ছায়ানটের বর্ষবরণে রমনার বটমূলে বোমা হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স, আপিল ও জেল আপিল শুনানি কার্যতালিকা (কজলিস্ট) থেকে বাদ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
আংশিক শুনানি হওয়া ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানিতে মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের বেঞ্চ এই মামলার শুনানি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে আদেশ দেন।
আদালতে এদিন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম আশরাফুল হক জর্জ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ফরিদা পারভীন ফ্লোরা। আর আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির।
আদেশের বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম আশরাফুল হক জর্জ জাগো নিউজকে বলেন, এই বিষয়টি দুই বিচারপতির যে বেঞ্চে আংশিক শুনানি হয়েছিল বর্তমানে সেই দুই বিচারপতি এক বেঞ্চে না থাকায় বিশেষ বেঞ্চে বসে আজকে তারা বিষয়টি কার্যতালিকা থেকে বাদ (আউট অব লিস্ট) দিয়ে আদেশ দিয়েছেন। এখন নিয়ম অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নতুন বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেওয়ার পরে ওই বেঞ্চে বিষয়টি শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
Advertisement
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, বেঞ্চের একজন বিচারপতি পরিবর্তন হওয়ায় আদালত এই মামলা কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। এর আগেও হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ এই মামলা কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছিলেন। নিয়মানুযায়ী এখন নতুন বেঞ্চ নির্ধারণের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করতে হবে।
এর আগেও মামলাটি একাধিকবার কার্যতালিকায় আসলেও শুনানি হয়নি। সর্বশেষ গত ২৪ জুন এবং তার আগে ১৪ মার্চ কজলিস্টে এসেছিল।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়। এরপর ওই বছরের ১৪ মার্চ চূড়ান্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য দিনও ধার্য হয়। কিন্তু তারপর আর এগোয়নি।
২০১৪ সালের ২৩ জুন বহুল আলোচিত রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রুহুল আমিন। রায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপ-মন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ আটজনের ফাঁসি ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
Advertisement
রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়। অনাদায়ে আরও এক বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামিরা।
মুফতি হান্নান ছাড়াও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন- মাওলানা তাজউদ্দিন, মাওলানা আকবর হোসেন, মুফতি আব্দুল হাই, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মাওলানা আরিফ হাসান সুমন। এর মধ্যে মুফতি আবদুল হান্নানের পৃথক একটি মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- হাফেজ মওলানা আবু তাহের, মওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, হাফেজ মওলানা ইয়াহিয়া, মওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মওলানা আব্দুর রউফ ও শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন ও অনেকে আহত হন। এ ঘটনায় থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে সিআইডি হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে দীর্ঘ শুনানি নিয়ে হত্যা মামলাটি বিচারিক আদালতে রায় ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হয়।
এফএইচ/ইএ/এমআরআর/এমএস