পৌর নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে উত্তাপ। সেই সাথে বাড়ছে প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। কোথাও বিধিভঙ্গ করে মিছিল, আবার কোথাও পোস্টার-ব্যানার সাটানো এবং ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করা হচ্ছে। আবার কোথাও বিরোধী জোটের প্রার্থীর প্রচারণায় বাধা এবং হামলার অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে। নানা অভিযোগে জেলার ৬ পৌরসভার রিটার্রিং অফিসারের কাছে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগের পাহাড় জমেছে। এসব অভিযোগ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রিটার্নিং অফিসাররা। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের অভিযোগ, আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। মেহেন্দীগঞ্জ পৌরসভার সহকারী রিটার্নিং অফিসার শওকত আলী বলেন, আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু পর থেকে এ পর্যন্ত ১২টি মৌখিক অভিযোগ পেয়েছেন তারা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ডাক বাংলোয় ক্ষমতাসীন প্রার্থীর বৈঠক, মিছিল ও রঙ্গিন পোস্টার সাটানো। বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন দিপেন বলেন, তিনি মৌখিক ভাবে রিটার্নিং অফিসারের কাছে একাধিক অভিযোগ করেছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি। মেহেন্দিগঞ্জের ওসি উজ্জল কুমার দে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় উপস্থিত থেকে নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন এবং তিনি (ওসি) পক্ষপাতিত্ব করছেন বলেও অভিযোগ করেন দিপেন। মুলাদী পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শফিক উজ্জামান রুবেল তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী আসাদ মাহমুদের বিরুদ্ধে মিছিল করার অভিযোগে রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে বিএনপি’র প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর দেয়া অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন মুলাদীর রিটার্নিং অফিসার আব্দুল্লাহ-আল মাসউদ। এদিকে বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী আসাদ মাহমুদও তার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার মৌখিক অভিযোগ করেছেন রিটার্নিং অফিসারের কাছে। এছাড়াও মুলাদীতে কাউন্সিলর প্রার্থীরা রিটার্নিং অফিসারের কাছে ৮টি মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন। রিটার্নিং অফিসার জানান, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক কাউন্সিলর প্রার্থী তার প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে হুমকি দেয়ার অভিযোগ করেন। হুমকির অভিযোগে ওই কাউন্সিলর প্রার্থীকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বানারীপাড়ায় গত সপ্তাহে ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আরিফুল ইসলাম আনোয়ারের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থী জাহিদ হোসেন সরদারের কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনায় রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাল্টাপাল্টি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। একই পৌরসভায় গত সোমবার বিকেলে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী একটি অনুষ্ঠানে তার দলের দুই এমপি’র সাথে বক্তব্য রেখেছেন। বানারীপাড়ায় বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী গোলাম মাহমুদ মাহবুব মাস্টার বলেন, তিনি একাধিক অভিযোগ দিয়েও কনো প্রতিকার পাননি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রকাশ্যে এমপিদের সাথে সভা করলেও রিটার্নিং অফিসার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার সৈয়দ এ জেড মোর্শেদ আলী বলেন, তিনি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তবে ওই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। মৌখিকভাবে কয়েকটি অভিযোগ পেয়ে তিনি তাৎক্ষণিক সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করেছেন বলে জানান। উজিরপুর পৌরসভার সহকারী রিটার্নিং অফিসার জসিম উদ্দিন বলেন, দেয়ালে পোস্টার লাগানোর অভিযোগে ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী হাশেম সরকার এবং একই ওয়ার্ডের চাঁন মিয়াকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইভাবে ৬টি মৌখিক অভিযোগ পেয়ে সেগুলোর সত্যতা যাচাই বাছাই করে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। বাকেরঞ্জে গত শনিবার বিএনপি প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগে মেয়র প্রার্থী মতিউর রহমান মোল্লা রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু ওই অভিযোগের কোন সুরহা হয়নি বলে তার অভিযোগ। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, তিনি ২টি লিখিত এবং ৬টি মৌখিক অভিযোগ পেয়ে সেগুলো গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখছেন। এছাড়া আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগে গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী লোকমান হোসেন ডাকুয়া ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ঝিলন ডাকুয়া ও একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আরিফুর রহমানকে জরিমানা করা হয়েছে।গৌরনদীর সহকারী রিটার্নিং অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, পৌর এলাকার ৭ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিধি লংঘন করে পোস্টার সাটানোর মৌখিকভাবে ৫টি অভিযোগ পেয়ে আইন-শৃংখলা বাহিনীর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। এদিকে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে আচারণবিধি মেনে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর জন্য প্রার্থীদের নিয়ে সভা করেছে সবগুলো পৌরসভার রিটার্নিং অফিসাররা।এসএইচএস/আরআইপি
Advertisement