পুরো নাম শাহনাজ পারভিন দুলারী। সবাই তাকে অভিনেত্রী দুলারী হিসেবেই চেনেন ও জানেন। সত্তর দশকের শেষদিকে তার সিনেমায় আগমন। সেই থেকে আজ অব্দি কাজ করে যাচ্ছেন। চোখের সামনে থেকে দেখেছেন ইন্ডাস্ট্রির উত্থান-পতন।
Advertisement
সুমিতা দেবী, মায়া হাজারিকা, রওশন জামিল কিংবা রিনা খানের পর খল অভিনেত্রী হিসেবে দুলারীর নামটাই সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হবে ঢালিউডে। তার উপস্থিতিতেই অস্বস্তিতে ভুগতেন দর্শক। ভাবতেন নিশ্চয়ই কোনো কূট চাল দিয়ে নায়ক কিংবা নায়িকা জীবন ও সংসারে আগুন ধরাবেন। বৈচিত্রময় নানা চরিত্রে দুলারী প্রায় ৮ শতাধিক ছবিতে কাজ করে ফেলেছেন এরইমধ্যে। যা নিয়ে বেশ গর্ব অনুভব করেন তিনি।
এ অভিনেত্রী সম্প্রতি পরিচালক মো. আবুল কাশেম মন্ডল পরিচালিত ‘হৃদয়ের আঙ্গিনায়’ সিনেমায় কাজ করেছেন। এটি মুক্তি পাবে ১৯ নভেম্বর। এ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন দুলারী। সেখানে জাগো নিউজের মুখোমুখি হন তিনি। গল্পের ছলে শোনালেন ঢাকাই সিনেমার একাল সেকালের অনেক জানা অজানা কথা।
তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই অভিনয় অনেক ভালো লাগতো। রাজ্জাক ভাই, শাবানা আপা, কবরী আপার অভিনয় খুব ভালো লাগতো। পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার পর একদিন স্কুল পালিয়ে ‘মালেকা বানুর’ শুটিং দেখতে গিয়েছিলাম। এরপর বাড়িতে ফেরার পর মায়ের হাতে মার খেলাম। ওই মার খাওয়ার পর থেকেই মনে জিদ চেপে গেলো আমি অভিনয়ই করবো।
Advertisement
মূলত বান্ধবীর মামার হাত ধরেই আমার সিনেমায় আসা। কিছুদিন পর বাড়ি থেকে চম্পট! চলে আসি এফডিসিতে। সেখানে এসে পরিচালক সিরাজুল ইসলামের সাথে দেখা হয়। তিনিই আমাকে প্রথম কাজ দেন।’
‘প্রথমে আমি কমেডি দিয়েই অভিনয় শুরু করি। ৫ বছরে আমার ১৩০টি কমেডি ছবি রিলিজ হয়। এরপর আসি খল চরিত্রে। সবচেয় বেশি কাজ করেছি মন্দ নারীর ভূমিকায়। দর্শকও আমাকে লুফে নিয়েছেন নেতিবচক চরিত্রগুলোতে।
সেজন্য এখনো পরিচালকরা আমার কথা ভাবেন। কাজ দেন। এটাই ভালো লাগে’- যোগ করেন দুলারী।
তবে ব্যক্তি দুলারী মোটেও মন্দ নন। তার ভাষ্যে, ‘সিনেমার খল চরিত্রের সঙ্গে আমার ব্যক্তি চরিত্রের কোনো মিল নেই। বাস্তব জীবনে আমি কতটা ভালো তার একটা উদাহরণ দেই। আমার গাড়ির ড্রাইভার, ২৬ বছর ধরে আমাদের সঙ্গে আছে। কথায় বলে মানুষ কতোটা ভালো সেটা বোঝা যায় তার পুরনো সম্পর্কগুলো বিচার করে, তার বাড়ির কাজের লোকদের স্থায়িত্ব দেখে।’
Advertisement
সিনেমা নিয়ে বলতে গিয়ে দুলারী বলেন, ‘আমার জীবনে আমি এক সঙ্গে একদিনে ৭টি সিনেমার শুটিংও করছি। কিছু যেমন মুল শুটিং ছিলো, কিছু হতো প্যাচ শুটিং। সেদিন আর নেই। এখন বছরেও ৭টা সিনেমায় কাজ করা হয় না। আগে আমার ১ বছরে ২৭টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এখন ৩টাও হয় না। কাজের পরিবেশ আগের মতো নাই। আগের মতো ছবি বানানোর পরিচালকও নাই। এখন তো পরিচালকদের সবার সময়ই নাই। তাড়াহুড়ো করে কাজ।
আগে তো একটা ছবি বানাতে সময় লাগতো ১ বছর। আমরা শুটিং করে দিতাম ৬ মাস। আর সেগুলো কাজ শেষ করতে আরও ৬মাস লাগতো। এখন শুনি অমুক ছবির কাজ শুরু করছে। ২ মাসের মাথায় ছবিটা মুক্তি পাচ্ছে। কীভাবে কি করে কে জানে! এদিকে আরেকটা বিষয় হলো, এখন যারা নায়ক, নায়িকা হয়ে অভিনয় করেছে তাদের কেউ চিনে না। দর্শক তো পরে, আমরা সিনেমার মানুষেরাই চিনি না অনেক নায়ক-নায়িকাকে! অদ্ভূত লাগে আসলে।
এসব কারণেই সিনেমায় আর টাকা নাই। হলে দর্শক যাচ্ছে না এই কথা গুলো ঠিক না। ভালো জিনিস তো হচ্ছে না। ভালো সিনেমা হলে অবশ্যই দর্শক হলে যাবে। আবার সিনেমা হলের ব্যবসা দাঁড়িয়ে যাবে। এখন তো দেখি কয়েকটা গান আর কয়েকটা সিন দিয়ে সিনেমা হয়ে যায়। কোনো মৌলিক গল্প নাই। ভালো চরিত্র নাই। সংলাপ নাই। কি দেখতে হলে যাবে দর্শক?’
কি করলে ভালো ছবি হবে, এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দুলারী বলেন, ‘যতো তুমি চিনি ডালবে মিষ্টি ততো ভালো হবে। আমাদের কিছু টিভি চ্যানেল বন্ধ করতে হবে। এমন অনেক চ্যানেল আছে যেগুলোতে কোনো কিছুই দেখায় না। কিন্তু মানুষ তাও দেখে। মানুষ টিভিতেই বিনোদন নিয়ে নিচ্ছে। সিনেমার দিকে মনযোগী না। আর ভালো সিনেমার অভাব তো আছেই। অনেক খারাপের মধ্যে অনেক ভালো পরিচালক আছে এখনো। তাদের ব্যবহার করা উচিত।
সিনেমার সোনালি দিন ফেরাতে সরকারকে আরও সামনে এগিয়ে আসতে হবে। দেখতে হবে ভাবতে হবে দর্শক কি চায়। সে অনুযায়ী পদক্ষেপ দরকার।’
এমআই/এলএ/জেআইএম