(২০১০ দ্বিতীয় সেমিফাইনাল, অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান)
Advertisement
সেন্ট লুসিয়ার সাগরপাড় তখন উত্তাল। সারি সারি ঢেউ এসে আঘাত হানছে। বইছে বাতাস। গ্যালারিতেও তার একটা ছাপ দেখা যাচ্ছিল। তবে একদম ভিন্ন পরিস্থিতি পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া শিবিরে। সবাই চুপচাপ। স্নায়ু চাপে ভুগে কেউ কেউ কামড়াচ্ছিলেন নিজেদের নখ।
টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। ফাইনালে ইংল্যান্ডের সঙ্গী হতে অস্ট্রেলিয়ার দরকার শেষ ৬ বলে ১৮ রান। ফরম্যাটটা টি-টোয়েন্টি হলেও, এক ওভারে ১৮ রান তোলা মুখের কথা নাকি!
তারওপর আবার বোলিংয়ে পাকিস্তানের সে সময়ের সেরা বোলার সাইদ আজমল। বলতে গেলে, সেদিন সব সমীকরণ বিপক্ষেই ছিল অস্ট্রেলিয়ার। আজমল শেষ ওভারের শুরুটাও করলেন দারুণ। প্রথম বলে সিঙ্গেলস দিলেন মিচেল জনসনকে। মহা খুশি আজমল।
Advertisement
তবে সেখানেই শেষ! ওভারের বাকিটা সময় অস্ট্রেলিয়ার মাইক হাসি এমন ‘ঝড়’ (দুঃখিত ঝড়ের চেয়ে ‘ঘূর্ণিঝড়’ বললে বোধহয় যথার্থ শোনায়) তুললেন যে, তাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলো পাকিস্তান। মাইক হাসি যখন শেষ ওভারে ব্যাটিং প্রান্তে আসেন, তখন অসিদের জিততে দরকার ছিল ১৭ রান।
হাতে ৫ বল। দলকে ম্যাচ জেতাতে হাসির সব বল খেলতে হলো না। ৩ ছক্কা আর ১ বাউন্ডারিতে এক বল হাতে থাকতেই অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালের টিকিট এনে দেন এই ব্যাটার।
অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল অনেক আগেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েছে অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তানের ছুড়ে দেয়া ১৯২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে হারাতে দলটার শেষ তিন ওভারে প্রয়োজন ছিল ৪৮ রান! তবে পাহাড়সম সেই চাপের মুখেও ১৮ ও ১৯তম ওভারেও হাসি খেলেন হাতখুলে। দল স্কোরবোর্ডে যোগ করে ৩০ রান, হাসির অবদান তাতে ২২!
তবে তখনো আসল ভেলকি দেখানো যেন বাকি ছিল তার। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে আজমলের শর্ট বল পেয়েই অনসাইডে মারলেন বিশাল এক ছক্কা। চাপে ছিলেন না, সে কথা বলা যাবে না। তবে পাকিস্তানের সেরা বোলার আজমলের সামনে সেটা প্রকাশ করছিলেন না হাসি। প্রথম ছক্কাটা মেরে আনন্দের কোনো ছিটেফোঁটাও তাই নেই এই বাঁহাতির মুখে।
Advertisement
হাসি ম্যাচটা শেষ করেই উদযাপনটা করতে চেয়েছিলেন কি-না, পরের বলেই লং-অনের ওপর দিয়ে তাই আরও এক ছক্কা। এবার আরও বড়, ৯৪ মিটারের। তাতে ম্যাচ জেতার সমীকরণ বেশ সহজ হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার।
শেষ ৩ বলে দলটির তখন দরকার আর মাত্র ৫ রান। হাসি নতুন করে কোনো রোমাঞ্চ চাচ্ছিলেন না হয়তো। তাই তো পরের দুই বলে একটি চার, একটি ছক্কা। ম্যাচ ক্যাঙ্গারুদের পকেটে।
অস্ট্রেলিয়ানদের উদযাপন অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল আজমলের চতুর্থ বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট অঞ্চল দিয়ে হাসির মারা চারের পরই। পঞ্চম বলে ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে তার মারা ওভারের তৃতীয় ছক্কাটি সেই আনন্দ শুধু বাড়িয়েছে।
সেন্ট লুসিয়ার গ্রস আইলেটে সেদিন যেন অতিমানব হয়ে উঠেছিলেন হাসি। শেষ ওভারে তিন ছয়, এক চারে ২২ রান তোলা হাসি, পুরো ইনিংস সাজান মোট ৬ ছয়, আর ৩ চারে। তাতে ২৫০ স্ট্রাইকরেটে ২৪ বলে ৬০ রান হাসির নামের পাশে।
রান ৬০ ঠিক আছে, তবে এই ৬০ রানের মর্ম কতখানি সেটা ভালোই উপলদ্ধি করেছিল অসিরা। অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে অবশ্য পাকিস্তানের সেটা আরও ভালো করে টের পাওয়ার কথা। কেননা অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে হাসির ওই অতিমানবীয় ইনিংসই যে পাকিস্তানের টানা তৃতীয়বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা থেকে বঞ্চিত করে।
আইএইচএস/