মতামত

সচেতনতার বিজ্ঞাপনে কেন অসচেতনতা?

ইদানিং নিজেকে বোকা মনে হয়। কতো কি যে দুনিয়াতে ঘটছে, সব দিকে নজর দিতে পারি না। নজর পড়লেও ঘটনার অনুবাদ করার বিদ্যা নাই। কোন কোন ঘটনা আছে ঠাওর পাই বেশ দেরিতে। আমার এই বিলম্ব জাগরণ দেখে কন্যা - পুত্র দুজনেই হাসাহাসি করে । ছয় বছরের পুত্র বলে আমি নাকি বোকা । কথা সত্য অনেক ছল চাতুরি এখন আর চোখে মনে ধরা পড়ে না । কে যে ভালোবাসে আর কে যে ফাঁদে ফেলে বুঝি না । যখন বুঝি তখন বোকার মতো ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি । যে ফাঁদে ফেলল , যে প্রতারণা করলো, যে অযথাই দুর্নাম রটালো তাকে আর কিছু বলা হয় না। আমার এই দুরবস্থা দেখে কাছের কিছু লোকজন আমাকে’ মাসুদ’ বলে সম্বোধন করছে। কেউ বলছেন - আপনি তো ধরা খাবেনই, মাসুদ যে আপনি একটা । কেউ বলে- মাসুদের মতো কথা বলোনাতো । আমি জানতে চাই- মাসুদ কে, আমি কেন মাসুদের মতো হবো? তারা আমার কথার উত্তর না দিয়ে শুধু মিটিমিটি হাসেন। কেউ ভেংচিও কাটেন । আমার জীবন বন্ধুর গাড়ি চালক মহোদয়ের নাম মাসুদ । অফিসের গাড়ি চালক একজন আছেন, তিনিও মাসুদ । আমার অগ্রজ, অনুজ একাধিক ভাইয়ের নাম মাসুদ। কিন্তু আমার আচরণের সঙ্গে আমি যে তাদের খুঁজে পাই না ।

Advertisement

আমার অনুজ আছে, তার কাছে দিন দুনিয়ার খবরের অভাব নেই । সোশ্যাল মিডিয়া, তথ্যপ্রযুক্তি তার ঠোঁটস্থ। দিন কয়েক আগে জোছনা রাতে ছাদে বসে তিনি গান গাইছেন, আর আমি দুই কান সেই গানের দিকে পেতে দিয়ে মুঠোফোনে লিখছি। তিনি আমার এই কাণ্ড দেখে বললেন- ভাই, মাসুদের মতো কাজ করলে হবে? আমি শেন হাতে মোয়া পেয়ে গেলাম । চেপে ধরলাম ওকে- মাসুদটা কে ভাই বলতো? ও অবাক হয়ে বলে - আপনি জানেন না, এমন বোকা কেন ভাই আপনি? নিজেকে বোকা স্বীকার করে নিয়ে বললাম, মাসুদ নামের মানুষটার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বোকাত্বের থেকে মুক্তি দাও না ভাই।

অতঃপর সেই অনুজ ‘ পাঠাও’রাইড শেয়ারিং অ্যাপস এর সোশ্যাল মিডিয়ার বিজ্ঞাপনটি দেখালো । দেখে তাজ্জব হইনি । বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আমি এমন শত শত উদ্ভট, বিদ্বেষমূলক কাজ দেখেছি । এই বিজ্ঞাপনটি সামাজিক ও ব্যক্তি বিদ্বেষমূলক । প্রথমত একটি নাম এখানে ব্যবহার করা হয়েছে। এই নামটি বিভিন্ন বয়সী অনেকের আছে । ‘বোকা’ , আইন অমান্যকারী, যেভাবেই বলি না কেন ঐ নামটি দিয়ে কাউকে চিহ্নিত করা মানে, মাসুদ নামের ব্যক্তিকে হেয় করা । বিজ্ঞাপনটি ব্যক্তিকে হেয় বা বিদ্বেষমূলক দৃষ্টিতে দেখতে, ডাকতে প্ররোচিত করছে । তার প্রমাণ আমরা পথে ঘাটে বিদ্যায়তনে অফিসে ফেসবুকে সর্বত্র পাচ্ছি।

বিজ্ঞাপন নির্মাতা ও রাইড শেয়ার কোম্পানি হয়তো গর্ব করে কলার উঁচু করে বলছে, কতো দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়া গেছে। সমাজে বিদ্বেষ উসকে দেওয়া, মানুষকে হেয় করার প্রবণতায় বাতাস দেয়া দায়িত্বশীল উদ্যোক্তা ও নির্মাতার পরিচয় বহন করে না।

Advertisement

‘নিউ মিডিয়া’র দাপট বাড়ছে। ভোক্তারাও ঝুঁকছেন সেদিকে । বিজ্ঞাপন দাতারাও প্রচারের জন্য ওদিকেই হেলছেন। আগামীতে বেতার, টিভি পত্রিকার চেয়ে বিজ্ঞাপন যাবে ডিজিটাল মাধ্যমে বেশি। তাই এদিককার বিজ্ঞাপনের বিষয়, ভাষা ও নির্মাণের ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ফেসবুকের অসচেতন ব্যবহার অনেক সহিংস ও হিংসাত্মক ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বুলিং বা বিদ্বেষমূলক বিজ্ঞাপনও কখনও অপ্রীতিকর ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে । সুতরাং যে কোন বার্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট।

এইচআর/এমএস

Advertisement