দেশজুড়ে

চৌমুহনীতে লড়াই হবে দ্বিমুখী

শীতের ঠান্ডা পাশাপাশি নির্বাচনী উত্তাপ। দুইয়ে মিলে সরগরম নোয়াখালী জেলার শত বছরের ঐতিহবাহী বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত চৌমুহনী পৌরসভা। জেলার রাজনীতিতে চৌমুহনীর একটি অগ্রণী ভূমিকা থাকায় গোটা জেলাবাসী এ পৌরসভার ভোটের দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রার্থীরা ছুটে যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। দিচ্ছেন নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি। আর ভোটারও বলছেন দেখে শুনে যোগ্য প্রার্থীকেই তারা ভোট দিবেন। জেলার সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র হিসেবে চৌমুহনী বাজারের নামকরণে চৌমুহনী পৌরসভার নাম রাখা হয়। ১৯৭৩ সালে এ পৌরসভা গঠিত হয়। ৪২ বছরের পুরনো এ পৌরসভায় বর্তমান জনসংখ্যা ১ লাখ ৬০ হাজার। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেয়র মামুনুর রশিদ কিরণ নোয়াখালী-৩ বেগমগঞ্জ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় ওই বছরের ৫ এপ্রিল মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন ফয়সাল ভোটে মেয়র পদে নির্বাচিত হন। এবারও তাকে দল থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু শুরুতে আওয়ামী লীগের দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন। পরে অবশ্য একজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হলে যায় এবং অপরজন মনোনয়পত্র প্রত্যাহার করে নেন।ফলে একক প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে নেমে পড়েছেন বর্তমান মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সাল। পৌষের শীত উপেক্ষা করে দলীয় নেতা-কর্মী সমর্থক নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন ৯টি ওয়ার্ডের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করার জন্য আবারও ভোট প্রার্থনা করছেন। নানা ধরনের শঙ্কা আর সংশয়কে দূরে রেখে তিনি ভোটারদের আশ্বস্ত করছেন। উৎসব মুখর পরিবেশে চৌমুহনী পৌরসভার ভোট হবে। ভোটার ভোট কেন্দ্রে গিয়ে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিবেন। সরকার দলীয় প্রার্থী হিসেবে তিনি ও কাউন্সিলররা সুষ্ঠুভাবে ভোট দানের পরিবেশ রক্ষায় কাজ করবেন। এদিকে তার পক্ষে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আযাহার উদ্দিনসহ জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ মাঠে গণসংযোগ করে ভোট চেয়েছেন। অপরদিকে এবার ও বিএনপি থেকে ধানের শীষে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে পৌর বিএনপির সভাপতি জহির উদ্দিন হারুনকে। ২০১৪ সালে মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে তিনি বিএনপি থেকে ভোট করলেও কারচুপির অভিযোগে ভোটের দিন দুপুর ১২টার পর তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। তিনি ও একক প্রার্থী হওয়ায় দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের কাছে গিয়ে ধানের শীষে ভোট চাচ্ছেন।  বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের জন্য প্রশাসনের নিকট দাবি জানান। বিশেষ করে গত ১২ ডিসেম্বর তার উঠান বৈঠকে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে না হয় তার জন্য নানান ধরনের চক্রান্ত চলছে। ইতোমধ্যে জাহির উদ্দিন হারুনের পক্ষে ভোট চেয়ে মাঠে গণসংযোগ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান, বরকত উল্যা বুলুর সহধর্মী শামিমা বরকত লাকীসহ দলের নেতা-কর্মীরা। বড় দুই দলের প্রার্থীর পাশাপাশি ইসলামী শাসনতন্ত্র বাংলাদেশের প্রার্থী জাকির হোসেন জাসেদ (হাতপাখা) প্রতীক নিয়ে ভোটারদের কাছে গিয়ে নিজের জন্য ভোট চাইছেন। তিন মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি ৯টি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত কাউন্সিলর ১৬ এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৭ জন ভোট করছেন। তারাও যাচ্ছেন ভোটারদের কাছে। নিজের কর্মজীবন তুলে ধরে আরও বেশি করে সেবার জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন।পৌর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডের অলি-গলি-চায়ের দোকানে সবার আলোচনার বিষয় নির্বাচন। প্রার্থীদের নিয়ে চুলছেড়া বিশ্লেষণ চলছে। বিভিন্ন প্রতিশ্রুতিকে সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়ন করতে পারবেন তার হিসাব করছেন। নাগরিক সুবিধা বলতে গ্যাস, বিদ্যুৎ, ড্রেনেজ, ডাস্টবিন, যানজট, আইনশৃঙ্খলা, বিনোদন ব্যবস্থাসহ মাদক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে যে পারবেন তাকে তারাই ভোট দিবেন। এ পৌরসভায় ৪৬ হাজার ৫৮৩ জন ভোটার রয়েছে।  নোয়াখালী জেলা সিনিয়র নির্বাচন ও চৌমুহনী পৌরসভা রিটানিং অফিসার মোহাম্মদ মনির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এ মুহূর্তে নির্বাচনী আচরণবিধি যাতে কেউ লঙ্ঘন না করে সেদিকের খেয়ালের পাশাপাশি অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। মিজানুর রহমান/এসএস/পিআর

Advertisement