আল্লাহ তাআলা মানুষকে এ মর্মে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, আল্লাহর ইবাদত কর আর তার সঙ্গে কাউকে শরিক করো না’ যারা এ নির্দেশনা মেনে চলবে; তাদের জান্নাতি বলেছেন বিশ্বনবি। বিশেষ কয়েকটি গুণের অধিকারীদের জান্নাতি বলেছিলেন প্রিয় নবি। জান্নাতি লোকদের সেসব গুণ কী কী?
Advertisement
জান্নাতে যাওয়ার জন্য শিরকমুক্ত থাকার বিকল্প নেই। আল্লাহ তাআলা কখনো শিরকের গুনাহ ক্ষমা করবেন না। যুগে যুগে মানুষকে শিরকমুক্ত রাখতেই অসংখ্য নবি-রাসুলের আগমন ঘটেছে। তবে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপমাসহ জান্নাতি ব্যক্তির পরিচয় তুলে ধরেছেন এভাবে-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় এসেছে, এক বেদুইন (সাহাবি) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন, যা পালনে আমি জান্নাতে যেতে পারি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন-
> আল্লাহর ইবাদাত করবে;
Advertisement
> তার সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না;
> ফরজ নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে;
> ফরজ জাকাত আদায় করবে;
> রমজান মাসে রোজা পালন করবে।
Advertisement
সে (বেদুইন সাহাবি) বললেন, ‘ওই আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ; আমি এর চেয়ে বেশি করব না।
যখন বেদুইন (সাহাবি) ফিরে যাচ্ছিল; তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (উপস্থিত সাহাবাদের) বললেন, যে জান্নাতি কোনো ব্যক্তিকে দেখতে পছন্দ করে, সে যেন এ ব্যক্তিকে দেখে নেয়।’ (বুখারি ও মুসলিম)
২. হজরত আবু আইয়ুব আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায়, এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাকে এমন একটি আমল শিখিয়ে দিন; যে আমল আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। সেখানে উপস্থিত সবাই বলল- তার কী হয়েছে? তার কী হয়েছে?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তার একটি বিশেষ প্রয়োজন আছে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
> তুমি আল্লাহর ইবাদাত করবে;
> আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না;
> নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে;
> জাকাত আদায় করবে এবং
> আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে।
একে ছেড়ে দাও। হাদিস বর্ণনাকারী বলেন, তিনি ঐ সময় তাঁর সাওয়ারির ওপর ছিলেন। (বুখারি ও মুসলিম)
উভয় হাদিসে ইবাদত দ্বারা উদ্দেশ্য কী হতে পারে?
কোরআন-সুন্নাহর গবেষণায় ইসলামিক স্কলারদের মতে এর দ্বারা ৪টি বিষয় উদ্দেশ্য; তাহলো-
১. আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকা যাবে না। আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। শুধু আল্লাহরই ইবাদত করতে হবে।
২. আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করা যাবে না। সব বিষয়ে শুধু আল্লাহকেই ভয় করতে হবে। ভালো কাজ করায় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকায় আল্লাহকেই ভয় করতে হবে।
৩. আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে কোনো কিছু না চাওয়া বা প্রত্যাশা করা। চাইতে হবে শুধু আল্লাহর কাছে। তিনি মানুষকে সবকিছু দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান।
৪. আল্লাহকে ছাড়া আর কারও উপর ভরসা করা যাবে না। সব বিষয়ে মহান আল্লাহর উপর ভরসা করতে হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলার উপর ভরসাকারীদে স্বয়ং আল্লাহ ভালোবাসেন।
সুতরাং কোনো মুমিন যদি হাদিসের অনুসরণে শিরকমুক্ত ঈমানের সঙ্গে নামাজ, জাকাত, রোজা এবং আত্মীয়তার সর্ম্পক বজায় রেখে ইবাদত-বন্দেগি করে তবে তার জন্য জান্নাত সুনিশ্চিত।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, হাদিসে নির্দেশিত জান্নাতি ব্যক্তি হওয়ার জন্য উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করা। নিজেদের জান্নাতি হিসেবে তৈরি করতে শিরকমুক্ত ঈমান নিয়ে নামাজ, রোজা, জাকাত ও আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী শিরকমুক্ত থাকার পাশাপাশি নামাজ, রোজা, জাকাত ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রেখে নিজেদের ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রাখার তাওফিক দান করুন। দুনিয়াতে থেকেই সুনিশ্চিত জান্নাতের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস