জয়পুরহাটের কালাইয়ে মৌসুমের শুরুতে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের হিমাগারে রাখা সংরক্ষিত আলু গোপনে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এম ইসরাত হিমাগারের ব্যবস্থাপক রায়হান আলীর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়েছে। সংরক্ষিত আলু ফেরত পেতে বুধবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে হিমাগারের মূল ফটকের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন ব্যবসায়ী ও কৃষকরা।
Advertisement
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মৌসুমের শুরুতে উপজেলার সরাইল গ্রামের ব্যবসায়ী রেজাউল ফকির, আওড়া গ্রামের কৃষক মেজবাহুল ইসলাম, বিনইল গ্রামের কৃষক তোতা মিয়াসহ এলাকার বিভিন্ন গ্রামের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু কিনে লাভের আশায় কালাই পৌরশহর এলাকায় অবস্থিত এম ইসরাত হিমাগারে সংরক্ষণ করেন। বাজারে আলুর দাম কমে যাওয়ায় তারা সংরক্ষিত আলু বিক্রি করেননি। বর্তমানে আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা তাদের সংরক্ষিত আলু বিক্রির জন্য হিমাগারে যান। তবে সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারেন হিমাগারের ব্যবস্থাপক রায়হান আলী সংরক্ষিত আলু তাদের না জানিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। এছাড়া হিমাগারের শ্রমিকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ওই কর্মকর্তা সংরক্ষিত ৭০ কেজির বস্তা খুলে প্রত্যক বস্তা থেকে ২৫ থেকে ৩০ কেজি করে আলু বের করে নিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সকালে এসব বিষয় নিয়ে আলুর মালিকরা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র হিমাগার কর্তৃপক্ষ এবং আলুর মালিকরা কালাই থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন। এরই জের ধরে বুধবার দুপুরে জয়পুরহাট-বগুড়া সড়কের কালাই পৌরশহরে অবস্থিত এম ইসরাত হিমাগারের ভেতরে এবং সামনে ভুক্তভোগী আলু ব্যবসায়ী ও কৃষকরা তাদের আলু ফেরত পাওয়ার জন্য বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।
সড়াইল গ্রামের ব্যবসায়ী রেজাউল ফকির বলেন, মৌসুমের শুরুতে এম ইসরাত হিমাগারে ৭০ কেজি ওজনের মোট ৩৭৭০ বস্তা বিভিন্ন জাতের আলু সংরক্ষণ করেছিলাম। আমাকে না জানিয়ে এর মধ্যে ২১৭২ বস্তা আলু হিমাগারের ব্যবস্থাপক রায়হান আলী বিক্রি করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে গেলে উল্টো সে আমাকে হুমকি দিয়েছে। আলু ফেরত পেতে আমি থানায় অভিযোগ করেছি।
Advertisement
উপজেলার বিনইল গ্রামের আরেক ব্যবসায়ী তোতা মিয়া বলেন, ওই হিমাগারে আমি ১১৭০ বস্তা বীজ আলু রেখেছি। সামনে আলু রোপণের সময় আসছে। তাই আলু ওঠাতে গিয়ে দেখি ব্যবস্থাপক রায়হান আলী আমার সব আলু বিক্রি করে দিয়েছে। আলু ফেরত পেতে আমিও থানায় অভিযোগ করেছি। আলু ফেরত না পেলে কী রোপণ করবো সেই চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ী ও কালাই পৌরসভার কাউন্সিলর রেজাউল ইসলাম বলেন, এর আগেও ওই ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। এটা নতুন কিছু নয়। তিনি শ্রমিকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সংরক্ষিত আলুর বস্তা খুলে বের এভাবেই বিক্রি করে আসছেন। তিনি এর ভাগ স্থানীয় লোকজন এবং শ্রমিকদের দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন। ওদের ভয়ে কেউ কথা বলতে পারেন না। এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।
অভিযুক্ত এম ইসরাত হিমাগারের ব্যবস্থাপক রায়হান আলী জাগো নিউজকে বলেন, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা। অনুমতি ও হিমাগারের প্যাডে সই নিয়েই তাদের সংরক্ষিত আলু বিক্রি করা হয়েছে। আলু বিক্রির ডকুমেন্টও হিমাগারে সংরক্ষণ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বস্তাতে আলু কমে যাওয়ার বিষয়ে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা আসলে সঠিক নয়। বস্তা ছিঁড়ে এবং ফেটে যাওয়ার কারণে আলু পড়ে গেছে। আবার কিছু বস্তাতে আলু নষ্ট হয়ে গেছে। যাদের বস্তাতে আলু কমে গেছে তাদের ক্ষতিপূরণও দেওয়া হচ্ছে। তারপরও তারা হিমাগারের লোকজনদের মারপিট করেছেন। এ বিষয়ে থানায় অবগত করা হয়েছে।
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মালিক বলেন, ব্যবসায়ী ও কৃষকরা যখন বিক্ষোভ করেন, তখন পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। উভয় পক্ষ লিখিত অভিযোগ করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Advertisement
রাশেদুজ্জামান/এসআর/এএসএম