নেত্রকোনার সেরা দর্শনীয় স্থান হলো বিরিশিরি। সেখানকার অপরূপ সৌন্দর্য মুগ্ধ করে সবাইকে। সাদা মাটির এই দেশে দেখা মিলবে চিনামাটির পাহাড়, সোমেশ্বরী নদী, নীলচে-সবুজ পানির হৃদ, গির্জা, পাহাড়ি নৃ-গোষ্ঠিসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান।
Advertisement
কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেই হাতে সময় নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারেন না। এমন মানুষেরা একদিনের ডে লং ট্রিপে ঘুরতে যাওয়া যায় এমন দর্শনীয় স্থানের খোঁজ করেন। তাদের জন্য উপযুক্ত এক গন্তব্য হলো নেত্রকোণা জেলার বিরিশিরি। একদিনেই অল্প খরচে ঘুরতে যাওয়ার জন্য সেরা এক দর্শনীয় স্থান এটি।
বিরিশিরি বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত। বিরিশিরির মূল আকর্ষণ হলো বিজয়পুর চীনামাটির খনি। এর বুক চিরে বয়ে গেছে সবুজ ও নীলচে স্বচ্ছ পানির হ্রদ। বিরিশিরি হলো খুবই সুন্দর এক গ্রাম। সেখানকার পাহাড় ও তার আশেপাশের সমভূমির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৬০০ মিটার।
বিরিশিরি ভ্রমণে যা যা দেখবেন
Advertisement
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় গেলে শুধু বিরিশিরি নয়, আরও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। তেমনই কয়েকটি স্থান হলো-
১. গারো পাহাড়: ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো-খাসিয়া পর্বতমালার একটি অংশ। এর কিছু অংশ ভারতের আসাম রাজ্য ও বাংলাদেশের নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত। গারো পাহাড়ের বিস্তৃতি প্রায় ৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার।
২. দুর্গাপুরের জমিদার বাড়ি: একসময় দুর্গাপুর ছিল সুসং রাজ্যের রাজধানী। বর্তমানে এটি নেত্রকোনার একটি উপজেলা। সোমেশ্বর পাঠক থেকে শুরু করে তার পরবর্তী বংশধররা প্রায় ৬৬৭ বছর শাসন করেন এ রাজ্য।
৩. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি: দুর্গাপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশেই অবস্থিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি। এ অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জীবন যাত্রার নানা নিদর্শন সংরক্ষিত আছে এখানে।
Advertisement
৪. টংক আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ: সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে কিছু দূর গেলে এম.কে.সি.এম হাই স্কুলের পাশেই চোখে পড়বে স্মৃতিসৌধটি। প্রতিবছর ৩১ ডিসেম্বর কমরেড মণিসিংহের মৃত্যু দিবসে এখানে পাঁচ দিনব্যাপী ‘মণিসিংহ মেলা’ নামে লোকজ মেলা বসে।
৫. সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী: দুর্গাপুর থেকে সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে রিকশায় রানিখং গ্রামে পৌঁছেই দেখতে পাবেন ক্যাথলিক গির্জা। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯১২ সালে।
৬. হাজং মাতা রাশিমণি স্মৃতিসৌধ: দুর্গাপুর বাজার থেকে বিজয়পুর পাহাড়ে যাওয়ার পথেই দেখা মিলবে এই স্মৃতিসৌধ। কামারখালী বাজারের পাশে বহেরাতলীতে অবস্থিত রাশিমণির এই স্মৃতিসৌধ। জানা যায়, ব্রিটিশ মহাজন ও জোতদারদের অন্যায় নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন রাশিমণি।
৭. সাদা মাটির পাহাড়: নেত্রকোনা ভ্রমণে সবাই প্রথমে এ স্থানেই ঘুরতে যায়। দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত সাদা মাটির পাহাড়।
এখান থেকে চীনা মাটি সংগ্রহ করা হয়। ফলে পাহাড়ের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট গভীর জলাধার। পাহাড়ের গায়ে স্বচ্ছ নীল রঙের জলাধারগুলো দেখতে খুবই চমৎকার।
৮. সোমেশ্বরী নদী: স্বচ্ছ পানি আর ধু ধু বালুচরের জন্য বিখ্যাত সোমেশ্বরী নদী। এটি বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলায় প্রবাহিত একটি নদী। এর সৌন্দর্যও আপনাকে মুগ্ধ করবে।
৯. কংশ নদী: এই নদী ভারতের মেঘালয় ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে। ভারতের শিলং মালভূমির পূর্বভাগের তুরার কাছে গারো পাহাড়ে নদীটির উৎপত্তি।
১০. আত্রাখালি নদী: নেত্রকোনায় আরও এক নদীর দেখা পাবেন। সেটি হলো আত্রাখালি নদী। কিছু দূর এগিয়েই নদীটি সোমেশ্বরীর মূলধারা সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
১১. কমলা রানির দীঘি: বিরিশিরি ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই কমলা রানির দীঘি দেখতে পাবেন। দীঘিটি এখন নদীতে বিলীন হলেও এর দক্ষিণ-পশ্চিম পাড় এখনো কালের সাক্ষী হয়ে আছে।
কীভাবে যাবেন বিরিশিরি?
মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে সরাসরি দুর্গাপুর যাওয়ার বাস পাবেন। ৫-৭ ঘণ্টার মধ্যেই আপনি পৌঁছে যাবেন বিরিশিরিতে। আবার ট্রেনে নেত্রকোনা পৌঁছে সেখান থেকে বিরিশিরি যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন ও খাবেন?
দুর্গাপুরে সাধারণ মানের কিছু হোটেল পেয়ে যাবেন। এগুলোর ভাড়াও খুব কম। আর নেত্রকোনা গেলে অবশ্যই সেখানকার বিখ্যাত খাবার বালিশ মিষ্টি খেতে ভুলবেন না।
সূত্র: ট্যুর টুডে
জেএমএস/জেআইএম