সঞ্জয় মুখার্জী
Advertisement
মূল গল্প: একবার খরগোশ ও কাছিমের মধ্যে একটি দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলো। দৌড় শুরু হলে স্বাভাবিকভাবেই খরগোশ খুব দ্রুত অনেক দূরে চলে গেল। মাঝপথে গিয়ে খরগোশ দেখলো কাছিম এখনো তার থেকে অনেক দূরে রয়েছে। সে ভাবলো এই সুযোগে তাহলে একটু জিরিয়ে নেওয়া যাক। যেই ভাবা সেই কাজ।
একটি গাছের ছায়ায় গিয়ে আরাম করে বসে পড়লো। এভাবে বসে থাকতে থাকতে কখন যে সে ঘুমিয়ে পড়লো, তা টেরই পেল না। ঘুম থেকে উঠে খরগোশ প্রাণপণে দৌড়ানো শুরু করলো। কিন্তু ততক্ষণে কাছিম একেবারে গন্তব্যের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। ফলে খরগোশ আর প্রতিযোগিতায় জিততে পারলো না।
প্রকৃত বচন: একাগ্র ব্যক্তি ধীরগতির হলেও তার জয় নিশ্চিত।
Advertisement
গল্পের ডিজিটাল রূপ: এক খরগোশ আর এক কাছিম একদিন মিরপুর ১০ নম্বরে এক কফিশপে বসে আড্ডা মারছিল। আড্ডার এক পর্যায়ে খরগোশ কাছিমের ধীরে চলা নিয়ে ঠাট্টা মশকরা করতে লাগলো। কাছিম অনেকক্ষণ ধরে মনে মনে ক্ষেপতে থাকলেও মুখে কিছু বলছিল না। কিন্তু খরগোশের টিটকারি ক্রমাগত বেড়ে চলায় সে আর সইতে পারলো না।
কাছিম খরগোশকে চ্যালেঞ্জ করে বলে উঠলো, ঠিক আছে চল দেখি কে আগে এখান থেকে মতিঝিল পৌঁছায়। যে আগে পৌঁছাবে তাকে স্টার সিনেপ্লেক্সের প্লাটিনাম টিকেটে ‘ফাস্ট আন্ড ফিউরিয়াস’ সিনেমাটি দেখাতে হবে। কাছিমের কথা শুনে খরগোশটি হাসতে হাসতে লুটোপুটি খেতে থাকলো। আর বললো—খরগোশ: কী, কী বললি? তুই আমার সঙ্গে আগে পৌঁছানোর প্রতিযোগিতা করবি?কাছিম: কেন, তোর সাহসে কুলাচ্ছে না নাকি?খরগোশ: (হেসে গড়াগড়ি খেতে খেতে) হ্যাঁ বন্ধু অনেক ভয় পেয়ে গেছি। আচ্ছা, নে ঠিক আছে। এক কাজ কর আমাকে তুই টিকিট কেনার টাকাটা দে। দেখ আমি বসুন্ধরায় গিয়ে টিকিট কেটে এনেও তোর আগে মতিঝিল পৌঁছে যাবো। কাছিম: এখনই টিকিট কিনতে হবে না। আগে প্রতিযোগিতায় জিতে দেখা। তোর আলসেমির ইতিহাস সকলেরই জানা আছে বুঝলি।খরগোশ: (একটু সিরিয়াস হয়ে) কী বললি? আচ্ছা নে, চল এখন থেকে প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে। দেখি কে আগে মতিঝিলের শাপলা চত্বরের শাপলা ফুলটার নিচে গিয়ে দাঁড়াতে পারে।কাছিম: চল।
কফিশপ থেকে বের হতে হতে খরগোশটি তার স্মার্টফোনের মাধ্যমে উবারে কল করে একটি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির এয়ার কন্ডিশনযুক্ত কার ডাকলো। ভাড়া দেখালো তিনশ টাকা। খরগোশ ভাবলো যায় যাক তিনশ টাকা। প্রতিযোগিতা জিতে সিনেমার টিকিট দিয়ে টাকা উশুল করা যাবে। এই বলে খরগোশ গাড়ির ভেতর ঢুকে জানালা দিয়ে কাছিম কি করে তা দেখার জন্য উঁকি দিতেই দেখতে পেল, কাছিম মিরপুর ১০ নম্বরে মেট্রোরেলের যে স্টেশনটি আছে সেদিকে হাঁটা দিচ্ছে। কাছিম ট্রেনে চড়ে মতিঝিল যাওয়ার জন্য রওনা দিচ্ছে দেখে খরগোশ আবারও হো হো করে হেসে উঠলো।
গাড়ির জানালা খুলে কাছিমকে বলে উঠলো, ‘ওহে ধীরগতির বোকা কাছিম, ট্রেনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আজ এখানেই রাতটা পার করে দিস না। পারলে টিকিটটা কেটে এনে রাখ। তাতে তোর কাজটা এগুবে।’ বলেই সে মুখ দিয়ে শব্দ করে উঠলো, কু ঝিকঝিকঝিকঝিকঝিকঝিক।
Advertisement
কাছিম মুখে কিছু না বলে আড়চোখে খরগোশের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে মেট্রোরেলের স্টেশনের দিকে এগুতে থাকলো।
খরগোশটি কানে হেডফোন লাগিয়ে গাড়িতে এসির হাওয়া খেতে খেতে মতিঝিলের উদ্দেশ্যে যেতে লাগলো। যাওয়ার সময় পথে বাংলা মোটর ক্রস করার সময় সে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের দিকে তাকিয়ে মনে মনে খুশি হয়ে উঠলো। আহ, কালই ওখানে গিয়ে ফ্রি ফ্রি প্লাটিনাম টিকিটে সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখা হবে।
এ কথা ভাবতে ভাবতেই যেই না খরগোশের গাড়ি শাহবাগ চলে এলো, অমনি সে পড়লো মস্ত বড় এক ট্র্যাফিক জ্যামে। দশ মিনিট, বিশ মিনিট, ত্রিশ মিনিট করে করে এক ঘণ্টা ধরে সে একই জায়গায় বসে রইলো। কিন্তু জ্যাম আর ছাড়ে না। বিরক্তি আর টেনশনে খরগোশ কানের হেডফোন ছুঁড়ে ফেললো আর নিজের মাথার চুল ছিঁড়তে লাগলো।
এমন সময় খরগোশ দেখতে পেল তার মাথার উপর দিয়ে কু ঝিকঝিক শব্দ করতে করতে মেট্রোরেল চলে যাচ্ছে। ভালো করে তাকাতেই দেখতে পেল ট্রেনের একটি কামড়ায় জানালার পাশে কাছিমকে দেখা যাচ্ছে। কাছিমটি যেন তাকে ভেঙচি কাটছে আর মুখ দিয়ে শব্দ করছে কু ঝিকঝিক।
ডিজিটাল বচন: গণপরিবহন ব্যবহারের সুফল অনেক।
ছবি: সংগৃহীত
প্রিয় পাঠক, আপনিও অংশ নিতে পারেন আমাদের এ আয়োজনে। আপনার মজার (রম্য) গল্পটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়। লেখা মনোনীত হলেই যে কোনো শুক্রবার প্রকাশিত হবে।
কেএসকে/এসইউ/জিকেএস