সালতামামি

আদালত টু জেলগেট চক্করে জামায়াতের বছর পার

আদালত আর জেলগেট চক্করে বছর পার করেছে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং এর ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। দলের রুই-কাতলারা ট্রাইব্যুনাল-হাইকোর্ট হয়ে ফাঁসিকাষ্ঠ। আর মাঝারি থেকে পাতি নেতারা মানুষহত্যা, বাসে আগুন, ভাঙচুর, পেট্রোলবোমা হামলাসহ নাশকতার মামলায় সারা বছর কেবল আদালত আর জেলগেটের সীমার মধ্যেই কাটিয়েছে সময়। প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে দলটি।দলের নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আসার পর থেকেই নেতাকর্মীরা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। পরবর্তীকালে দলটির অভিযোগ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রতিদিনই তাদের নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করছে। তাদের অভিযোগ মতে, দলটির প্রায় লক্ষাধিক নেতা-কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন।বিভিন্ন সময় এ দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক নেতা ক্ষমতাসীন সরকারের সাত বছরে সাতদিনও নিজ বাড়িতে ঘুমাতে পারেন নি। প্রতিদিনই দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হতো তাদের নেতা কর্মীরা আটক, মামলা ও হামলার শিকার হচ্ছেন। সাত বছরের বেশি সময় এ দলের কেন্দ্রীয় অফিসের তালাও খুলতে পারেনি। গণমাধ্যমে বিবৃতি এবং কিছু আলোচনা ও সভার খবর প্রেসে রিলিজ করে পাঠানো ছাড়া নিয়মিত কোনো কার্যক্রমই চোখে পড়েনি। গোপনে কিছু অনুষ্ঠানের কথা বললেও প্রকাশ্য তাদের কোনো কর্মসূচি ছিল না।মানবতাবিরোধী অপরাধে এ সংগঠনের দুই কেন্দ্রীয় নেতার ফাঁসি হয়েছে। এ নিয়েও  নেতা-কর্মীদের নাশকতার মামলায় আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।অন্যদিকে, আদালতের আদেশে জামায়াতের নিবন্ধন নির্বাচন কমিশন থেকে বাতিল হয়েছে। সে মামলা নিয়েও আদালত পাড়ায় ঘুরতে হচ্ছে তাদের। দলের এক হিসেবে দেখা যায়, ২০১৫ জুড়ে সারা দেশে দলটির নেতা-কর্মীদের নামে প্রায় লক্ষাধিক মামলা হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতা প্রায় সময় দুঃখ করে বলেন, মামলার কারণে তারা দল গোছানো এবং সাংগঠনিক কাজের সময় পান না। দেখা গেছে, এমন অনেক নেতা রয়েছেন যাদের নামে ৫০ থেকে ৭০টি মামলাও রয়েছে। এমন অনেক নেতাও রয়েছেন যাদের মাসে প্রায় প্রতিদিনই আদালতে হাজির হতে হয়।মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হলেও দলটি তেমন কোনো কর্মসূচিই পলন করতে পারেনি। যদিও মাঠ পর্যায়ে কেন্দ্র থেকে বার্তা দিয়ে কিছু কৌশল অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে শান্ত থেকে সহিংসতার মামলা থেকে নেতা-কর্মীদের নিরাপদ রাখাই তাদের উদ্দেশ্য। নতুন কোনো সহিংসতার দায় কাঁধে নিতে নারাজ দলটি। সরকার যেনো নিষিদ্ধ করার যৌক্তিক কারণ দাঁড় করাতে না পারে সে জন্যই এ বাড়তি সতর্কতা।দলের নেতারা জানান, সুফল আসবে না জেনেও অস্তিত্ব জানান দিতেই কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই। অন্যদিকে, যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে রাজপথে সহিংসতা নিয়ে দলের অভ্যন্তরেও মতোবিরোধ রয়েছে। দলের নেতা-কর্মীরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে রাজপথে থাকলেও শীর্ষ নেতাদের মুক্ত করতে পারে নি।দেশে-বিদেশের সব দিক থেকে চাপে ছিলো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত এ সংগঠনটি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ছাড়াও পরাশক্তি দেশের সঙ্গে একসময় সু-সম্পর্ক ছিল তাদের। যে সব নেতা এসব সম্পর্ক রক্ষা করতেন তারা কারাগারে অথবা নিষ্ক্রিয় থাকায় কূটনীতিক সম্পর্কে ভাটা পড়েছে।তবে দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবদিক থেকে চাপে থাকায় ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না জামায়াত। ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠার পর তিন দফায় নিষিদ্ধ হলেও কখনও এতটা কঠিন অবস্থায় পড়তে হয়নি জামায়াতকে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও জেলার একাধিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইচ্ছা ও সামর্থ থাকলেও রাজপথে সক্রিয় হতে পারছেন না নেতাকর্মীরা।এ প্রসঙ্গে দলের প্রচার বিভাগের সহাকারী সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ জাগো নিউজকে বলেন, জামায়াত নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। দলীয় কর্মসূচিও তার আলোকেই পালন করা হয়।এএম/এসএইচএস/এএইচ/আরআইপি

Advertisement