খেলাধুলা

‘বিশ্বকাপ জিততে হলে নামিবিয়ার কাছে হারতে হবে পাকিস্তানকে’

বিশ্ব ক্রিকেটে ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ তকমাটা যেনো একমাত্র পাকিস্তান দলেরই প্রাপ্য। সহজ ম্যাচকে পেন্ডুলামের মতো দোলানোতে পাকিস্তান দল আলাদা মজাই খুঁজে পায়। বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট এলে সেই ‘আনপ্রেডিক্টিবিলিটি’ বেড়ে যায় আরও বহু গুণে।

Advertisement

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত, নিউজিল্যান্ড এবং আফগানিস্তান- এই তিন ম্যাচ জিতে ফুরফুরে মেজাজে থাকা পাকিস্তানের খেলা বাকি নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। পাকিস্তানের সেমিফাইনাল খেলা প্রায় নিশ্চিত। তবে যেভাবে বাবর আজমরা খেলছেন, তাতে অনেকেই তাদের হাতে বিশ্বকাপ দেখতে পাচ্ছেন।

কিন্তু সত্যিই কী বিশ্বকাপ জেতা সম্ভব হবে পাকিস্তানের জন্য? চিন্তা করা যতটা সহজ, বাস্তবতা বহু কঠিন। কারণ, পাকিস্তান যত শক্তিশালী দলই হোক না কেন, তাদের ঐতিহ্য বলছে- একটি হোঁচট না খেলে তারা সঠিক পথে চলতে পারে না। তো সেই হোঁচট কী সেমি কিংবা ফাইনালে খাবে? তাহলে তো শিরোপা জেতা হবে না। তাহলে?

গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানকে মোকাবেলা করতে হবে স্কটল্যান্ড এবং নামিবিয়ার। হোঁচট যদি খেতেই হয়, তাহলে এই পর্বেই খাওয়া দরকার তাদের। ক্রিকেটের বাইবেলখ্যাত উইজডেনের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক বেন গার্ডনার পাকিস্তানের এই ব্যাপারটিই তুলে এনেছেন খুব সুন্দরভাবে। উইজডেন.কম-এ লেখা তার এক কলামে গার্ডনার দাবি করেন, পাকিস্তানকে শিরোপা জিততে হলে হোঁচটটা (!) খেতে হবে নামিবিয়ার সঙ্গেই। তাহলেই তারা সঠিক পথে থাকবে।

Advertisement

উইজডেন.কম এ লেখা কলামটিতে গার্ডনার লিখেছেন, গ্লোবাল ইভেন্টে পাকিস্তানের পথচলাটা অনেকটাই রূপকভাবে হয়ে থাকে। তাদের প্রতিটি ইতিবাচক পথচলার অনেকাংশেই সমাপ্তি ঘটে বাজেভাবে। তবে তাদের যদি সব ভুলভাবে চলতে থাকে, তাহলে একটা সময় দেখা যায় ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তী লক্ষ্য ঠিক করে নিতে পারে তারা। সমর্থকদের কাছে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের এই অবস্থাটা খুবই পরিচিত। ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ- দুটো আইসিসি টুর্নামেন্টের দিকে তাকালেই সমর্থকদের কাছে ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

দুবারই ভারতের বিপক্ষে গ্রুপপর্বে বাজেভাবে হেরেছিল পাকিস্তান। তবে ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাজেভাবে হারের পর শিক্ষা নিয়ে তারা ঠিকই শিরোপা জিতে নিয়েছিল। তবে ২০১৯ বিশ্বকাপে ভারতের কাছে হারটা তাদের জন্য ভালো কোনো ফল বয়ে আনেনি। দুই ফাইনালিস্ট ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলেও শেষ দিকে এসে নেট রানরেটের মারপ্যাঁচে গ্রুপপর্ব থেকে ছিটকে গিয়েছিল তারা।

এবারের পাকিস্তানের ব্যাপারটা ভিন্ন। দলের হেড কোচ ও বোলিং কোচ পদত্যাগ করে। খুব দ্রুত চেয়ারম্যান পদেও পরিবর্তন ঘটে আর সেখানে আসেন সাবেক ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজা। ম্যাথু হেইডেন আসেন ব্যাটিং কোচ হিসেবে।

এমনকি শুরু থেকে দল নির্বাচন নিয়ে তাদের অধিনায়কের অসন্তোষ ছিল। পরে শেষ মুহূর্তে ৩৯ বছর বয়সী শোয়েব মালিককে দলে নেওয়া হয়। আর তাদের প্রস্তুতি ম্যাচগুলোও নানা জটিলতায় বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু তারা কি হাল ছেড়ে দিয়েছে?

