সীমা খানম ৩৮তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে উত্তীর্ণ হন। তার জন্ম ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলায়। বাবা সরোয়ার শেখ কৃষক, মা রওশনারা বেগম একজন সরকারি চাকরিজীবী। সীমা ২০০৯ সালে ফরিদপুরের হাসামদিয়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১১ সালে সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
Advertisement
বর্তমানে তিনি সহকারী পুলিশ সুপার পদে ঢাকা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে আছেন। সম্প্রতি তার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া, ভবিষ্যৎ স্বপ্ন ও সফলতার গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—
জাগো নিউজ: আপনার শৈশবের গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই—সীমা খানম: ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়াটা আমার একটা নেশা ছিল। অসুস্থতা ছাড়া কখনো স্কুলে অনুপস্থিত থাকিনি। বরাবরই পড়াশোনায় ভালো ছিলাম। বেশিরভাগ সময়ে ক্লাসের ফার্স্ট হতাম। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াকালীন একদিন ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছিল। তখন আব্বু-আম্মু স্কুলে যেতে বারণ করেছিলেন। কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা স্কুলে যাবই যাব। অবশেষে আব্বু আমাকে তার ঘাড়ে বসিয়ে মাথার উপর ছাতা ধরে স্কুলে নিয়ে যান। কিন্তু স্কুলে গিয়ে দেখি আমি ছাড়া আমার ক্লাসের আর কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত নেই। কেউই বৃষ্টি উপেক্ষা করে স্কুল আসেনি। নিয়মিত স্কুলে যাওয়া আর ক্লাসের প্রথম বেঞ্চে বসা আমার দৈনন্দিন রুটিন ছিল। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও এ ধারা অব্যাহত ছিল। জাগো নিউজ: পড়াশোনায় কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?সীমা খানম: আমার পড়াশোনায় তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না বললেই চলে। আমার আব্বু-আম্মু ছোটবেলা থেকেই বড় অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। আম্মু কোনোদিনই ঘরের কোনো কাজ করতে বলতেন না। শুধু পড়াশোনা করতে বলতেন। তাদের কাছ থেকে সব সময় সাপোর্ট পেয়েছি।
জাগো নিউজ: বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে?সীমা খানম: বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বিভিন্ন সেমিনার ও অনুষ্ঠানে বিসিএস ক্যাডাররা আসতেন। সেখানে তারা বিসিএস নিয়ে খুটিনাটি আলোচনা করতেন। এ আলোচনা থেকে বিসিএস সম্পর্কে একটা পূর্ণ ধারণা হলো। যখন থেকে আমি বুঝতে পারলাম, বিসিএস হলো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক চাকরি; তখন থেকেই মূলত বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি।
Advertisement
জাগো নিউজ: বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, প্রস্তুতি কীভাবে নিয়েছেন?সীমা খানম: বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ বিভাগে প্রথম থেকেই আমার রেজাল্ট ভালো ছিল। অনার্সে ফার্স্ট ক্লাসে তৃতীয় হয়েছিলাম। প্রথম থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার তেমন ইচ্ছা ছিল না। তাই বিসিএস ক্যাডার হওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম। আমার কাছের এক বন্ধুর বিসিএস সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা ছিল। সে নিজে প্রথম বিসিএসেই ক্যাডার হয়ে যায়। সে ছিল আমার বিসিএস যাত্রার মেন্টর। তার পরামর্শ অনুযায়ী বিসিএস যাত্রা শুরু করি এবং তার গাইডলাইন পুরোপুরি ফলো করি। বন্ধুর পরামর্শে প্রথম গল্প ও উপন্যাস পড়া শুরু করি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই পড়েছি কমপক্ষে ১৫-২০টি। নিয়মিত পত্রিকা পড়ার পাশাপাশি বিবিসি মিডিয়ার খবর শুনতাম। পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতাম। আমার হলের প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানে ভলান্টিয়ার হতাম। স্পেড টার্ম কার্ড খেলায় একবার হল চ্যাম্পিয়ন হয়েছি এবং রিলে দৌড়ে আমার টিম রানার্সআপ হয়েছে। আমার বিসিএস ক্যাডার জার্নিটা অনেকের তুলনায় সহজ ছিল। কারণ আমি নোট, বই, প্রয়োজনীয় তথ্য সবকিছু রেডিমেট হাতের নাগালে গোছানো পেতাম। বিসিএস প্রস্তুতির সময় আমি রুটিন মেনে চলার চেষ্টা করতাম। নিয়মিত কোচিং সেন্টারে পরীক্ষা দেওয়া ও ভুল-ত্রুটিগুলো সংশোধনের উপর জোর দিতাম। এছাড়া হাতের লেখা মোটামুটি সুন্দর হওয়ায় রিটেন পরীক্ষায় বেশ উৎসাহিত ছিলাম। আমি বিভিন্ন চার্ট, ম্যাপ, ডেটা, কোটেশন ইত্যাদি সহজেই মনে রাখতে পারতাম। রিটেনের ক্ষেত্রে এগুলো বেশ কাজে লাগছে। বিসিএস ভাইবায়ও আমার পারফরম্যান্স খুব ভালো ছিল। সব মিলিয়ে আমার বিসিএস যাত্রা ছিল স্বপ্নের মতো। যেখানে আমি সব সময় চেষ্টা করতাম সময়ের সদ্ব্যবহার করতে। আমার স্বামী বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে কর্মরত আছেন।
জাগো নিউজ: পর্দার আড়াল থেকে কেউ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে?সীমা খানম: আমার বাবা-মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি ছিল। তাদের দোয়া ও সমর্থন ছিল বলেই আমি বিসিএস ক্যাডার হতে পেরেছি।
জাগো নিউজ: নতুন যারা বিসিএসে আসতে চান, তাদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?সীমা খানম: বিসিএসের অপর নাম পরিশ্রম, স্রষ্টা পরিশ্রমীদের পাশে থাকেন। যারা পরিশ্রম করতে চান, তাদের জন্য বিসিএসের দরজা খোলা। ধৈর্য নিয়ে নিয়মিত অধ্যবসায় চালিয়ে গেলে সফলতা আসবেই।
জাগো নিউজ: একজন পুলিশ হিসেবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?সীমা খানম: ভবিষ্যতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই। পাশাপাশি একজন আদর্শ পুলিশ অফিসার হয়ে দেশ ও সমাজের বিশেষ করে নারীদের উন্নয়নে অবদান রাখতে চাই।
Advertisement
এসইউ/জিকেএস