দেশজুড়ে

৯টার স্কুলে শিক্ষকরাই আসেন ১১টার পর!

হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার নথুল্লাপুর-তেরাউতিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও বেলা ১১টার আগে কেউই হাজির হন না। সকাল ৯টায় স্কুল খোলার কথা থাকলেও বেলা ১১টার আগে কারও দেখা পাওয়া যায় কদাচিৎ। এতে প্রাথমিকেই ঝরে পড়ছে ওই স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী।

Advertisement

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম ভালোই চলছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দিলীপ চন্দ্র দেবনাথ যোগ দেওয়ার পর থেকে শিক্ষাকার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, যোগদানের পর থেকেই নিজের ইচ্ছা মতো স্কুলে আসা-যাওয়া করছেন প্রধান শিক্ষক। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল সাড়ে ৯টায় ক্লাস শুরুর কথা। অথচ প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকরা কোনো দিন বেলা ১১টায় আবার কোনো দিন দুপুর ১২টায় স্কুলে যান। এ অবস্থায় স্কুলটিতে পাঠদান বিঘি্নত হচ্ছে।

সম্প্রতি স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দু-তিনজন শিক্ষার্থী স্কুলে আসে। দুপুর পৌনে ১২টায় সহকারী শিক্ষিকা নাজমা আক্তার ও দীপিকা রানী দাস স্কুলে আসেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের আরও তিনজন শিক্ষক তখনও আসেননি। তারা হলেন প্রধান শিক্ষক দিলীপ চন্দ্র দেবনাথ, দ্বীনবন্ধু দাশ ও রামকৃষ্ণ দাশ।

Advertisement

বর্তমানে বিদ্যালয়ে ১০১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

শিক্ষকদের কাছে দেরির কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, ভাটি এলাকা হওয়ায় নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। নৌকা ঘাটে এসে না পাওয়ায় দেরি হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে স্কুলে সঠিক সময়ে আসা যায় না।

শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার কম কেন জানতে চাইলে সহকারী শিক্ষিকা দিপীকা রানী দাস জানান, করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী কম আসে। এছাড়াও বিদ্যালয়ের দুরবস্থার জন্য তিনি প্রধান শিক্ষককে দায়ী করেন। তিনি বলেন, আমরা সঠিকভাবে পাঠদান করতে চাইলেও প্রধান শিক্ষকের কারণে তা করতে পারিনি।

বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র জয়ন্ত সরকার জানায়, শিক্ষকরা কোনো কোনো দিন দুপুর ১২টায় স্কুলে আসেন। তারা ঠিকমতো লেখাপড়া করান না। আবার আমাদের যে সরকারি খেলার সামগ্রী স্কুলে এসেছে তা তালা মেরে রাখা হয়েছে। আমাদের খেলতে দেয়া হয় না।

Advertisement

এ বিষয়ে ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, বর্তমান প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বকালে সরকারি যে বরাদ্দ এসেছে, সেগুলোর হিসাব কখনো প্রধান শিক্ষক দেননি। তিনি তার মন মতো স্কুল পরিচালনা করছেন।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বিমল দাস বলেন, কিছুদিন আগে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন আমাকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। কিন্তু সভাপতি কাকে রাখা হয়েছে তা তিনি বলেননি। মূলত তিনি একক আধিপত্য বিস্তার করেই স্কুলটি পরিচালনা করছেন।

এসব ঘটনা উল্লেখ করে সম্প্রতি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা।

অভিযোগ সম্পর্কে প্রধান শিক্ষক দিলীপ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, সব অভিযোগ মিথ্যা। এখানে শিক্ষকদের মধ্যে বিভক্তি আছে। তাই ভুয়া অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমি সঠিকভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা করছি। পাঠদানও ঠিকমতো হচ্ছে।

বানিয়াচং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম সরকার জানান, বিদ্যালয়টির এ অবস্থার কারণ হলো, শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং। সঠিক সময়ে স্কুলে এসে শিক্ষার্থীদের পাঠদান না করা ও প্রধান শিক্ষকের একক আধিপত্য বিস্তার।

তিনি বলেন, যেহেতু এলাকাবাসী চান না প্রধান শিক্ষক এখানে থাকুক, তাই তাকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়া হবে। স্কুলে ভালো ফলাফল অর্জন করতে চাইলে শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আন্তরিকতা থাকতে হবে। বিশেষ করে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।

সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এমএইচআর