে ২০১৪ সালে আইএসের নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্তত ৪০ শতাংশ এলাকা উদ্ধার করেছে মার্কিন জোট। তবে ইরাকের গুরুত্বপূর্ণ রামাদি শহরের নিয়ন্ত্রণ এখনো আইএসের হাতে রয়েছে। এদিকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে সিরিয়ায় আইএস ও অন্যান্য বিদ্রোহীদের অবস্থানে রাশিয়ার হামলা নিয়ে রয়েছে পাল্টা অভিযোগ। ওয়াশিংটন বলছে,  আইএসের অবস্থানে নয়, মস্কো হামলা চালাচ্ছে  বাশারবিরোধী বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে। রাশিয়া এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সিরিয়ায় গত পাঁচ বছরের গৃহযুদ্ধে প্রায় আড়াই লাখ মানুষের প্রাণহানি ছাড়াও দেশটির ৪০ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়েছে।ঋণসংকটে জর্জরিত গ্রিস: গ্রিসের ঋণসংকট নতুন কিছু নয়। ২০০৯ সালে এ সংকটের শুরু হলেও চলতি বছরের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক বেল আউটের আগে আরো বেশ কিছু সংকটের মুখোমুখি হয় দেশটি। কয়েক বিলিয়ন নতুন ঋণ সহায়তা নিয়েছে গ্রিস। তবে বেল আউট পেতে বেশ কয়েকটি শর্ত মেনে নিতে হয়েছে। অবসর ভাতা, বিদ্যুৎসহ আরো কিছু সেক্টরে কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে গ্রিস। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইতিহাসে গ্রিসের ঋণসংকট ছিল বছরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। ব্রাসেলসে দীর্ঘ ম্যারাথন আলোচনার পর বিষয়টি নিয়ে সমাধানে পৌঁছায় ইইউ। জঙ্গি হামলায় বিপর্যস্ত প্যারিস:ফ্রান্সের নাগরিকদের জন্য চলতি বছরকে অভিশাপ হিসেবে বললেও মন্দ হবে না। জানুয়ারিতে প্যারিসে ব্যাঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন শার্লি হেবদো অফিসে হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। এতে অন্তত ১৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। গত ১৩ নভেম্বর প্যারিসে স্টেডিয়াম, রেস্তোরাঁ, কনসার্ট হলসহ ছয়টি স্থানে একযোগে হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। হামলায় ১৩০ জন নিহত হয়। পরে হামলায় জড়িত সন্দেহে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। এদিকে, ইউরোপে নতুন বছরের আগে আবার জঙ্গি হামলার আশংকায় সতর্কতা জারি করেছে অস্ট্রিয়া। এছাড়া ইইউর দেশগুলোর রাজধানীতে হামলার আশংকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইবোলায় সফলতা:২০১৪ সালে লাইবেরিয়া, গায়না এবং সিয়েরালিওনে মরণঘাতী ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১১ হাজার তিনশ জনের প্রাণহানি ঘটে। তবে এ বছরে আন্তর্জাতিক সহায়তায় ইবোলা প্রতিরোধে ব্যাপক সফলতা দেখিয়েছে এ তিন দেশ। লাইবেরিয়ায় এ ভাইরাসের বিস্তার ছিল সবচেয়ে বেশি। লাইবেরিয়ায় ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য কর্মীদের সহায়তা এবং প্রশিক্ষণের জন্য তিন হাজার সেনা মোতায়েন করে যুক্তরাষ্ট্র। কিছুদিন আগে এসব মার্কিন সেনাসদস্যকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।জলবায়ু চুক্তি :প্যারিসে জাতিসংঘের ২১তম জলবায়ু সম্মেলন শুরু হয় গত ৩০ নভেম্বর। বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে কার্বন নিঃসরণ ও গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে দুই সপ্তাহের আলোচনার পর ঐতিহাসিক চুক্তিতে সম্মত হয় বিশ্বের ১৯৬টি দেশের প্রতিনিধিরা। বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২১০০ সালের মধ্যে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে এ চুক্তিতে পৌঁছান তারা। প্যারিসে এমন এক সময় এ চুক্তি হয় যখন বিজ্ঞানীরা ১৮৮০ সালের পর সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হিসেবে ২০১৫ সালকে চিহ্ণিত করেছেন। কিউবা-মার্কিন বৈরিতার অবসান:২০১৪ শেষের দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউলি ক্যাস্ত্রো দীর্ঘদিনের বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে নতুন করে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। ২০১৫ সালে দেশ দুটির মাঝে দীর্ঘদিনের জমে থাকা বরফ গলতে শুরু করে। ওয়াশিংটন এবং হাভানায়  দূতাবাস চালু করে দুই দেশ। একই সঙ্গে দেশ দুটি  বিমান ও ফোন সার্ভিস চালু করে।   ইরানের পরমাণু চুক্তি :চলতি বছরের জুলাইয়ে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরানের সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তিতে পৌঁছায় ছয় বিশ্বশক্তি। চুক্তিতে ইরানের পরমাণু তৎপরতা কমিয়ে আনার পাশাপাশি ইরানের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ধীরে ধীরে শিথিল করার সিদ্ধান্ত হয়। ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে করা ইরানের এ চুক্তি দেশটির পার্লামেন্টেও অনুমোদন পায়। সে সময় ইরান জানায়, শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরমাণুর ব্যবহার করাই তাদের উদ্দেশ্য।এসআইএস/এএইচ/আরআইপি

Advertisement