জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবীর দেওয়া বক্তব্যে রেগে গিয়ে দলটির ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।
Advertisement
শনিবার (৩০ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপিপন্থি সংগঠন নাগরিক ফোরামের আলোচনাসভায় জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ দুই নেতা। এসময় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এসবই জামায়াতের ফাইজলামি।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ মিলনায়তনে ‘মানবাধিকার ও আইনের শাসন: প্রেক্ষিত ২৮ অক্টোবর’ শীর্ষক আলোচনাসভায় জামায়াত নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাইফুর রহমান ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পুরানা পল্টনে জামায়াতের সমাবেশে হামলা ও দলটির অনুসারী কয়েকজনের মৃত্যুর জন্য বিএনপিকে দায়ী করে বক্তব্য দেন। তার এ বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় জানিয়ে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এ জামায়াত বাংলাদেশকে আজ এ জায়গায় এনেছে। এসবই জামায়াতের ফাইজলামি।’
একই মুহূর্তে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রনেতা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আরে বসেন আবার কী? তাদের মিটিং করতে দেয় নাই, উনার খুব অপরাধ হয়েছে' সঙ্গে সঙ্গে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলো? এসব সাজিয়ে নিয়ে আসছে। কার সামনে কথা বলো। কী বলছো তুমি? তোমার কথার কৈফিয়ত দিতে হবে? জবাব দিতে হবে তোমার মতো লোককে?’।
Advertisement
বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর প্রতিক্রিয়া দেখালেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস এবং জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর নেতা হেলাল উদ্দিন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। তবে ঘটনার সময় উপস্থিত না থাকলেও পরে আসেন জামায়াতের প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ।
আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাবেক শিবির নেতা ও বর্তমানে কল্যাণ পার্টির যুগ্ম মহাসচিব (সমন্বয়কারী) আবদুল্লাহ আল হাসান সাকিবও তর্কে জড়িয়ে পড়েন। ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপির এ দুই নেতা তাকেও ধমক দেন। যদিও তিনি দাবি করেছেন, ‘অ্যাডভোকেট সাইফুর রহমান ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার থাকার পরও কীভাবে জামায়াতের ওপর হামলা হলো তা উল্লেখ করেন। সাইফুর রহমানের দাবি, জামায়াতের তৎকালীন আমির মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। কেন ওই সময় একসঙ্গে কর্মসূচি করা হয়নি জানতে চেয়েছিলেন তিনি। জোটে থাকার পরও কেন বিএনপি আলাদা সমাবেশ করেছিল সেই বিষয়টিও তুলেছিলেন। সাইফুর রহমান বলেছেন, এর জবাব বিএনপিকেই দিতে হবে। এরপরই খন্দকার মোশাররফ স্যার ক্ষেপে গেছেন। এসময় আমি স্যারকে শান্ত করার চেষ্টা করি। আমি স্যারকে (খন্দকার মোশাররফ হোসেন) শ্রদ্ধা করি। তিনি প্রবীণ রাজনীতিক। আমি বলেছি, স্যার ব্যক্তিগতভাবে নিয়েন না। পরে পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে।’ অনুষ্ঠানে থাকা বিএনপি এক নেতা জানান, ‘ঘটনাস্থলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল উপস্থিত থাকলেও তিনি চুপ ছিলেন। তবে খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও শামসুজ্জামান দুদু উভয়ে তীব্র ভাষায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অনেকে মোশাররফ স্যার ও দুদু ভাইকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু দুদু ভাইকে শান্ত করা সম্ভব হয়নি।
প্রেস ক্লাবে সভার আয়োজক ছিলেন জিয়া পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল্লাহিল মাসুদ। জানা যায়, এ আবদুল্লাহিল মাসুদ এক সময় জাতীয় যুব কমান্ডের সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নাগরিক ফোরামের ব্যানারে তিনি কয়েকশ’ কর্মসূচি আয়োজন করেছেন। যা অধিকাংশের পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। তিনি দাবি করেন, ‘সাইফুর রহমানকে আমি চিনি না। অনুষ্ঠানের আরেকজন আলোচক তাকে এনেছিলেন। তিনি আইনজীবী বলে শুনেছি। অনুষ্ঠানে কোনো ঝামেলা হয়নি।’
কেএইচ/এমএএইচ/
Advertisement