জমে উঠেছে শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন। সরগরম এখন অলিগলি। কদর বেড়েছে ভোটারের। পর্যায়ক্রমে ৫টি বছর চলে গেলেও যাদের খবর কেউ রাখে না সেই প্রান্তিক মানুষগুলো এখন আদর পাচ্ছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী আর তাদের সমর্থকের উষ্ণ আলিঙ্গনে তারা আবদ্ধ হচ্ছেন। পাশাপাশি তর্ক-বিতর্ক আর আলোচনায় মুখরিত হচ্ছে চায়ের দোকান, খেলার মাঠ। গত নির্বাচনে বর্তমান মেয়র ফরিদ আহমেদ অলি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে পরাজিত করে ২য় বারের মতো নির্বাচিত হন। কিন্তু এর পরপরই তিনি অজ্ঞাত কারণে নিস্ক্রীয় হয়ে পড়েন। কিছু কিছু বিচার বৈঠকে তার উপস্থিতি চোখে পড়লেও নির্বাচনের প্রাক্কালে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে তাকে দেখা যায়নি। অবশ্য তিনি বিরোধী দলের সমর্থক হওয়ার কারণে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারছেন না বলে তার সমর্থকেরা বলছেন। ফলে এবারের নির্বাচনে তিনি উল্লেখযোগ্য প্রার্থী হলেও বৈতরণী খুব সহজে পার হতে পারবেন বলে মনে না নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা।তারপরও এবার দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করায় দল সমর্থকদের বাইরে যেসব ভোটার আছেন তাদের ভোটও সহজে তিনি পাবেন বলে মনে হচ্ছে না। পাশাপাশি তাকে আরো একটি বড় বাধা টপকাতে হবে এবার। আর সেটি হলো গত নির্বাচনগুলোতে তার এক বলিষ্ঠ কর্মী সমর্থক হাজি আ. মজিদ এবার নিজেই মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। যিনি একাধারে একাধিকবার নির্বাচিত কাউন্সিলর এবং পৌর যুবদলের সভাপতি। তিনি এবার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন এবং বিএনপি প্রার্থী ফরিদ আহমেদ অলি ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ৭নং ওয়ার্ডের বড় অংকের ভোটের অনেকটাই পাবেন বলে সাধারণ ভোটারগণ ধারণা করছেন।অনেকের মতো আ. মজিদ ৫/৬জন প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিযোগিতায়ও থাকতে পারেন। কারণ ২বারের কাউন্সিলর এবং স্থানীয় বিচার বৈঠকে বিশেষ ভূমিকা রাখার কারণে তার রয়েছে বিশেষ একটা পরিচিতি। পক্ষান্তরে এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার সুবাদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরিবর্তন করে মনোনয়ন দিয়েছে পৌর সভাপতি মো. ছালেক মিয়াকে। দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ একজন মাঠকর্মী হিসেবে তার সুনাম আছে। বিশেষ করে নিজ দল সরকারে থাকার কােণে পৌরসভার বিগত বছর দুয়েকের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তার ছিলো বিশেষ ভূমিকা। একই সঙ্গে হবিগঞ্জ সদরের এমপি আলহাজ মো. আবু জাহির এর স্নেহধন্য হওয়ার কারণে পৌর এলাকার বহু জটিল সমস্যার সমাধান করে ছালেকা মিয়া নিজেকে ভোটারদের কাছে আলাদা মাত্রায় নিয়ে গেছেন। সর্বোপরি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার কারণে এবার তিনি বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন। গত নির্বাচনেগুলোতে অনেক দলীয় ভোটার আঞ্চলিকতা তথা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে অন্য প্রার্থীকে ভোট দিলেও এবার আর তেমনটি হবে না। এর সঙ্গে নৌকা প্রতীকের কারণে পৌর এলাকার সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোট ব্যাংক ও এবার ছালেক মিয়াকে নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে অনেকের ধারণা। গত নির্বাচনে স্থানীয় এবং দলীয়ভাবে পরিচিত যেসব উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ নেতৃস্থানীয়রা সরাসরি অন্য প্রার্থীর পক্ষাবলম্বন করেছিলেন তাদের প্রায় সকলেই এবার দলীয় নির্বাচনের কারণে ছালেক মিয়ার তথা নৌকা মার্কার পক্ষে কাজ করছেন। এ সকল দিক বিবেচনায় নির্বাচন বিষয়ে অভিজ্ঞদের ধারণা ছালেক মিয়া এবার নৌকা মার্কার প্রার্থী হিসেবে অন্য প্রার্থীদের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে আছেন । তবে তার এ অগ্রগামিতার মাঝেও কিছুটা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আর তা হলো প্রত্যেকে দলীয় প্রার্থী না হলেও জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ-সভাপতি আতাউর রহমান মাসুক। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী তিনি এখন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী। অনেকে মনে করেন, মূল প্রতিযোগিতায় তিনি আসতে না পারলে ও দীর্ঘদিনের পরিচিতি আওয়ামী লীগ হওয়ার কারণে তিনি এলাকা থেকে ভোট পাবেন। এ ৪ জন প্রার্থী ছাড়াও আরও ২জন প্রার্থী এ নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এদের একজন স্থানীয় জহুর চান বিবি মহিলা কলেজের প্রভাষক নাট্যকর্মী ও সাংবাদিক মো. জালাল উদ্দিন রুমি। শিক্ষক ও ভদ্র ব্যক্তি হিসেবে সমাজে তার একটা পৃথক কদর রয়েছে। এ নির্বাচনে তার জয়ের ব্যাপারে ভোটারগণ আশাবাদী না হলেও তিনি যে সুশীল সমাজ তথা দলের বাইরে বহু ভোটারের সমর্থন লাভে সক্ষম হবেন একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। বিশেষ করে তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের মাঝে তিনি বিশেষ একটা গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন। ফলে তিনি মূল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের জন্য অনেকটাই মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন বলে কিছু কিছু সচেতন ভোটারের ধারণা। লন্ডন প্রবাসী রকিব আহমেদের নাম খুব একটা শোনা যাচ্ছে না। আত্মীয় স্বজন ছাড়া খুব বেশি ভোট পাবেন বলে মনে করেন না ভোটাররা। ন্যাশনাল পিপলস পার্টি মনোনীত একমাত্র নারী প্রার্থী খালেদা বেগম প্রতিদিনই গণসংযোগ করছেন। নারী প্রার্থী হওয়া নারী ভোটারদের বেশ সাড়া পাচ্ছেন তিনি। কামরুজ্জামান আল রিয়াদ/এসএস/এমএস
Advertisement