দেশজুড়ে

নারায়ণগঞ্জে বড় হচ্ছে শহর, কমছে ফসলি জমি

শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে বরাবরই এগিয়ে ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জ। শিল্পায়নের প্রসারে যে নগরায়ণ হচ্ছে তাতে কলেবর বাড়ছে শহরের। কমছে ফসলি জমি, বাড়ছে জেলায় উৎপাদিত খাদ্যশস্যের ঘাটতি। অপরিকল্পিত শিল্পায়নে প্রতি বছরই কোপ পড়ছে কৃষি জমিতে। এতে স্বাভাবিকভাবেই কমছে খাদ্য উৎপাদন।

Advertisement

কৃষিজমি কমে যাওয়ায় বাড়ছে না আবাদ। নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে উৎপাদন ওঠা-নামা করছে। গত এক দশকে প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জে ধানের আবাদ হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার ৩৯৮ হেক্টর জমিতে। তবে সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, বীজ-সারের সহজলভ্যতা ও উন্নত জাতের বীজ উদ্ভাবনের কারণে উৎপাদন স্থিতিশীল রয়েছে বলে দাবি কৃষি বিভাগের।

নারায়ণগঞ্জ কৃষি বিভাগ জানায়, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে ধানি জমি ও খাল-জলাশয় ভরাট করে গড়ে উঠছে বাড়িঘর। নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে বাড়ছে শিল্প-কারখানাসহ নানা স্থাপনা। এতে প্রতি বছর ১ শতাংশ কৃষিজমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে।

বন্দর উপজেলা এলাকার কৃষক আমির উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ২০ বছর আগেও গোলা ভরে ধান তুলতাম। বাড়ির সামনে দাঁড়ালে শুধু ফসলি জমি চোখে পড়তো। এখন বাড়ির সামনে দাঁড়ালে খালি বিল্ডিং চোখে পড়ে। ধানও আগের মতো হয় না। ক্ষেতও নেই। কী চাষ করবো আর কী ধান তুলবো।

Advertisement

আড়াইহাজার এলাকার কৃষক খালেক জাগো নিউজকে বলেন, আগে আমাদের অনেক ফসলি জমি ছিল। প্রত্যেক মৌসুমে প্রায় ৪০০ মণ ধান তুলতাম। এখন ৫০ মণও ধান ফলাতে পারি না। আমরা ১০ ভাই ছিলাম। বর্তমানে দু-তিনজন ছাড়া সবাই চাকরি করেন। তাদের ফসলি জমির দরকার নেই। তারা তাদের জমি বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করেছেন। এসব জমিতে বড় বড় কোম্পানি হচ্ছে। এভাবেই আমাদের ফসলি জমি কমছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জে আশঙ্কাজনকভাবে ধানি জমি কমতে শুরু করেছে। বিশেষ করে নগর ও নগরীর আশপাশের উপজেলায় ব্যাপকভাবে আবাদযোগ্য জমি কমছে। বড় হচ্ছে শহরাঞ্চল। এসব এলাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ণে কৃষিজমি দ্রুত অকৃষি খাতে যাচ্ছে। এছাড়া ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আবাসস্থল, শিল্প-কারখানাসহ নানা স্থাপনা নির্মাণের কারণে বেশি কমছে আবাদযোগ্য জমি।

১৯৯৭ সালে কৃষি জরিপ অনুযায়ী, ফসলি জমির পরিমাণ ছিল ৬৮ হাজার ৮৩৯ হেক্টর। এর মধ্যে চাষাবাদের আওতায় ছিল ৪৬ হাজার ৭৭৪ হেক্টর। জেলায় অকৃষি জমি ৩৮২১ হেক্টর। ফসলের নিবিড়তা ১৭৬ শতাংশ। আবাদযোগ্য পতিত জমি ৪ হাজার ৩০৫ হেক্টর ও অস্থায়ী পতিত জমি ৫৮৭০ হেক্টর।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) প্রতিবেদনে বলছে, দেশে বিভাগওয়ারি কৃষিজমি অকৃষি খাতে চলে যাওয়ার প্রবণতা নারায়ণগঞ্জে বেশি। এ বিভাগে প্রতি বছর ৩ হাজার ৮২১ হেক্টর জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে।

Advertisement

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ইসহাক বলেন, নারায়ণগঞ্জ শিল্পের জন্য বিখ্যাত এটা সবাই জানেন। তারপরও যেসব জমি রয়েছে এগুলোতে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যদিও নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশেই কৃষিজমি কমতে শুরু করেছে। তবে অপরিকল্পিত শিল্পায়নের কারণে যেভাবে কৃষিজমি কমতে শুরু করছে তা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অবশ্যই হুমকিস্বরূপ। সরকারিভাবেও নির্দেশনা রয়েছে কৃষিজমি রক্ষার ব্যাপারে। এ বিষয়ে সবাইকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

এএ/এমএস