রংপুরের হারাগাছ থানা পুলিশের ‘অভিযানে’ তাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়ে একজন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত ওই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ১১ নভেম্বরের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
এছাড়া, ওইদিন মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও অপমৃত্যু মামলার অনুলিপিও দাখিল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৫ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে।
তাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। রংপুরের ওই ঘটনায় গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন আদালতের নজরে এনে তা পড়ে শোনান আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তখন এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতে বলেন আদালত।
তার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ওই ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়েছিলেন। সে আদেশের পর বুধবার (৩ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের বেঞ্চে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে কমিটি গঠনের কথা জানায় পুলিশ।
Advertisement
এরপর শুনানি শেষে আদালত এসব আদেশ দেন। আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন ঘটনাটি আদালতের নজরে আনা আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত তথ্যাদি তুলে ধরেন। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নজরে আনা আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া শুনানি করেন।
আদেশের বিষয়টি জানিয়ে জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ওই ঘটনা তদন্তে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। কমিটির প্রতিবেদন, মরদেহের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও অপমৃত্যু মামলার অনুলিপি দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রাষ্ট্রপক্ষের উপস্থাপন করা তথ্যের মধ্যে সুরতহাল প্রতিবেদনের একটি কপি দাখিল করা হয়। রংপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রস্তুত করা সুরতহাল প্রতিবেদনে মরদেহের অবস্থা স্বাভাবিক ছিল ও আঘাতের চিহ্ন ছিল না বলে উল্লেখ করা হয়।
Advertisement
বুধবার জমা দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মৃত্যুর ঘটনায় মরদেহের সুরতহাল রিপোর্টে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। ওই ব্যক্তির কাছে পাঁচ গ্রাম হেরোইন পাওয়া গিয়েছিল। ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত এই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছেন।
এর আগে মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) বিষয়টি হাইকোর্টে নজরে আনেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। এর পর ঘটনার বিষয়ে খবরাখবর জেনে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চান আদালত।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ওইদিন জানান, ঘটনার পুরো বিষয়ে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে খবর নিতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার এ বিষয়ে বিস্তারিত শুনানি ও আদেশ দেওয়া হবে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশগুপ্ত জাগো নিউজকে বলেন, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ঘটনার বিষয় আদালতে উপস্থাপন করে নজরে আনেন। তিনি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত পুলিশের নির্যাতনে তাজুল ইসলামের মৃত্যু নিয়ে একটি প্রতিবেদন পড়ে শোনান। পুলিশি নির্যাতনে তাজুল ইসলামের মৃত্যু নিয়ে তিনি আদালতকে বলেন, এটা এতই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আপনারা দায়ীদের বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত আদেশ দিতে পারেন। কারণ সংবিধানে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের বেঁচে থাকার অধিকার আছে। তারপরও কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটছে?
এর পরে এ বিষয়ে পদক্ষেপ কী তা জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার পরে ইমেইল যোগে প্রতিবেদন পাঠান তারা। সেটি নিয়ে আজ শুনানি হয়।
এর আগে সোমবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রংপুরের হারাগাছ এলাকায় পুলিশের অভিযানের পর তাজুল ইসলামের মৃত্যু হয়। তিনি হারাগাছ পৌর এলাকার দালালহাট নয়াটারী গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
‘পুলিশি নির্যাতনে’ তার মৃত্যু হয়েছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী থানা ঘেরাও করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার সন্ধ্যার পর হারাগাছের নতুন বাজার বছিবানিয়ার তেপথি মোড়ে অভিযানে যায় পুলিশ। এ সময় তাজুল ইসলামকে মাদকসহ আটকের পর মারধর করা হয়। সময় তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলার উপক্রম হন। তখনই তাকে ধাক্কা দিলে পাশে দেয়ালে লেগে ঘটনাস্থলেই মারা যান তাজুল। এর প্রতিবাদে থানা ঘেরাও করে এলাকাবাসী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
তবে হারাগাছ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলী বলেন, তাজুল হেরোইন সেবন করছিলেন- এমন খবর পেয়ে সেখানে অভিযানে যায় পুলিশ। তাকে আটকের পর হ্যান্ডকাপ পরানো হলে তিনি মলত্যাগ করে ফেলেন। এ ঘটনার পর পুলিশ তাজুলকে স্থানীয়দের জিম্মায় দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এর কিছুক্ষণ পর খবর আসে তাজুল মারা গেছেন।
এফএইচ/এমএইচআর/এমআরআর/এমএস