জাগো জবস

সফল নারী উদ্যোক্তা আফরিন আনিস

আফরিন আনিস রহমানের জীবনটা ছিল বরাবরই ব্যতিক্রম। একজন পাবলিক ফিগার হিসেবে আলোচনা, সমালোচনার বাইরে গিয়ে তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আদর্শ হিসেবে ফলো করেন ১৫ লাখ মানুষ। কিন্তু সবাই পেছনের গল্পটা জানেন না। পড়াশোনার মাঝপথে ২০১৩ সালে যখন অনলাইন ব্যবসার জগতে গুটিকয়েক নাম; তখনই ৬০০০ টাকার পুঁজি নিয়ে শুরু করলেন স্মার্ট শপিং বিডির যাত্রা।

Advertisement

এক বছরের মাথায় ২০১৪ সালে খুলে ফেললেন তাদের নিজস্ব অফিস। যেখানে প্রথমবারের মতো আমদানিকৃত মেকআপ পণ্য টেস্টার পদ্ধতিতে যাচাই-বাছাই করে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলো ক্রেতাদের। অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে শুরু হলো পুরো ঢাকা শহরে ক্যাশঅন ডেলিভারিতে মেকআপ সামগ্রী বিক্রি। ২০১৫ সালে স্মার্ট শপিং বিডির প্রথম আউটলেট দেন মহাখালীতে। তুমুল সাড়া এবং অনলাইনে কাস্টমারদের মন জয় করে নিতে সময় লাগেনি।

তার ফেসবুক ব্লগ পেজ আফরিন আনিস রহমান। শুরু করলেন আন্তর্জাতিক মেকআপ আর্টিস্টদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ। মেকআপ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করতে করতে হয়ে উঠলেন প্রশিক্ষক। ২০১৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম ফেসবুক লাইভ অপশনকে কাজে লাগিয়ে বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন আফরিন। লাইভ করেও যে অর্থ উপার্জন করা যায়, ঘরে বসেই পণ্যের প্রচার, বিক্রি নিয়ে প্রথম বিপ্লব ঘটে এসময়। যার মাধ্যমে আজ অসংখ্য নারী ঘরে বসে সাবলম্বী হয়ে উঠছেন।

২০১৬ সালে ধানমন্ডিতে নিলেন দ্বিতীয় আউটলেট। দুই সন্তানের মা হয়েও পুরো সময় নিজ ব্যবসা আর অন্য কাজ নিয়ে পথচলা। মাত্র ১৮ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসে স্বপ্ন, ইচ্ছা, ভবিষ্যৎকে পেছনে ফেলে শুরু করতে হয় নতুন জীবনের। বিয়ের পরেও পড়াশোনাকে অদম্য গতিতে এগিয়ে নিয়ে বরাবরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে প্রথম স্থানে নাম ছিল তার। হার না মানা আফরিন আনিস ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ বছরের রেকর্ড ভেঙে গোল্ড মেডেল পান স্নাতকোত্তর ডিগ্রিতে। এই গোল্ড মেডেল ছিল তার জীবনের নতুন অধ্যায়ের শুরু।

Advertisement

নিজের ব্যবসার তৃতীয় আউটলেট দেন যমুনা ফিউচার পার্ক এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সানমার ওশান সিটিতে। চতুর্থ আউটলেটের মাধ্যমে ব্যবসার প্রচার ও প্রসার বাড়তে থাকে। ২০১৭ সালে নতুনভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোড়ন তুললেন ব্যবসায়ী, ব্লগার, ব্র্যান্ড প্রমোটর, প্রেজেন্টার, আর্টিস্ট হিসেবে। পাশাপাশি আবার মেকআপের লাইভ করে হয়ে উঠলেন একজন ইনফ্লুয়েন্সার। আন্তর্জাতিক নানা ব্র্যান্ডের সঙ্গেও কাজ শুরু করেন এসময়।

২০১৯ সালে ৫৫ কেজি ওজন কমিয়ে আলোড়ন তুলে অর্জন করেন মিসেস বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ হিসেবে ৪র্থ স্থান। গান, নাচ, অভিনয় দিয়ে মুগ্ধ করেন দর্শকদের। তিনি অভিনয় করেন মাবরুর রাশীদ বান্নাহ পরিচালিত ‘মুগ্ধ ব্যাকরণ’, ‘আমার মিস্টার পরিষ্কার’, ‘স্টুপিডস’, ‘ব্যঞ্জনবর্ণ’ এবং ‘সুইপারম্যান’ নাটকে।

ব্যবসার পাশাপাশি আফরিন অন্যদের ব্যবসায় সহযোগিতা করেন। করোনার লকডাউনে শত শত ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাকে বিনা মূল্যে সহায়তা করেন লাইভের মাধ্যমে। ফিরিয়ে আনেন ব্যবসায়ীক ক্ষতি থেকে। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়া আফরিন আনিস এখন অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একজন সফল উদ্যোক্তা।

এসইউ/জিকেএস

Advertisement