বিনোদন

দাম্পত্যের ৩২ বছরে কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা

বিটিভির ‌‘অন্তরঙ্গ’ অনুষ্ঠানে ‘এলোমেলো চুল আর ললাটের ভাঁজ’ গান গাওয়ার মাধ্যমে ১৯৮২ সালে সংগীতাঙ্গনে প্রবশে শ্রোতানন্দিত কণ্ঠশিল্পী রোমানা মোর্শেদ কনকচাঁপার। এর চার বছর আগে নতুন কুঁড়ির সংগীত পরিচালনার মাধ্যমে ১৯৭৮ সালে দেশীয় সংগীতাঙ্গনে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন মঈনুল ইসলাম খান। দুজনের প্রথম পরিচয়টা ’৮২ সালের দিকেই। কনকচাঁপার প্রথম গানটির সুর করেছিলেন মঈনুল ইসলাম খান। সেখান থেকেই ভালো লাগা ও ১৯৮৪ সালের ৬ ডিসেম্বর, বিয়ের পিঁড়িতে বসা। দেখতে দেখতে সুখে-আনন্দে ৩১টি বসন্ত পার করে দিলেন তারা। এবারে ৩২ বছরে পা রাখলেন কনকচাঁপা-মঈনুল দম্পতি। অভিনন্দন সংগীতের দুই গুণী শিল্পীকে। নিজের দাম্পত্যের এই শুভলগ্নের আনন্দ সবার সাথে ভাগ করে নিতে গেল শনিবার দিবাগত রাতে কনকচাঁপা নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্বামীর সাথে হাস্যোজ্জ্বল ছবি দিয়ে সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘বত্রিশটা বছর কাটিয়ে দিলাম... আসলেই অনেক মায়ায় পড়ে গেছি... একমাত্র আম্মাই (আমার দ্বিতীয় মা..শাশুড়ি মা) জানেন তোমার কত ভাল গুণ আছে... তিনি তো নেই... এখন একমাত্র আমি একজন মানুষ যে কিনা তোমার বিরল কিছু গুণের কথা জানি। আলহামদুলিল্লাহ!’শিল্পী আরো লিখেছেন, ‘নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে আজো তোমায় আমি অনেক ভালবাসি এবং তার চেয়েও আরো কিছু বেশি অনুভব তোমায় ঘিরে... একদিন ফেসবুকে অভ্যস্ত হয়ে তুমি এই স্ট্যাটাস দেখবে ইনশাআল্লাহ!’কনকচাঁপার দীর্ঘ সংগীত ক্যারিয়ারে বিভিন্ন সময় তিনি স্বামীর সুরায়োজনে বেশ কিছু গান করেছেন। স্বামীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে বেশ কয়েক মাস আগে শিল্পী এক গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, ‘আমার জীবনে অনেক চমত্কার কিছু গানের পেছনে তাঁর অবদান অনেক বেশি। তাঁর গান গাওয়ার সময় আমাকে বেশ সতর্ক থাকতে হয়। স্বাভাবিক চোখে তাঁর গানগুলো সহজ মনে হলেও গাওয়াটা অনেক কঠিন। আর গাওয়ার পর তাঁর গানগুলো মাস্টারপিস হয়ে ওঠে। আমি খুব ভাগ্যবান যে স্বামী হিসেবে মঈনুল ইসলাম খানের মতো একজন মানুষকে পাশে পেয়েছি।’এক পলকে কনকচাঁপা১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৯ সালে জন্ম রোমানা মোর্শেদ কনকচাঁপার। বাবা আজিজুল হক মোর্শেদের কাছেই প্রথম সংগীতের হাতেখড়ি। তার পর বাংলা সংগীতের মহারথী প্রয়াত সংগীতশিল্পী বশীর আহমেদ এবং স্বনামধন্য সুরকার (স্বামী) মইনুল ইসলাম খানের কাছে সংগীতে তালিম নিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করেন এই সুরের পথিক। চলচ্চিত্র, আধুনিক গান, নজরুলসংগীত, লোকগীতিসহ প্রায় সব ধরনের গানে তিনি সমান পারদর্শী। একজন গায়িকা নয়, বরং নিজেকে আপাদমস্তক ‘কণ্ঠশ্রমিক’ মনে করা এই গুণী শিল্পীর অনেক জনপ্রিয় গান সমৃদ্ধ করেছে বাংলা গানের ভান্ডারকে। বিশেষ করে চলচ্চিত্রের গানে তার কণ্ঠের অবদান অনস্বীকার্য। এ পর্যন্ত তিনি চলচ্চিত্রের তিন হাজারেরও বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। কনকচাঁপার জনপ্রিয় অসংখ্য গানের মধ্যে যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে জীবনে অমর হয়ে রয়, তুমি আমার এমনই একজন, যারে একজনমে ভালোবেসে ভরবে নারে মন, একদিন তোমাকে না দেখলে বড় কষ্ট হয়, কত মানুষ ভবের বাজারে, কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল, চোখের ভেতর স্বপ্ন থাকে, স্বপ্ন বাঁচায় জীবনটাকে, আমার প্রেমের তাজমহল, অনন্ত প্রেম, তুমি দাও আমাকে, অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন, যে দেশেতে শহীদ মিনার, বাজারে যাচাই করে দেখিনি তো দাম, তালপাতার এক বাঁশি, তোমাকে ভালোবেসে দিতে পারি প্রাণ, তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাই, ভাল আছি ভাল থেক, তোমায় দেখলে মনে হয়, আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে ইত্যাদি।দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি নন্দিত হয়েছেন তিন প্রজন্মের কোটি ভক্তের ভালোবাসায়। আর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন চার বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়াও বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার, দর্শক ফোরাম পুরস্কার ১৯৯৮ এবং ১৯৯৯, প্রযোজক সমিতি পুরস্কার ১৯৯৫, অনন্যা শীর্ষ দশ ইত্যাদি সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।সুখী দাম্পত্য জীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী কনকচাঁপা। বড় ছেলের নাম ফয়জুল ইসলাম খান মাশুক। তিনি পড়াশোনা করছেন একাউন্টিং নিয়ে। মা ও বাবার মতো তিনিও গান পাগল মানুষ। নিয়মিতই গান নিয়ে বসেন। নিজের একটি ব্যান্ডও রয়েছে ‘দি ম্যানেজার’ নামে।ছোট মেয়ে ফারিয়া ইসলাম খান। তিনিও পড়ছেন। তবে ব্যক্তিজীবনে ফারিয়াও এক কন্যার জননী। তার স্বামীর নাম আবদুল্লাহ মোহাম্মদ ইয়াহইয়া। জামাতাকে অবশ্য নিজের পুত্র বলেই মনে করেন কনকচাঁপা। আর তিন বছরের একমাত্র নাতনী জুওয়াইরিয়া ইসলামকে ভাবেন পৃথিবীকে নিজের স্বর্গ! নাতনী কাছে থাকলে অবসর সময়টা তার সাথেই কেটে যায় হেসে খেলে।এর বাইরে তার সময় কাটে নিজের বারান্দায়। সেখানে বাগান আছে। নানা রঙের গাছদের সাথে কথা বলেন নিভৃতে। খুঁজে বেড়ান চিত্রের নানা মাধ্যম আর রঙের ব্যঞ্জনা। শিল্পী যে শুধু গানের নন, তিনি ছবিও আঁকেন। জাগো নিউজের সাথে আলাপকালে জানালেন, শিগগিরই তার আঁকা ছবি নিয়ে একটি একক প্রদর্শনী হবে। পাশাপাশি লেখক হিসেবেও কনকচাঁপার সুখ্যাতি রয়েছে। অমর একুশে বইমেলায় বইও প্রকাশিত হয়েছে কনকচাঁপার। বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত কলামও লেখেন তিনি।এলএ

Advertisement