জাতীয়

দুই মন্ত্রীর সমালোচনায় রানা দাশগুপ্ত

সম্প্রতি দুর্গাপূজা ঘিরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক হামলার সময় সরকারের একাধিক মন্ত্রীর ভূমিকার সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেছেন, সাম্প্রদায়িক হামলা চলাকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ভূমিকা আমাদের ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে।

Advertisement

শনিবার (৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রানা দাশগুপ্ত এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি আমাদের ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করেছে। সামগ্রিক ঘটনাকে লঘু করে দেখায় তার প্রবণতা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক মহলে ক্ষুণ্ন করেছে। তিনি বিবৃতিতে কুমিল্লার পূজামণ্ডপে হনুমানের মূর্তিতে পবিত্র কোরআন শরিফ রাখা ব্যক্তিকে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন ও ভবঘুরে’ বলে মূল ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। তদন্তকালীন সিআইডির ভাষায় ‘সে ভবঘুরেও নয় মানসিক ভারসাম্যহীনও নয়, সে চতুর’। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ দায়িত্ব ও কাণ্ডজ্ঞানহীন বিবৃতির জন্য আজকের এ সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা তাকে ধিক্কার জানাই।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, গত ২ নভেম্বর ভার্চুয়াল ভাষণে সত্য কথা তুলে ধরার জন্য আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা মনে করি, ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের রক্ষায় শুধু কথায় নয়, কাজের মধ্য দিয়ে তা দৃশ্যমান করা আজ যথার্থ অর্থেই প্রয়োজন।

Advertisement

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে ঘোষিত সরকারি দলের নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশনের বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভূমি কমিশন গঠনের যে অঙ্গীকার করা হয়েছিল, অনতিবিলম্বে তা বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী তা কোনোভাবেই মেনে নেবে না।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সমালোচনা করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, আইনমন্ত্রীর ‘ইউটার্ন’ আমাদের হতবাক ও বিস্মিত করেছে। এরই মধ্যে এক সেমিনারে তিনি বলেছিলেন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে এবং দ্রুততম সময়ে তা পার্লামেন্টে উত্থাপন হবে। এরপর চারদিন যেতে না যেতেই বললেন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন নয়, তিনি সাক্ষী সুরক্ষা আইনের কথা বলেছেন।

লিখিত বক্তব্যে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের এ নেতা আরও বলেন, বিগত দিনগুলোতে আমাদের দেশের কোনো রাজনৈতিক দল ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর নির্বিচারে সাম্প্রদায়িক হামলার বিষয়টি কখনোই স্বীকার করতে চাননি। অনেকেই এ ঘটনাগুলোকে অতীতেও ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এবারও দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো সাম্প্রদায়িক হামলা নিয়ে দোষারোপের রাজনীতি করছেন এবং এর মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে স্বীকার করছেন, সাম্প্রদায়িক হামলা অতীতেও ছিল, বর্তমানেও আছে এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতির কারণে তা চলছে।

রানা দাশগুপ্ত বলেন, এরই মধ্যে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিষয়ে বেশ কয়েকটি মামলা হয়েছে। আমরা সব ক’টির নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত চাই। দলমত নির্বিশেষে যারাই এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে গ্রেফতার ও বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং দ্রুত বিচার আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। হাজার হাজার মানুষ গ্রেফতার করলেই সুবিচার আসে না। নিরপরাধ কেউ যেন গ্রেফতার ও হয়রানির শিকার না হয়, এজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাই।

Advertisement

তিনি জানান, সম্প্রতি সারাদেশে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, এর প্রতিবাদে আগামী ১২ নভেম্বর বিকেল ৪টায় সারাদেশে ধিক্কার মিছিলের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। ওইদিন রাজধানীর শাহবাগ চত্বর এবং চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরেও এ কর্মসূচি পালন করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি ঊষাতন তালুকদার, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক প্রমুখ।

এএএম/এমকেআর/এইচএ/এএসএম