আফগানিস্তানের সঙ্গে জিতবে না বাংলাদেশ, এটা ছিল জানা কথা। সর্বোচ্চ লক্ষ্য ছিল ড্র। হারলেও বড় ব্যবধান যাতে না হয়। কিন্তু নিজেদের প্রথম ম্যাচে ন্যুনতম প্রতিরোধই গড়তে পারলো না বাংলাদেশ। ভারতের কেরালার ত্রিবান্দ্রাম আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা সাতটায় ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে ৪-০ গোলের বড় পরাজয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের মিশন শুরু হলো মামুনুলদের। প্রথমার্ধেই ৩-০ গোলে পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ।সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আফগানিস্তান। বোঝাই যাচ্ছে, টুর্নামেন্টে তারা কতটা ফেভারিট। নিজেদের প্রথম ম্যাচে কি না আফগানদেরই মুখোমুখি বাংলাদেশ। সাফের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছাড়ার আগেই কোচ মারুফুল হক প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন শিরোপা জয়ের। তবে সেটা যে খুব কঠিন হবে, তা জানেন তিনিও। তাওপর প্রথম প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। তাদেরকে হারানো যাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মারুফুল হক বলেছিলেন, ‘আফগানদের খেলার ভিডিও অ্যানালাইসিস করেছি আমরা। তাদের কিছু দুর্বলতা বের করে নিয়ে সেই অনুযায়ী আক্রমণ সাজালে নিশ্চিত সাফল্য আসবে।’ একই সঙ্গে কোচ এটাও বলেছিলেন, ‘প্রথম ম্যাচে জিততে পারলে, শিরোপা জয়ের অর্ধেক কাজই সম্পন্ন হয়ে যাবে।’কিন্তু কোচের কথা আর বাস্তবতায় যে কতটা ফারাক তা বোঝা গেলো প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষেই। প্রথমার্ধে ৩-০ গোলে পিছিয়ে থাকার পর। ম্যাচে বাংলাদেশের ফুটবলারদের খেলা দেখেই বোঝা গেল, আফগানদের চেয়ে কত যোজন যোজন দুরে দাঁড়িয়ে তারা। ত্রিবান্দ্রাম স্টেডিয়ামে আফগানদের বিপক্ষে শুরুর স্পিরিটটা ভালোই ছিল বাংলাদেশের। মাঝ মাঠের দখল নিজেদের কাছে রেখে, আক্রমণ তৈরীর চেষ্টা করে মারুফুল হকের শিষ্যরা। কিন্তু আফগানদের পরিকল্পিত আক্রমণের মুখে সব পরিকল্পনাই ভেস্তে যায় বাংলাদেশ দলের ফুটবলারদের। বরং, আফগানিস্তানই বাধ্য করে মামুনুলদের রক্ষণাত্মক হয়ে ওঠার জন্য। এর ফলও হাতে-নাতে পেতে হলো। ম্যাচের ৩০ থেকে ৪০- এই ১০ মিনিটেই লণ্ড-ভণ্ড হয়ে যায় বাংলাদেশের রক্ষণভাগ। এই ১০ মিনিটের ব্যবধানেই ৩ গোল হজম করতে হয় সবুজ জার্সিধারীদের।আফগানদের আক্রমণের সয়লাদ ৩০ মিনিট পর্যন্ত রুখে দিতে পেরেছিল বাংলাদেশ। এরপরই ভেঙে যায় সেই বাধ। আফগানরা প্রথম গোলের দেখা পেলো তখনই। কর্ণার কিক থেকে ভেসে হাসান আমিনের কর্ণার কিক থেকে বল ভেসে আসলে প্রথমে একজন হেড করে গোলমুখে বল দেন। সেটাতেই মাথা লাগিয়ে বাংলাদেশের জালে বল জড়িয়ে দেন মাসি সাগহানি। প্রথম গোল খাওয়ার ঘোর তখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি বাংলাদেশ; কিন্তু মিনিট দুয়েক পরই ব্যবধান দ্বিগুণ করে ফেলেন আফগানিস্তানের ফয়সাল শায়েস্তেহ। বাঁ দিক থেকে হাসান আমিন একজন ডিফেন্ডারের কাঁধের ওপর দিয়ে আলতো পাস দেন। সেখান থেকেই অধিনায়ক ফয়সাল শায়েস্তেহর দুর্দান্ত চিপ। বল জড়িয়ে যায় জালে। বাংলাদেশের ডিফেন্ডারার দ্রুত ফেরালেও তা গোললাইন অতিক্রম করে যায় (২-০)।দুই মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল হজম করে তখন পুরোপুরি কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। এরপর ৮ মিনিট পরিই (৪০ মিনিটে) তৃতীয় গোল জুবায়ের আমিরির। জাজাইর চিপ থেকে দুর্দান্ত ভলিতে গোল করেন আমিরি। স্কোর তখন ৩-০। প্রথমার্ধের খেলা শেষ হয় এই ব্যবধানেই। দ্বিতীয়ার্ধে কৌশল পাল্টান কোচ মারুফুল হক। তাতে কিন্তু লাভ হয়নি। বরং ৬৯ মিনিটে উল্টো চতুর্থ গোল হজম করে মারুফুল হকের শিষ্যরা (৪-০)। আফগানদের পক্ষে খাইবার আমিনি। শেষ পর্যন্ত আফগানদের জালে একবারও বল জড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে ৪-০ গোলের বড় হারের লজ্জা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় মামুনুলদের।বি গ্রুপে বাংলাদেশের অপর দুই প্রতিপক্ষ মালদ্বীপ ও ভুটান। আগামী ২৬ ডিসেম্বর গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে মালদ্বীপের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ২৮ ডিসেম্বর শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভুটান। আইএইচএস/এমএস
Advertisement