জাতীয়

মণ্ডপে কোরআন রাখা ইকবাল ‘সন্দেহে’ একজন আটক

কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন ‘সন্দেহে’ এক ব্যক্তিকে কক্সবাজার থেকে আটক করেছে পুলিশ।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) রাতে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. হাসানুজ্জামান জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, ইকবাল হোসেন নামের একজনকে আমরা আটক করেছি। প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাই চলছে। তাকে হস্তান্তর করা হবে কুমিল্লা পুলিশের কাছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, রাত সোয়া ১০টার দিকে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে ওই যুবককে আটক করা হয়।

Advertisement

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ওই ব্যক্তিকে কুমিল্লা নিয়ে আসা হচ্ছে। এখানে আনা হলে যাচাই-বাছাই শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।

এর আগ ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা মহানগরীর নানুয়া দিঘিরপাড়ের অস্থায়ী পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখা নিয়ে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই চাঁদপুর, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি জেলার উপাসনালয়ে হামলা হয়।

সবশেষ সিসিটিভির ফুটেজ দেখে পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন রাখা ব্যক্তিকে শনাক্ত করে পুলিশ। ইকবাল হোসেন নামের সেই যুবককে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা।

সেই ঘটনায় ১৬ মিনিটের একটি পূর্ণাঙ্গ সিসিটিভি ফুটেজ জাগো নিউজের হাতে এসেছে। অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন কীভাবে, কখন মসজিদে যান, বের হন, মণ্ডপের দিকে যান এবং মণ্ডপ থেকে গদা হাতে ফেরেন তা ফুটেজে অনেকটা স্পষ্ট। মসজিদের পাশের পুকুর পাড়ের একটি বাড়ির উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন, মসজিদ ও বাজার, ব্যাংক, সড়কের কয়েকটি স্পটের ফুটেজে ওই ব্যক্তিকে প্রথমে কোরআন হাতে এবং পরে গদা হাতে দেখা গেছে।

Advertisement

মসজিদ থেকে কোরআন হাতে নিয়ে বের হওয়ার একটি ফুটেজ ও মন্দির থেকে গদা হাতে নিয়ে ঘোরাঘুরির আরেকটি ফুটেজ জাগো নিউজের হাতে আসে। ফুটেজটি ১২টি সিসিটিভি ক্যামেরার পূর্ণাঙ্গ চিত্র।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিজ্ঞ টিম দীর্ঘক্ষণ ফুটেজগুলো অ্যানালাইসিস করেছে বলেও একটি সূত্রে জানা যায়।

যেভাবে মসজিদ থেকে নিয়ে মণ্ডপে কোরআন রাখেন ইকবাল

সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১২ অক্টোবর রাত ১০টা ৩৮ মিনিটে মসজিদে প্রবেশ করতে দেখা যায় মাজারের খাদেম ফয়সাল ও হাফেজ হুমায়ুনকে। এরপর রাত ১০টা ৫৮ মিনিটে মসজিদে প্রবেশ করেন ইকবাল। এসময় খাদেম ফয়সাল ও হাফেজ হুমায়ুন ইকবালের সঙ্গে কথা বলতেও দেখা যায়। ঠিক রাত ১১টায় তারা তিনজনই সেখান থেকে বেরিয়ে যান।

এরপর ১২ অক্টোবর দিনগত রাত ২টা ১২ মিনিটের দিকে পুনরায় মসজিদে প্রবেশ করে কোরআন নিতে দেখা যায় ইকবালকে। এসময় পাশেই অজ্ঞাতপরিচয় একজন ঘুমিয়ে ছিলেন, আরেকজন ছিলেন নামাজরত অবস্থায়। এর দুই মিনিট পর মেঝেতে কোরআন রেখে তাকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়। এরপর রাত ২টা ১৮ মিনিটে মসজিদে আবারও প্রবেশ করে মেঝেতে রাখা কোরআন নিয়ে মসজিদ থেকে বের হতে দেখা যায় তাকে। এরপর মসজিদ থেকে বের হয়ে তাকে মূল সড়কে উঠে মন্দিরের দিকে হেঁটে যেতে দেখা যায়।

আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ইকবাল পূজামণ্ডপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। পূজামণ্ডপের রোড থেকে জগন্নাথ মন্দির রোডের দিকে এগিয়ে যান। এরপর তিনি জগন্নাথ মন্দির রোড থেকে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক চকবাজার শাখার দিকে এগিয়ে যান। পূবালী ব্যাংক মোড়ের পাশের গলিতে প্রবেশ করেন তিনি। সেখানে অবস্থান করে নৈশপ্রহরীদের সঙ্গে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখা যায় তাকে। সর্বক্ষণই তার হাতে কোরআন দেখা যাচ্ছিল। কথাবার্তার পরে তাকে জগন্নাথ মন্দিরের দিকে যেতে দেখা যায়। সেই রোডে কিছুক্ষণ অবস্থানের পর পূজামণ্ডপের দিকে এগিয়ে যান ইকবাল।

আরেকটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাত ৩টা ১২ মিনিটে যুবকটির হাতে কোরআন শরিফ নেই। তিনি এসময় গদা কাঁধে নিয়ে মন্দিরের পাশে পুকুরপাড়ের রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করছিলেন। এসময় তিনি চারপাশে তাকিয়ে দেখছিলেন কেউ তাকে দেখছে কি না।

চিহ্নিত ব্যক্তির প্রস্থানের একটু পরে রাত ৩টা ১৩ মিনিটের দিকে ৯৯৯ এ কল দেওয়া একরামকে সেখানে দেখা যায়। এরপর তাকে আবার ৩টা ২৩ মিনিটের দিকে দারোগাবাড়ি মসজিদে প্রবেশ করতে দেখা যায়। এসময় তার কাছে কোরআন কিংবা গদা কিছুই দেখা যায়নি।

সায়ীদ আলমগীর/জাহিদ পাটোয়ারী/টিটি/জেডএইচ/