টিকা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিশ্বের মধ্যে ১৫তম স্থানে চলে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে স্বাস্থ্য বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসচিব হিসেবে যোগদানের পর দেশে এক ডোজ ভ্যাকসিনও ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বল্প সময়ের মধ্যে চীন, রাশিয়া, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি করেছি। এসব দেশ থেকে টিকা এনে মানুষের মাঝে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দিচ্ছি। প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই কোটি ডোজ টিকা আমরা পাচ্ছি। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় নিয়ে এসেছি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে অর্ধেকের বেশি মানুষ টিকার আওতায় আসবে। পর্যায়ক্রমে সবাই ডাবল ডোজ টিকার আওতায় আসবে এবং এ কার্যক্রমে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে ১৫তম অবস্থানে চলে আসবে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কারণে করোনার টিকা নিয়ে এখন আর কোনো সমস্যা নেই। দেশের ৭ কোটি ১৩ লাখ মানুষকে টিকা প্রদান করা হয়েছে। মজুদ রয়েছে আরও দুই কোটি। কয়েকদিনের মধ্যে আসবে আরও ৩ কোটি ডোজ টিকা। প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে সারাদেশে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ৮০ লাখ ডোজ টিকা একদিনে প্রয়োগ করা হয়েছে।
Advertisement
স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন এ কর্মকর্তা বলেন, করোনাভাইরাসের মতো এত বড় মহামারি বিগত ১০০ বছরে কেউ দেখেনি। করোনা কাউকেই করুণা করে না। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অনেকে আমাদের কাছ থেকে চিরতরে বিদায় নিয়েছে। বৈশ্বিক অতিমারির এ সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের ১৮ কোটি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে ডাক্তার-নার্স, প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সকলে সমন্বিতভাবে কাজ করার কারণে আমরা করোনা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি।
চিকিৎসক-নার্স সংকটের কথা তুলে ধরে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, করোনালে বিশেষ ব্যবস্থায় ৪ হাজার চিকিৎসক ও ১৪ হাজার মিডওয়াইফারি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেখানে চিকিৎসক-নার্স সংকট রয়েছে, সেখানে অল্পদিনের মধ্যে পদায়ন করে সংকট নিরসন করা হবে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ১২ বছর সময়কালে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের স্বাস্থ্য সেবায় ৫ লাখ ডাক্তার-নার্স-কর্মচারী সম্পৃক্ত হলে, এদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য আর কাউকে বিদেশ যেতে হবে না। বিদেশিরা উল্টো আমাদের দেশে চিকিৎসা নিতে আসবে। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা উন্নত করতে পারলে হাজার হাজার ডলার দেশের বাইরে যাবে না। এ ব্যাপারে সরকার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসাসেবা বিষয়ে লোকমান মিয়া বলেন, দেশে বর্তমানে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এসব কমিউনিটি ক্লিনিকে ৩০ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে ৮০ শতাংশ রোগ ভালো হতে পারে। কমিউনিটি ক্লিনিকে ডেলিভারিসহ মা-শিশুর আধুনিক চিকিৎসা চলমান রয়েছে। আমাদের সবার শেকড় গ্রামে। তাই উপজেলা ও কমিউনিটি ক্লিনিকে পদায়ন হলে মন খারাপ করা যাবে না। প্রত্যেক চিকিৎসক-নার্সকে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করে সকল মানুষের দোরগোড়ায় চিকিৎসা-সেবা পৌঁছে দিতে হবে। চিকিৎসকরা একটু আন্তরিক হলে এর চেয়ে দ্বিগুণ সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব।
উপজেলা ও কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত চিকিৎসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, খাবারের ব্যাপারে আপনারা সবাইকে সচেতন করবেন। কারণ খাবারের কারণেই অনেক রোগ হয়। স্থানীয় চিকিৎসকদের কথা সবাই শোনে। এ কারণে আপনারা এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারবেন।
Advertisement
স্বাস্থ্য বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, দেশে আমরা অক্সিজেনারেটর আমদানি করছি। এই মেশিন বাতাস থেকে প্রতি মিনিটে ৫০০ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। একটি মেশিন ১০০ জনকে অক্সিজেন দিতে সক্ষম। এরই মধ্যে আমরা তিনটি অক্সিজেনারেটর আমদানি করেছি। যেগুলো চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও গোপালগঞ্জে ব্যবহৃত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীরের সভাপতিত্বে ও কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মীর মুবারক হোসাইনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন- চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইকবাল হোসেন ও নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সানা শামীমুর রহমান।
এছাড়া সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আক্তার, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. শেখ সফিউল আজম, বিএমএ সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আক্তার চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও উপ-পরিচালক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি প্রমুখ।
মিজানুর রহমান/ইএ/জিকেএস