কৃষি ও প্রকৃতি

গোপালগঞ্জে মাদ্রাজি ওলকচুর বাণিজ্যিক চাষ

বাড়ির পাশে শখের বশে স্থানীয় জাতের ওলকচু চাষ করেছেন অনেকে। কিন্তু গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এই প্রথম পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও লাভজনক উন্নত মাদ্রাজি জাতের ওলকচু চাষাবাদ হয়েছে। উচ্চ ফলনশীল এ সবজি বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করছে উপজেলার ৭ জন কৃষক। নতুন এ সবজি থেকে প্রায় ৩ গুণ লাভের স্বপ্ন দেখেছেন কৃষকেরা।

Advertisement

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জামাল উদ্দিন জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় উচ্চ ফলনশীল মাদ্রাজি জাতের ওলকচু চাষাবাদের বিষয়ে উপজেলার পাচ ইউনিয়নের ২৭০ জন কৃষকদের প্রশিক্ষণ শেষে ৭ জন কৃষককে ওলকচুর প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে।

প্রদর্শনীতে কৃষকদের মাদ্রাজি ওল কচুর বীজ (৬০ কেজি কন্দ), ২০ কেজি ডিএপি, ২০ কেজি ইউরিয়া, ১৫ কেজি এমওপি, ১ কেজি দস্তা, ১৫ কেজি জিপসাম সার দেয়া হয়েছে। ৭ জন কৃষক মোট ১৪০ শতক জমিতে ওলকচু চাষ করেছেন।

তিনি আরো জানান, মার্চ-এপ্রিল মাসে মাদা (বড় গর্ত) করে মাটির ১ ফিট নিচে এই কন্দ লাগানো হয়। এই সবজি চাষে বেশি পরিচর্যা করতে হয় না। কৃষকের কষ্ট কম হয় আর কম খরচে বেশি লাভও হয়। পতিত জমি ব্যবহার করার উত্তম ফসল এই ওলকচু। খরিপ ১ বা আউশ মৌসুমে এই ফসলের চাষাবাদ করা হয়।

Advertisement

ইতিমধ্যেই নতুন ফসলের চাষাবাদ করে কৃষকেরা খুবই খুশি। কারণ ব্যাপক ফলন হয়েছে আর বাজারে দামও বেশ ভালো। আগামীতে মোট ১০ বিঘা জমিতে মাদ্রাজি জাতের ওলকচু চাষাবাদের পরিকল্পনা রয়েছে কৃষি অফিসের।

বর্নি ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুরিয়া গ্রামের কৃষক বেল্লাল শেখ বলেন, কৃষি অফিস থেকে প্রদর্শনী পেয়ে ২০ শতক জমিতে এই নতুন কন্দাল ফসলের চাষাবাদ করেছি। আড়াইশো গ্রাম ওজনের কন্দ রোপণ করে ৫ মাস ৬ মাস বয়সে এক একটির ওজন ৪-৫ কেজি হয়েছে। বর্তমানে বাজারে কেজি প্রতি ৫০-৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। অল্প খরচে বেশি লাভের সম্ভাবনার কথা শুনে অন্যান্য কৃষকরাও আমাদের কাছ থেকে কন্দ সংগ্রহ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

কুশলী গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন ও দক্ষিণ বাসুরিয়া গ্রামের আসাদ শেখ বলেন, মাদ্রাজি জাতের ওলকচু নতুন সবজি হওয়ায় কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এইবার প্রথম চাষ করেছি। কৃষি অফিস থেকে সার ও বীজ দেয়ার পর ২০ শতাংশ জমিতে একজন কৃষকের ২-৩ হাজার টাকা খরচ হয়।

আর বিশ শতাংশ জমিতে ৩০-৩৫ মণ ওল কচু হবে। তাতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবো। এই সবজি চাষে যে টাকা খরচ হয় তার থেকে প্রায় তিন গুণ বেশি টাকা লাভ হবে। আশা করি নতুন এই সবজি চাষে আমরা লাভের মুখ দেখতে পাবো।

Advertisement

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম বলেন, ওলকচু একটি লাভজনক কন্দ জাতীয় সবজি। বাণিজ্যিকভাবে ওলকচু চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব। তাই মাদ্রাজি জাতের ওলকচু চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছি ও নানাভাবে পরামর্শ দিচ্ছি। আগামীতে এই ফসলের চাষাবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে আশাবাদী।

মেহেদী হাসান/এমএমএফ/এমএস