খেলাধুলা

এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হৃদয়ভাঙা ম্যাচগুলো 

২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যেন ‘লজ্জার রেকর্ড’ করতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কখনো ‘এক অঙ্কের রানে পরাজয়’, কখনোবা ‘১০০ এর নিচে অলআউট’- এগুলোই যেন ছিল এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের নিয়তি। নিজেরাই যেন নিজেদের রেকর্ড ভাঙার মিশনে ব্যস্ত ছিলেন মাহমুদউল্লাহ-সাকিব-মুশফিকরা।

Advertisement

চলুন দেখে নেওয়া যাক সেই ‘হৃদয়বিদারক’ ঘটনাগুলো

১। ১৭ অক্টোবর, ২০২১; ভেন্যু: আল আমেরাত ক্রিকেট অ্যাকাডেমি, ওমান

স্কটল্যান্ড: ১৪০/৯ (২০), বাংলাদেশ: ১৩৪/৭ (২০); 

Advertisement

ফল: স্কটল্যান্ড ৬ রানে জয়ী। 

ম্যান অব দ্য ম্যাচ:  ক্রিস গ্রিভস (২৮ বলে ৪৫, ১৯ রানে ২ উইকেট) 

বাংলাদেশের টুর্নামেন্টটা শুরুই হয়েছিল হোঁচট খেয়ে। ওমানের আল-আমেরাত অ্যাকাডেমিতে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। 

সাকিব আল হাসান (৪-০-১৭-২) ও শেখ মেহেদির (৪-০-১৯-৩) ঘূর্ণিতে দম বন্ধ হওয়া শুরু করে স্কটিশদের ‘দমবন্ধ’ হওয়া শুরু করে। এমন মুহূর্তে স্কটিশদের ‘অক্সিজেন’ হিসেবে কাজ করেন ক্রিস গ্রিভস।

Advertisement

৪ চার ও ২ ছক্কায় গ্রিভসের ২৮ বলে ৪৫ রানের ইনিংসে স্কটিশরা করে ১৪০ রান। ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও দুর্দান্ত ছিলেন গ্রিভস (৩-০-১৯-২)। যেখানে স্কটিশ অলরাউন্ডারের উইকেট দুটো ছিল সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের।

ইনিংসের শেষ ওভারে মাহেদি ছক্কা-চার হাঁকালেও তা শুধু ব্যবধানই কমাতে পেরেছে। বাংলাদেশ হেরে যায় ৬ রানে।   

২। ২৯ অক্টোবর, ২০২১; ভেন্যু: শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সংযুক্ত আরব আমিরাত

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৪৩/৭ (২০), বাংলাদেশ: ১৩৯/৭ (২০)

ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ রানে জয়ী। 

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নিকোলাস পুরান (২২ বলে ৪০)

স্কটল্যান্ড ম্যাচের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশ ঘটিয়ে

ছিল সুপার টুয়েলভে। এবারের ঘটনা ঘটেছিল ওমানের প্রতিবেশি দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে।

শারজায় সুপার টুয়েলভে ‘বাঁচা-মরার ম্যাচে’ টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। একদিকে বোলাররা যেমন উইন্ডিজ ব্যাটারদের টুঁটি চেপে ধরেছিলেন, অন্যদিকে একের পর এক ক্যাচ মিসে তা ‘পরিশোধ’ করে দিচ্ছিলেন বাংলাদেশি ফিল্ডাররা। 

নিকোলাস পুরান (২২ বলে ৪০) ও জেসন হোল্ডারের (৫ বোলে ১৫*)  ক্যামিও ইনিংসে উইন্ডিজ সংগ্রহ করে ৭ উইকেটে ১৪৩ রান। ১৪৪ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাচ্ছিল ঠিকই। তবে আশা জাগাচ্ছিলেন লিটন দাস (৪৩ বলে ৪৪) ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (২৪ বলে ৩১)। ৭ বলে ১৪ রান, এমন মুহূর্তে ডোয়াইন ব্রাভোকে লং-অন দিয়ে ছক্কা মেরে নিজের ফিফটি ও দলকে আরও একটু এগিয়ে নিতে গিয়েছিলেন। 