Advertisement

পরিস্থিতি তাদের এতটাই প্রতিকুলে ছিল যে, প্রথমে পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সাফল্য এতটাই অসম্ভব বলে মনে হচ্ছিল যে, এ ব্যপারটাই নিশ্চিত ছিল। এরে বিপরিত কিছু হতে পারে, তা ভাবাই ছিল কঠিন। তবে, তারা সবাইকে কঠিন সত্যটাই এখন চোখে দেখিয়ে দিচ্ছে।

ভারতের বিপক্ষে জয়ের পরও নিশ্চিত ছিল না যে পাকিস্তান কতদুর যেতে পারে কিংবা কী করতে পারে। শেষ মুহূর্তে এসে না সব এলোমেলো করে দেয়! এরপর নিউজিল্যান্ড এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়। আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচে আসিফ আলি বুঝে নিয়েছেন, সাফল্য পেতে হলে তাকে একাই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হবে। ম্যাচটি জয়ের আগে তিনি বুঝেছিলেন কতটা কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে।

কিন্তু এখন? তিন ম্যাচের তিনটিতেই জিতে সেমিফাইনালের পথে এক পা এরই মধ্যে দিয়ে ফেলেছে পাকিস্তান। এখন নামিবিয়া ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে যে কোনো ম্যাচ জিতলেই তারা চলে যাবে সোজা সেমিফাইনালে।

এতটা সলিড দেখা যাওয়ার পরও পাকিস্তান হোঁচট খেতে পারে। যে কোনো সাধারণ দলও তাদেরকে হোঁচট খাইয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে প্রথমে ব্যাট করতে গেলেই তারা বুঝতে পারতো, সত্যিকার অনুভূতি কী হয়। সম্ভবত হাস্যকর একটি ম্যাচও উপহার দিয়ে বসতে পারে তারা।

ক্রিকেটিং লজিং সম্পূর্ণভাবেই বলবে, তারা এখন বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের অন্যতম ফেবারিট। তাদের হাতে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নতুন বলের পেসার। স্পিনাররা কিছুদিন আগেও বাজে ফর্মে থাকলে তারা সত্যি সত্যি এখন ফর্মে ফিরে এসেছেন। তার ৩৯ বছর বয়সী সেই ক্রিকেটার (শোয়েব মালিক)? তিনি তো এখন তার ‘বন্ধনা’কেই ফিরিয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। এখন তিনি রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে। সব কিছুই চলছে সুন্দর গতিতে।

তবুও পাকিস্তান সমর্থকরা দুঃস্বপ্ন দেখতে পারেন। কারণ পাকিস্তানের সব কিছু ভালো চললেও হঠাৎকরেই একটি বাজেদিন চলে আসে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বের কথাই ভাবুন! গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই তারা উঠেছিল সুপার সিক্সে।

কিন্তু গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে তারা তখনকার বিশ্বকাপে নবাগত বাংলাদেশের কাছে হেরে গিয়েছিল। এরপর সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে ফাইনালে উঠে গিয়েছিল তারা।

যদিও ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তারা দাঁড়াতেই পারেনি। শেন ওয়ার্নের ঘূর্ণিতে (চার উইকেট) ১৩২ রানেই গুটিয়ে যায়। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ২০ ওভার ১ বলেই ম্যাচ শেষ করে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। এরপর থেকে পাকিস্তানের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা হয়নি।

সুতরাং, এবারের বিশ্বকাপেও পাকিস্তানের শিরোপা জেতার একটাই সম্ভাবনা রয়েছে। তারা যদি নামিবিয়ার কাছে হেরে যায়। কারণ, ভালোভাবে চলতে চলতে একটি ‘ধাক্কা’ যদি পাকিস্তান না খায়, তাহলে তারা সঠিক পথ পরে খুঁজে পায় না। তো সেই ধাক্কাটি বাবর আজমরা যদি নামিবিয়ার সঙ্গেই খেয়ে যায়, তাহলে নিশ্চিত ১৪ তারিখের ফাইনালের পর শিরোপা উঁচিয়ে ধরবেন বাবর আজমই।

আইএইচএস/