মতামত

সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার দিন

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। ঈদ অর্থ আনন্দ, আর ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) অর্থ-নবী (স.) এর জন্ম বা জন্মোৎসব। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব আল্লাহর প্রিয় হাবিব হযরত মুহাম্মদ (স.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন। চান্দ্রমাস রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ সোমবার সুবেহ সাদিকে মা আমিনার কোল আলোকিত করে আইয়ামে জাহেলিয়াতের ঘোর অমানিশা ভেদ করে সত্য, ন্যায় ও একত্ববাদের আলোকবর্তিকা হয়ে পৃথিবীতে আসেন খাতেমুন্নাবিয়্যান (স.) নবী করীমের (সা.) ওফাত দিবসও এই ১২ রবিউল আউয়াল। মুহাম্মদ (স.) কেবল মুসলমানদের নবী নন। তিনি কেবল আরবী ভাষা-ভাষীদের নবী নন। শুধু আরবদের নবী নন বরং পৃথিবীর সবার ও সকল ভাষাভাষীর জন্য সর্বকালের জন্য তিনি নবী হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। মানবিক প্রবৃত্তির সবকিছু মুহাম্মদ (স.) এর মধ্যে ছিল। যখন তাঁর বয়স ৪০ বছর পূর্ণ হয় তখন তিনি ওয়াহির মাধ্যমে `নবুওয়াত` প্রাপ্ত হন। এরপর হিরা থেকে ফিরে এসে সত্য বাণীর ঘোষণা করেন। হিজরত পূর্ববর্তী মক্কার ১৩ বছরে নানাভাবে অত্যাচারে নির্যাতনে জর্জরিত করা হয়েছিল। তিনি এর পর হিজরত করে মদীনায় চলে যান। সেখানে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রের কল্যাণে তিনি সব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি সংবিধান প্রণয়ন করেন। যাকে `মদীনার সনদ` বলা হয়। মদীনার মুসলমান, ইহুদী, খ্রীষ্টান পৌত্তলিক সবাই সেখানে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে থাকেন। এ কারণে সমাজে প্রবাহিত হল শান্তির ফল্গুধারা। হজরত মুহাম্মদ (স.) ছিলেন বহু  গুণে গুণান্বিত।  দার্শনিক, বাগ্মী, ধর্ম প্রচারক, আইন প্রণেতা, যোদ্ধা, আদর্শ বিজেতা, মানবিক রীতি-নীতির প্রবর্তনকারী, ধর্মীয় সাম্রাজ্য ও জাগতিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। তিনি বিনম্র তবু নির্ভীক, শিষ্ট তবু সাহসী, সন্তান বৎসল এবং বিজ্ঞজন পরিবৃত। তিনি সর্বাধিক সম্মানিত, মানব সমাজে তিনি সব চেয়ে উন্নত, সর্বদাই সত্যবাদী, প্রেমময় স্বামী, বন্ধুত্বে অবিচল এবং অন্যের প্রতি ভ্রাতৃসুলভ, দয়ার্দ্র, অতিথিপরায়ণ, উদার এবং নিজের জন্য সর্বদাই মিতব্যয়ী। কঠিন তিনি মিথ্যা শপথের বিরুদ্ধে, ব্যভিচারীর বিরুদ্ধে। খুনী, কুৎসাকারী, অর্থলোভী, মিথ্যা সাক্ষ্যদাতাদের তিনি প্রতিপক্ষ। ধৈর্যে, বদান্যতায়, দয়ায়, পরোপকারে, কৃতজ্ঞতায়, পিতা-মাতা গুরুজনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে এবং এক মহান ধর্ম প্রচারক তিনি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘অমা আরসালনাকা ইল্লা রহমাতুল্লিল আলামিন` অর্থাৎ আপনাকে প্রেরণ করা হয়েছে সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এখনো অনেক মানুষই অধিকার বঞ্চিত। বাড়ছে বৈষম্য। ধর্মীয় উগ্রপন্থার উত্থান ঘটছে। এ  নিয়ে মুসলিম বিশ্ব সবচেয়ে বিপদে। অথচ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.) ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির করতে নিষেধ করেছেন। মহানবীর আদর্শ ধারণ করে সত্য ন্যায় ও কল্যাণের পথে চলাই হোক আমাদের আদর্শ। আজকের দিনে এই শপথই নিতে হবে আমাদের।এইচআর/পিআর

Advertisement