তবে বাধ সাধলেন ৬ ফুট উচ্চতার হোল্ডার। ইনিংসের শেষ বলে আন্দ্রে রাসেলকে চার মেরে উইনিং রান নিতে গিয়েছিলেন রিয়াদ। তবে ঠিকঠাক সংযোগ না হওয়ায় আরও একবার ‘তীরে এসে তরী ডোবার’ আক্ষেপে পোড়ে বাংলাদেশ।   

৩। ২ নভেম্বর, ২০২১; ভেন্যু: শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত

বাংলাদেশ: ৮৪/১০ (১৮.২), দক্ষিণ আফ্রিকা: ৮৬/৪ (১৩.৩)

ফল:  দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেটে জয়ী। 

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: কাগিসো রাবাদা (২০ রানে ৩ উইকেট)

আগের দুবারের রেকর্ডটি থেকে এই রেকর্ডটি আলাদা, আর ভেন্যুও আলাদা। এবারের ‘লজ্জার রেকর্ডটি’ ছিল ১০০ এর নিচে অলআউট হওয়ার।  

আবুধাবিতে এবার দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়েছিল বাংলাদেশ। দুই প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদা (৪-০-২০-৩) ও এনরিখ নরকিয়ার  (৩.২-০-৮-৩) দুর্দান্ত বোলিংয়ে ঠকঠক করে হাঁটু কাঁপতে থাকে বাংলাদেশি ব্যাটারদের। ১০ বল হাতে রেখে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ৮৪ রানে।

৮৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩৩ রানেই ৩ উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা। যেখানে দুটো উইকেট নিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ (৪-০-১৮-২)। 

তাতে শুধু প্রোটিয়াদের জয়ই বিলম্বিত হয়েছে। ১৪ তম ওভারের তৃতীয় বলে শেখ মাহেদিকে মিড উইকেট দিয়ে চার মেরে ৬ উইকেটের বিশাল জয় এনে দেন ডেভিড মিলার। 

৪। ৪ নভেম্বর, ২০২১; ভেন্যু: দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সংযুক্ত আরব আমিরাত

বাংলাদেশ: ৭৩/১০ (১৫), অস্ট্রেলিয়া: ৭৮/২ (৬.২)

ফল:  অস্ট্রেলিয়া উইকেটে জয়ী। 

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: অ্যাডাম জাম্পা (১৯ রানে ৫ উইকেট)

‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার’- এটা ভেবে বাংলাদেশি ভক্তরা অন্তত একটি জয়ের প্রত্যাশা করেছিল। তবে রিয়াদদের কাছে এই প্রত্যাশাটুকু যেন ‘বোঝা’ হয়ে গিয়েছিল। এবার যেন তারা দু’দিন আগের রেকর্ডকেও ‘চ্যালেঞ্জ’ জানানোর লক্ষ্যে নেমেছিলেন।   

 দুবাইয়ে এবারও প্রতিপক্ষের থেকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়েছিল বাংলাদেশ। অজি বোলাররা যেন দু’দিন আগের ‘প্রোটিয়া থিওরি’ মেনে বোলিং করছিলেন। 

পার্থক্য শুধু পেসারের বদলে বাংলাদেশ এবার ‘ঘায়েল’ হয়েছিল স্পিনারদের হাতে। ফাইফার নিয়ে অ্যাডাম জাম্পা (৪-০-১৯-৫) যেন তিন মাস আগের ‘মিরপুর গণহারের’ প্রতিশোধ নিলেন।   

৭৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও অ্যারন ফিঞ্চ শুরু থেকেই মারমুখী ছিলেন। বিশেষ করে, অধিনায়ক ফিঞ্চ (২০ বলে ৪০) চেয়েছিলেন ম্যান্ডেটরি পাওয়ারপ্লের মধ্যে খেলা শেষ করে আসতে । 

অজিদের ইনিংসে যা একটু বিলম্ব ঘটিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ ও শরীফুল ইসলাম। তাসকিনকেই ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মেরে অজিদের সেমিফাইনালের আশা এখনো বাঁচিয়ে রাখলেন মিচেল মার্শ।

আইএইচএস/