গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কয়েকটি গ্রামে ‘অচেনা’ প্রাণীর আতংকে দিন কাটছে মানুষের। এরই মধ্যে সে প্রাণীর আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম ফেরদৌস। আহত হয়েছেন স্কুলছাত্র, শিশু ও বৃদ্ধসহ প্রায় ২০ জন। প্রাণীটির ভয়ে স্কুলে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
এলাকাবাসী প্রাণীটিকে ‘অচেনা’ বললেও জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের প্রাথমিক ধারণা- এটি পাগলা শিয়াল। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে ‘অচেনা’ সেই প্রাণীর আতংকে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন উপজেলার হরিনাথপুর, তালুকজামিরা, তালুক কেওয়া পাড়াসহ আশেপাশের প্রায় ১০ গ্রামের সর্বস্তরের মানুষ।
তালুক কেওড়াবাড়ী, তালুকজামিরা, মরা দাতেয়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, এলাকাবাসীর মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। কয়েকদিন আগে বাড়ির পাশে প্রাণীটির হামলার শিকার হয় সাত বছর বয়সী রাব্বী নামে এক শিশু। প্রাণীটি রাব্বীর মুখ-বুকসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে থাবা দেয়। তার চিৎকার শুনে মা এগিয়ে আসলে তাকেও আক্রমণ করে প্রাণীটি। শেষ পর্যন্ত আরেক প্রতিবেশীর লাঠির তাড়া খেয়ে পালিয়ে যায় অদ্ভুত আকৃতির প্রাণীটি।
Advertisement
আহত শিশুর মা রুমি বেগম বলেন, দু’দিন আগে বাড়ির আঙিনায় খেলছিল রাব্বী। হঠাৎ শিয়ালের মতো দেখতে একটি প্রাণী রাব্বীকে থাবা মারে। আমি এগিয়ে গেলে আমার ওপরও ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রাণীটির সামনের পা দুটি ছোট। মাথা ও লেজ আকারে বড়।
একই গ্রামের কৃষক আব্দুল মালিক বলেন, গত দেড় মাসে এই গ্রামের নারী-শিশু-বৃদ্ধসহ প্রায় ২০ জন প্রাণীটির হামলার শিকার হয়েছে। সুযোগ পেলেই এলাকার ঝোঁপ-ঝাড়, জঙ্গল, ধানের জমি থেকে বেরিয়ে এসে আক্রমণ করছে প্রাণীটি। রক্ষা পায়নি গবাদি পশুও।
তালুক জামিরাগ্রামের সেফালী বেগম বলেন, এই প্রাণীটির ভয়ে স্কুলে যেতে চায় না শিশু শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকরাও ছেলে মেয়েদের স্কুলে যেতে দিচ্ছেন না। এতে লেখাপড়া ব্যহত হচ্ছে। আমরা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
তালুকজামিরা গ্রামের আরেক বাসিন্দা মোনায়ারুল ইসলাম বলেন, মানুষ কিংবা গবাদি পশু পেলেই প্রাণীটি আক্রমণ করে পেছন থেকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাফ দিয়ে মানুষের চোখে মুখে আঘাত করে। অদ্ভুত এই প্রাণীর ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারছেন না স্থানীয়রা। ফসলের মাঠ বা আশেপাশে কোথাও গেলে লাঠি হাতে দলবদ্ধ হয়ে চলাচল করছেন তারা। গ্রামবাসী রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।
Advertisement
হরিনাথপুর ইউনিয়নের সদস্য রুবেল মিয়া বলেন, ঘটনার শুরু দেড় মাস আগে। মাঠে ঘাস কাটতে যান তালুকজামিরা গ্রামের কৃষক স্থানীয় মসজিদের ইমাম ফেরদৌস। হঠাৎ তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অদ্ভুত প্রাণীটি। হাতের কাস্তে দিয়ে আঘাত করেও রক্ষা পাননি তিনি। বিষাক্ত থাবায় নাক-মুখ রক্তাক্ত করে পালিয়ে যায় প্রাণীটি। পরে তাকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় জেলা সদর হাসপাতালে। সেখান থেকে পাঠানো হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পর জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ১৮ দিন পর মারা যান ফেরদৌস।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা পলাশবাড়ী হরিনাবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ রাকিব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সবাই সচেতন থাকলে প্রাণীটির আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করা সম্ভব। আমরা সাধারণ মানুষদের মধ্যে সচেতনা সৃষ্টি করছি। প্রাণীটি দেখা মাত্রই পুলিশকে খবর দিতে বলেছি।
গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহফুজার রহমান সরকার জাগো নিউজকে বলেন, প্রাণীটি শনাক্ত করতে আমাদের কর্মীরা মাঠে কাজ করছেন। আসলে প্রাণীটি সবসময় বের হয় না বলেই আমরা শনাক্ত করতে পারছি না। এটি শিয়াল নাকি কুকুর বা ভিন্ন প্রাণী তা শনাক্ত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক আব্দুল মতিন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানিয়ে ঘটনাস্থলে যেতে বলেছি। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কোনো বিশেষজ্ঞ টিম লাগলে আমরা আনবো। গ্রাম পুলিশসহ স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
জাহিদ খন্দকার/ইউএইচ/জিকেএস