জয়পুরহাট পৌর নির্বাচনে জয়পুরহাট সদর, আক্কেলপুর ও কালাই পৌরসভায় মোট ৩৮টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান জয়পুরহাট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন। এসব কেন্দ্রের মধ্যে ২৮টি ঝুুঁকিপূর্ণ বলে পুলিশের গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, জয়পুরহাট পৌরসভার ২০টি কেন্দ্রের মধ্যে শহরের সবুজ নগর এলাকার শহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জয়পুরহাট সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও জয়পুরহাট সরকারি শিশু সদন ছাড়া অবশিষ্ট ১৭টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া আক্কেলপুর পৌরসভার ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে রাজকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাস্তাবসন্তপুর শাহ মখদুম (র.) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সোনামুখি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র ছাড়া অবশিষ্ট ৬টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে কালাই পৌরসভার ৯টি কেন্দ্রের মধ্যে থুপসারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কালাই ডিগ্রি কলেজ ও আঁওড়া উচ্চ বিদ্যালয় ছাড়া অবশিষ্ট ৫টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ। জয়পুরহাট পৌরসভায় (জয়পুরহাট সদর ,কালাই ও আক্কেলপুর) মোট ১৭ জন মেয়র প্রার্থী এবং ৪৮ জন সংরক্ষিত ও ১৩১ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জয়পুরহাট সদর পৌরসভায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ থেকে একক প্রার্থী থাকলেও আক্কেলপুর ও কালাই পৌরসভায় উভয় দলের দলীয় মনোনীত প্রার্থীদের পাশাপাশি নির্বাচনে লড়ছেন দল দুটি’র বিদ্রোহী প্রার্থীরাও। তবে আওয়ামী লীগ থেকে এসব বিদ্রোহীদের বহিষ্কার করা হলেও বিএনপি থেকে এ ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। জয়পুরহাট পৌরসভা : আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকের মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, বিএনপি প্রার্থী ধানের শীষের অধ্যক্ষ শামছুল হক, লাঙ্গল মার্কা নিয়ে জাতীয় পাটির আ স ম মোক্তাদির তিতাস, মশাল মার্কায় জাসদের আমেজউদ্দিন, কাস্তে মার্কায় সিপিবি’র দেওয়ান বদিউজ্জামান, জগ মার্কায় জামায়াতের হাসিবুল আলম লিটন (স্বতন্ত্র) ও নারিকেল গাছ মার্কায় খন্দকার সাজ্জাদ হোসেন ময়না (স্বতন্ত্র)। এ নিয়ে জয়পুরহাট পৌরসভায় মোট ৭ জন প্রার্থী কোমর বেঁধে কাজ করছেন নির্বাচনী মাঠে। তবে জয়পুরহাট পৌরসভায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাপার মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ব্যাপক গুঞ্জন চলছে।আক্কেলপুর পৌরসভা :আক্কেলপুর পৌরসভায় নৌকা মার্কা নিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত গোলাম মাহফুজ চৌধুরী অবসর, নারিকেল গাছ মার্কায় একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী এনায়েতুর রহমান আকন্দ স্বপন, বিএনপি মনোনীত রেজাউল করিম ধানের শীষ মার্কায়, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র আলমগীর চৌধুরী বাদশা মোবাইল ফোন মার্কায় ও আক্কেলপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আহসান কবির নান্নু দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না করে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জগ মার্কা নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন। এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহীসহ ২ জন করে প্রার্থী থাকায় কোনো দলের প্রার্থীরই একচ্ছত্র আধিপত্য লক্ষ্য করা যায়নি। কালাই পৌরসভা : কালাই পৌরসভায় খন্দকার হালিমুল আলম জন আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা মার্কায়, একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী সাজ্জাদুর রহমান কাজল মোবাইল ফোন মার্কায়, বিএনপি মনোনীত সাজ্জাদ হোসেন তালুকদার সোহেল ধানের শীষ মার্কায়, একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি গত নির্বাচনে পরাজিত মেয়র প্রার্থী আনিছুর রহমান তালুকদার জগ মার্কা ও জাতীয় পার্টি থেকে প্রভাষক আমিনুল ইসলাম লাঙ্গল মার্কা নিয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়ে যাচ্ছেন। মুখ খুলছেন না ভোটাররা : প্রতিবারের যে কোনো নির্বাচনের আগেই কোনো কোনো প্রার্থীর পক্ষে একক গণজোয়ারের চিত্র ফুটে উঠলেও এবারের দৃশ্যপট ভিন্ন। ৩টি পৌরসভা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। জয়পুরহাট সদর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও আক্কেলপুর ও কালাই পৌরসভায় এই দু’টি দলেরই রয়েছে শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী। ফলে এই দু’টি দলেরই বিভক্ত নেতা-কর্মী-সমর্থকরা এখন ভীত-সন্ত্রস্ত। এছাড়া পৌরসভাগুলোতে কোনো হেবিওয়েট প্রার্থী না থাকায় মেয়র নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটের আমেজ নেই ভোটারদের মধ্যে। আক্কেলপুর পৌর এলাকার আব্দুল বারীক, আব্দুস সাত্তার, কালাই পৌর এলকার ফজলুর রহমান, জামাল হোসেনসহ অনেক ভোটাররা জানান, পৌরসভাগুলোতে অত্যন্ত পরিচিত ও গত নির্বাচনে নির্বাচিত ও নিকটতম পরাজিত মেয়র প্রার্থীদের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলের প্রার্থিতা না দিয়ে নির্বাচন করেছে নতুন মুখদের। ফলে এ নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা নেই। তবে কার পাল্লা ভারী এমন প্রশ্ন করলে মুখ খুলতে চাননি সাধারণ ভোটাররা।এ ব্যাপারে জেলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও পৌর নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন ও পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। রাশেদুজ্জামান/এসএস/আরআইপি
Advertisement