দেশজুড়ে

আদালতে পীরের বদলে মুরিদের আত্মসমর্পণ!

কুষ্টিয়ায় হত্যা মামলায় অভিযুক্ত পীরের বদলে আরেক ব্যক্তিকে আত্মসমর্পণ করার অভিযোগ উঠেছে। মামলার সাক্ষীরা আসামিকে ভুয়া বলে শনাক্ত করলে আদালতপাড়ায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। তবে ওই ব্যক্তির পরিচয় জানা না গেলেও তিনি পীরের মুরিদ বলে ধারণা করছেন সাক্ষীরা।

Advertisement

এদিকে ভুয়া আসামির আত্মসমর্পণের বিষয়টি জানাজানি হলে মূল ঘটনা জানতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সোমবার (২৫ অক্টোবর) কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে আসামির পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন জানান। এ সময় আদালত ওই ব্যক্তির তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ৬ জুন সকালে দৌলতপুর উপজেলার চরদিয়ার কল্যাণপুর দরবার শরিফে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে রাশেদুল ইসলাম রাশেদ (২৮) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

নিহত রাশেদ দৌলতপুর উপজেলার হরিণগাছী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। তিনি ওই দরবার শরিফের মুরিদ ছিলেন এবং ঘটনার চার-পাঁচ মাস আগে থেকেই ওই দরবার শরিফে বসবাস করতেন।

Advertisement

এ ঘটনায় নিহতের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় স্থানীয় চরদিয়া পাক দরবার শরিফের কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদকে প্রধান আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডে দৌলতপুর থানা পুলিশ ছয়জনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়। তবে মামলার প্রধান আসামি তাছের আহমেদসহ তার ভক্ত অনুসারীরা আত্মগোপন করেন।

এক পর্যায়ে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলাটি দৌলতপুর থানা পুলিশের কাছ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে ১৭ অক্টোবর কুষ্টিয়ার আদালতে এক মুরিদকে দরবার শরিফের কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদ সাজিয়ে আত্মসমর্পণ করানো হয়। সম্প্রতি ‘নকল’ তাছের সাজিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করানোর বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়। আদালত পাড়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দেয়।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মো. সেলিম জাগো নিউজকে বলেন, মামলার সাক্ষীরা আদালতে আত্মসমর্পণকারী আসামি চরদিয়াড় দরবার শরিফের কথিত পীর সৈয়দ তাছের আহমেদ নন, তার বদলে অন্য কাউকে আদালতে আত্মসমর্পণ করা হয়েছে এমন দাবি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য সোমবার (২৫ অক্টোবর) আদালতে আসামির পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন জানাই।

সেলিম আরও বলেন, ওইদিন কয়েকজন সাক্ষী আদালতের সামনে ওই ব্যক্তিকে ভুয়া তাছের বলে দাবি করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আসামির তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। প্রাথমিকভাবে যে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে আদালতে যিনি তাছের হিসেবে আত্মসমর্পণ করেছেন তিনি প্রকৃতপক্ষে তাছের নন, অন্য কেউ। বুধবার থেকে তার রিমান্ড শুরু হবে। রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

Advertisement

এদিকে মামলার সাক্ষী রেজা বলেন, সোমবার তাছের নামের ওই ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আমরা সাক্ষীরা মুখ দেখে তিনি প্রকৃত তাছের নন বলে আদালতকে জানাই।

রেজার দাবি, তাছেরের ছবির জায়গায় কম্পিউটারের সাহায্যে ওই ব্যক্তির ছবি বসিয়ে নকল জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। ওই ব্যক্তি ওই দরবার শরিফেরই একজন মুরিদ।

এ ব্যাপারে কথিত পীর তাছেরের আইনজীবী আব্দুর রশিদ রানা জানান, আদালত আসামির তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। যে আত্মসমর্পণ করেছে সে আসল নাকি নকল পুলিশ রিমান্ডে তা জানা যাবে।

কুষ্টিয়া জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটার (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী জাগো নিউজকে বলেন, এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য আদালতের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে আসামি সৈয়দ তাছের আহমেদের আসল জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করার কথা বলা হয়েছে।

আল-মামুন সাগর/এসজে/এএসএম