ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গিকারে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। তবে তাদের নির্বাচনী ইশতিহারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছিল ৭১`র মুক্তিযুদ্ধে ‘মানবতাবিরোধীদের বিচার`। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের মাটিতে মানবতাবিরোধীদের ফাঁসি দেখার স্বপ্ন দেখতে থাকেন আপামর জনগণ। সাড়া দেয় যুব সমাজও। দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে জয়ী হয়ে শপথ পাঠ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।দেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণে লেগে যায় ৫ বছর। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসলেও ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে নতুন মোড় পায় মানবতাবিরোধীদের বিচার প্রক্রিয়া। পরের বছর ২০১৪ সালেই ফাঁসির আদেশ দেয়া আসে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী এবং আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে। এ বছর কোনো ফাঁসির রায় কার্যকর না হলেও ২০১৫ সালের এপ্রিলে জামায়াত নেতা কামারুজ্জামান এবং নভেম্বরে একসঙ্গে সাকা-মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। এক বছরে (২০১৫ সাল) মানবতাবিরোধী অপরাধে তিনটি ফাঁসির রায় কার্যকরে মাইলফলক সৃষ্টি করেছে।ফাঁসির দড়িতে আলবদর কমান্ডার কামারুজ্জামানএ বছরের ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টায় কার্যকর করা হয় আলবদর কমান্ডার মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ৭১`র মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা-গণহত্যা, ব্যাপক নিধনযজ্ঞ, দেশান্তর, নির্যাতন, ধর্ষণ, ধর্মগত ও রাজনৈতিক কারণে নির্যাতন করে হত্যা, ষড়যন্ত্রের মতো বিভিন্ন ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত ছিলো। এগুলোর মধ্যে শেরপুরের সোহাগপুরে গণহত্যা ও ধর্ষণের দায়ে ট্রাইব্যুনাল থেকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের রায় দেন।ট্রাইব্যুনালের পর উচ্চ আদালতও ফাঁসির রায় বহাল রাখেন। অবশেষে রিভিউ আবেদন খারিজের পর ১১ এপ্রিল শনিবার রাতে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি কার্যকর করার পর শেরপুর সদর উপজেলার মুদীপাড়া গ্রামে তাকে দাফন করা হয়।চট্টগ্রামের যুদ্ধাপরাধের হোতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী২০১৪ সালে ট্রাইব্যুনাল থেকে ফাঁসির রায় আসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে। বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সময় নানা ধরণের অদ্ভুত কাজ আর আদালতে কটূক্তি করায় সবসময়ই আলোচনায় ছিলো সাকা চৌধুরী।ট্রাইব্যুনালের রায়ে বিরুদ্ধে আপিল করলে উচ্চ আদালত থেকেও রেহাই আসেনি। মুক্তিযুদ্ধকালে চট্টগ্রামে নজিরবিহীন নিষ্ঠুরতার জন্য ‘সাকা চৌধুরী কোনো উদারতা পাওয়ার যোগ্য নন’ বলে মন্তব্য করেছিলেন উচ্চ আদালত। চূড়ান্ত রায় ও রিভিউয়েও বহাল থাকে ফাঁসির রায়। অবশেষে গত ২২ নভেম্বর রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে সাকার ফাঁসি কার্যকর হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তায় চট্টগ্রামে দাফন করা হয় সাকার মরদেহ। আলবদর বাহিনীর প্রধান মুজাহিদজামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল হোতা। ২০১৪ সালে ট্রাইব্যুনালে ফাঁসির রায়ের পর আপিল করেন উচ্চ আদালতে। ৬৮ বছর বয়সী এই মানবতাবিরোধীর ফাঁসির রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। রায়ের মন্তব্যে আপিল বিভাগ মন্তব্য করে ‘এ ধরনের নিষ্ঠুরতার প্রমাণ পাওয়ার পর অপরাধী সর্বোচ্চ দণ্ড না পেলে তা হবে ন্যায়বিচারের পরিহাস’।ফাঁসির বিরুদ্ধে রিভিউ করলে সেই আবেদনেও নাকচ করে দেয় আদালত। পরে নভেম্বরের ২২ তারিখ সাকা চৌধুরীর পাশে একই মঞ্চে কার্যকর করা হয় মুজাহিদের ফাঁসি। রচিত হয় একটি নতুন ইতিহাস।এআর/আরএস
Advertisement