আন্তর্জাতিক

বছরে ৫ মাসই ঢাকার বায়ু ‘অস্বাস্থ্যকর’

কয়েক বছর ধরে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ওপরের দিকে নাম থাকছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার। ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স প্রজেক্টের হিসাবে (একিউআইসিএন) শনিবার (৩০ অক্টোবর) সকালেও এ শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা দেখা গেছে ১৬৫ পিএম২.৫, যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবেই বিবেচিত হয়। তবে সাত-আট মাস আগের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করলে ঢাকার বায়ুদূষণ কমেছে ব্যাপকভাবে।

Advertisement

একিউসিএনের ওয়েবসাইটে শনিবার সকাল ১০টার সময় রিয়েল টাইম এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে (একিউআই) দেখা যায়, গত ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় বায়ুদূষণের সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ১৮২ পিএম২.৫ এবং সর্বনিম্ন ১১৭ পিএম২.৫।

সপ্তাহের আগামী দিনগুলোতেও ঢাকার বায়ুদূষণ পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন হবে না বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। একিউআইসিএনের পূর্বাভাস অনুসারে, রোববার (৩১ অক্টোবর) ঢাকায় বায়ুদূষণের সীমা থাকতে পারে ১৩৮ থেকে ১৫৯ পিএম২.৫। সোমবার ১৩৮ থেকে ১৭৪ এবং মঙ্গলবার বায়ুদূষণের সীমা ১৪৮ থেকে ১৭৪ পিএম২.৫ থাকতে পারে। বুধবার ফের ১৩৮ থেকে ১৭৪ থাকলেও বৃহস্পতি ও শুক্রবার দূষণ কিছুটা বেড়ে একিআই সূচক দাঁড়াতে পারে ১৫৯ থেকে ১৭৪ পিএম২.৫-এ।

একিউআই সূচক অনুসারে, বায়ুদূষণের মাত্রা ০ থেকে ৫০ পিএম২.৫ হলে সেটি ভালো, ৫১ থেকে ১০০ হলে তা সহনীয়, ১০১ থেকে ১৫০ বিশেষ শ্রেণির জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১ থেকে ২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০০-এর বেশি হলে তা মানবস্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক বলে বিবেচিত হয়।

Advertisement

একিআইসিএনের ওয়েবসাইটে ২০১৬ সাল থেকে ঢাকার প্রায় প্রতিদিনের একিউআই পয়েন্টের একটি পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। এতে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকার বায়ু বেশ ভালো অবস্থায় ছিল। ওই মাসে পাঁচ দিন শহরের দূষণমাত্রা ছিল ৫০ থেকে ৭৫, আট দিন ৭৫ থেকে ১০০, সাত দিন ১০০ থেকে ১২৫ এবং তিন দিন ১২৫ থেকে ১৫০ পিএম২.৫। বাকি সাত দিনের কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি।

সেই তুলনায় গত জানুয়ারিতে ঢাকার বায়ুদূষণ পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। ওই মাসে দূষণমাত্রা ১৭৫ থেকে ২০০ পিএম২.৫ ছিল এক দিন, ২০০ থেকে ৩০০ ছিল ২৩ দিন এবং বাকি সাত দিন ছিল ৩০০ থেকে ৪০০’র মধ্যে।

একিআইসিএনের চার্ট লক্ষ্য করলে দেখা যায়, প্রধানত নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ঢাকায় বায়ুদূষণ বেশি থাকে। বছরের বাকি সাত মাস শহরের বায়ু তুলনামূলক নিরাপদ।

চার্টের তথ্য হিসাব করে দেখা যায়, ২০২০ সালের নভেম্বরে ঢাকায় দৈনিক বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল গড়ে ১৬৩ দশমিক ২২ পিএম২.৫। পরের মাসে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ২৩১ দশমিক ৬৭। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে রাজধানীতে বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল বিগত কয়েক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। ওই মাসে দৈনিক গড় বায়ুদূষণ দাঁড়িয়েছিল ২৬১ দশমিক ৫৪ পিএম২.৫। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল ২৩৯ দশমিক ৬৪ এবং মার্চে ২১১ দশমিক ৪১।

Advertisement

সেই তুলনায় পরের মাসগুলোতে ঢাকার বায়ু তুলনামূলক স্বাস্থ্যকর দেখা গেছে এবং এই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি ঘটছে প্রতি বছরই।

নভেম্বর থেকে মার্চ এই পাঁচ মাস বায়ুদূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. তৌহিদা রশিদ জাগোনিউজকে বলেন, এই সময়টা শুষ্ক মৌসুম, তখন বৃষ্টি হয় না। তাই দূষণের মাত্রা বেশি থাকবে, এটিই স্বাভাবিক। বৃষ্টির সঙ্গে দূষিত কণাগুলো ভূপৃষ্ঠে এসে জমা হয়। যখন বৃষ্টি হয় না, সেগুলো বাতাসে ভেসে বেড়ায়। নানা ধরনের উপাদান তখন বাতাসে ভাসমান অবস্থায় থাকে।

তিনি বলেন, শীতের সময় যে পারিপার্শ্বিক অবস্থা হয়, সেখানে বিভিন্ন পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ কারণে বায়ুদূষণের মাত্রাও বেড়ে যায়।

এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিকও অনেকটা একই মত দেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বৃষ্টি হলে বায়ুর দূষিত কণাগুলো মাটিতে চলে আসে। ফলে বর্ষাকালে বাতাসে দূষণমাত্রা কম থাকে। কিন্তু ওই পাঁচ মাস বৃষ্টিপাত কম হয়, এ কারণে বায়ুদূষণ তুলনামূলক বেশি দেখা যায়।

কেএএ/এমএস