জাগো জবস

প্রথমে ব্যর্থ হলেও থেমে যাননি জান্নাত

বলা হয়ে থাকে মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। স্বপ্ন শুধু দেখলেই হয় না, সেই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য থাকতে হয় অসীম সাহস। কিন্তু পরিস্থিতি অনেক সময় স্বপ্নগুলোকে ডানা মেলতে দেয় না। স্রোতের বিপরীতে গিয়ে কিছু করার সাহস খুব কম মানুষের থাকে। যেমন ছিল জান্নাতুল ফেরদৌস মীমের!

Advertisement

জান্নাত বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে। তিনি চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও পরে চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশোনা করেছেন। পরে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ বিভাগে। চাইলেই পড়াশোনা শেষ করার পর চাকরি করে নিশ্চিত জীবন বেছে নিতে পারতেন। শুরুটা হয়েছিল তেমনই। ঢাকার একটি স্কুলে শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। পাশাপাশি একবছর বয়সী শিশু, সংসার আর পড়াশোনার চাপও ছিল। এর মাঝেও তিনি স্বপ্নপূরণের রাস্তা খুঁজতে থাকেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ভাইভায় যখন প্রশ্ন করা হতো, ‘আগামী দশ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?’ উত্তরে তিনি প্রতিবার বলতেন, ‘এমন কিছু করতে চাই যেন আরও দশজন নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়ে যায়।’ তখন থেকেই আসলে তার মনে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল। একসময় সাহস করে চাকরি ছেড়ে দেন।

মাত্র ১৫ হাজার টাকা পুঁজিতে বিউটি প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ শুরু করেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে প্রথম শিপমেন্টের ৮০% পণ্য ড্যামেজড হয়ে যায়। শুরু হয় বিভিন্ন মানুষের কথা। তারা বোঝাতে চাইলেন, চাকরি ছেড়ে অনিশ্চিত জীবিকা বেছে নিয়ে কত বড় ভুল করেছেন তিনি। এতেও দমে যাননি জান্নাত। প্রতিদিন চেষ্টা করেছেন নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে। চেষ্টা বৃথা যায়নি। তার প্রতিষ্ঠিত ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনেক মানুষের কাছে বিউটি প্রোডাক্টগুলো পৌঁছে দিতে পেরেছেন।

Advertisement

নিজস্ব প্রোডাক্টের পাশাপাশি ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, জাপান থেকেও ভালো মানের প্রোডাক্ট আসে। এরআগে বিউটিবাজ ফেসবুক ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সেবা দিয়ে এসেছেন। গ্রাহকদের আস্থাও অর্জন করেছেন। তার ব্যবসাটি এখন বেশ বড় পরিসরে হতে যাচ্ছে। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী প্রথম আউটলেট করতে যাচ্ছেন রাজধানীর উত্তরায়। আগামী ১২ নভেম্বর এটি উদ্বোধন হতে পারে।

তার উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা কঠিন ছিল, তবে শিখেছেন অনেক কিছু। পরিবারকে পাশে পেয়েছেন সব সময়। জান্নাত বলেন, ‘আমরা পারি নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যেতে। কিন্তু তারপরও পরিবারকে পাশে না পেলে এ সমাজে নারীর পথচলা খুবই কঠিন। আমার পড়া, চাকরি, বাচ্চার দেখাশোনা সবকিছুর মধ্যেও ব্যবসায় সাপোর্ট পেয়েছি স্বামী গাজী হুমায়ুন কবিরের।’

তিনি ব্যবসায় গুরু মানেন শ্বশুর আবুল হাশেমকে। যিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এক্সপোর্ট বিষয়ক খাতে স্বর্ণপদক পেয়েছেন। তার দিক-নির্দেশনায়ই এতদূর আসা। জান্নাতের স্বপ্ন, বাংলাদেশেও একদিন আন্তর্জাতিকমানের প্রসাধনী দ্রব্য উৎপাদন সম্ভব হবে। সরকারি সাহায্য পেলে স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার, মেকআপ ইত্যাদি দেশীয় কাঁচামাল থেকে প্রস্তুত করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

জান্নাত মনে করেন, একদিন দেশের বাইরের বিউটিশপে সাজানো থাকবে প্রসাধনীপণ্য, যার পেছনে লেখা থাকবে মেড ইন বাংলাদেশ। আমরাও আশা রাখি, জান্নাত এগিয়ে যাবেন তার স্বপ্নপূরণের পথে। গ্রাহকদের হাতে তুলে দেবেন মানসম্মত পণ্য।

Advertisement

এসইউ/এমএস