খাতা কলমে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল। চিকিৎসক আছে পদের অর্ধেক। আর প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছেন ১ হাজার ৪০০ এর বেশি। বহির্বিভাগেও প্রতিদিন অন্তত ১ হাজার ২০০ রোগী সেবা নিচ্ছেন। শয্যা পেরিয়ে বারান্দা, প্যাসেজ, চলাচলের রাস্তা এমনকি পরিচালকের কার্যালয়ের সামনের ফ্লোরে সেবা নিচ্ছেন রোগীরা।
Advertisement
একদিকে চিকিৎসক নার্স সংকট, অন্যদিকে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল প্রশাসন। এর ওপর বাড়তি চাপ সামলাতে হচ্ছে করোনা রোগী।
এরপরও সেবার মানে দেশের অন্যতম সেরা এই হাসপাতালটির প্রাপ্তিতে যোগ হয়েছে নতুন একটি পালক। সম্প্রতি হাই পারফরমেন্স গ্রিন ফ্যাসিলিটিজ হাসপাতালের তালিকায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে যোগ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দিনরাত পরিশ্রম করে কাজের স্বীকৃতি পেয়ে খুশি থাকলেও সেবা দেওয়া নিয়ে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের প্রশাসনিক দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যমতে, খুমেক হাসপাতালে পরিচালক, উপ-পরিচালকসহ সৃজিত পদ সংখ্যা ২৮৫। পূরণ হয়েছে ১৩৫টি পদ। ফাঁকা আছে ১৫৮টি পদ। এর মধ্যে রেজিস্ট্রার ৪২টি পদের মধ্যে ১৭টি, মেডিকেল কর্মকর্তা ৮৮টি পদের মধ্যে ৫১টি, সহকারী রেজিস্ট্রার ৯১টি পদের ৪৮টি, এনেস্থেসিওলিস্ট ১৬টি পদের মধ্যে ১৪টিসহ উল্লেখযোগ্য পদ শূন্য।
Advertisement
আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মচারী সংকট অনেকাংশে সমাধান হলেও এখনো চিকিৎসক সংকট প্রকট। ধারণ ক্ষমতার প্রায় তিনগুণ রোগী ভর্তি রয়েছে হাসপাতালে। চিকিৎসা পাওয়ার আশায় হাসপাতালের বারান্দা, চিকিৎসকের চেম্বার, লিফটের সামনে থেকে শুরু করে বাথরুমের দরজা পর্যন্ত সব জায়গায় রোগী। মহানগরসহ খুলনা জেলার ৯টি উপজেলার পাশাপাশি বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুরা, নড়াইল, যশোরের রোগীরাও এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। যে কারণে রোগীর চাপ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগেও চিকিৎসক সংকট চরমে। কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার একজন শিক্ষক (চুক্তিভিত্তিক) থাকলেও হাসপাতালে তার কোনো পদচারণা নেই। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ের ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ময়নাতদন্তও। প্রতিবেদন তৈরিতে দেখা দিয়েছে ধীরগতি। ফরেনসিক বিভাগের মতো সার্জারি, অর্থপেডিক ও বার্ন ইউনিটের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোতেও চিকিৎসক সংকট প্রকট।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. রবিউল হাসান বলেন, চিকিৎসক পদায়নের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। আমরা প্রতি মাসেই চাহিদা দিয়ে মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠাই। ওপর মহলও সেটা দেখেন। আমরা চেষ্টা করছি নির্বিঘ্নে রোগীর সেবা নিশ্চিত করতে। সারাদেশের হাসপাতালগুলোর মধ্যে আমরা এখন পর্যন্ত নিজেদের সেরা অবস্থানটা ধরে রাখতে পেরেছি। তবে চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধি না পেলে সেটা ধরে রাখা আর কতদিন সম্ভব হবে সেটা ভেবে অস্থির কর্তৃপক্ষ।
আলমগীর হান্নান/এসজে/এমএস
Advertisement