শারীরিক সুস্থতার জন্য পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা খুবই জরুরি। এটি মানুষকে শুধু সুস্থই রাখে না বরং গুনাহ থেকেও মুক্তি দেয়। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনই ঘোষণা দিয়েছেন। একটি ছোট্ট আমলেই মিলবে গুনাহ থেকে মুক্তি ও সুস্বাস্থ্য। ছোট্ট ও সহজ সেই আমলটি কী?
Advertisement
শারীরিক-আত্মিক পবিত্রতা ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা মানুষের জন্য খুবই উপকারি। আর তা অর্জিত হয় অজুর মাধ্যমে। ইবাদত-বন্দেগির জন্য অজু করা আবশ্যক। যথাযথভাবে অজু করে মহান আল্লাহর জন্য নামাজ পড়ায় মিলবে গুনাহ থেকে মুক্তি ও সুস্বাস্থ্য। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা প্রমাণিত।
হাদিসের এ নির্দেশনা বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায়ও যথাযথ ভূমিকা রেখেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনার সঙ্গে ইসলামের এ আমলটি কার্যকরীভাবেই মিলে যায়। ভালোভাবে অজু করার মাধ্যমে মানুষ এ ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে পারে। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি ঘোষণা করেন-
১. ‘যখনই কোনো মুসলিম পরিপূর্ণরূপে অজু করে নামাজ আদায় করতে দাঁড়ায় আর (নামাজে দাঁড়িয়ে) যা বলছে, তা জেনে বুঝে মনোযোগ সহকারে আদায় করে, সে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতোই নিষ্পাপ হয়ে নামাজ সম্পন্ন করে।’ (তাবারানি, তারগীব)
Advertisement
২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘তোমাদের কোনো ব্যক্তি যখন অজুর পানি নিয়ে কুলি করে, নাকে পানি দেয় এবং তা পরিষ্কার করে, তখন তার মুখের ভেতরের ও নাকের সব গুনাহ ঝরে যায়। তারপর যখন সে আল্লাহ পাকের নির্দেশ অনুসারে মুখমণ্ডল ধোয়, তখন মুখমণ্ডলের চারদিকের সব গুনাহ পানির সঙ্গে ঝরে যায়।
তারপর যখন দুই হাত কনুইসহ ধোয়, তখন তার উভয় হাতের গুনাহসমূহ আঙুল বেয়ে পানি সঙ্গে ঝরে যায়। এরপর যখন উভয় পা গোড়ালি পর্যন্ত ধোয় তখন উভয় পায়ের গুনাহগুলো আঙুল বেয়ে ঝরে যায়।
এরপর যদি সে দাঁড়িয়ে যথাযথভাবে নামাজ আদায় করে, আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান বর্ণনা করে এবং তার অন্তরে আল্লাহর জন্য একাগ্রতা তৈরি হয়; তবে সে গুনাহ থেকে এমনভাবে মুক্ত হয়ে যায়; যেন তার মা তাকে এখনই প্রসব করেছেন।’ (মুসলিম)
৩. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'যখন কোনো মুমিন বান্দা অজু করে এবং মুখ ধোয়, তার মুখের গুনাহ পানির সঙ্গে ধুয়ে যায়। যখন কোনো বান্দা হাত ধোয়, তার হাতের গুনাহ পানির সঙ্গে ধুয়ে যায়। এমনিভাবে যখন অজু শেষ করেন তখন ওই ব্যক্তি বেগুনাহ মাসুম হয়ে যায়।' (তিরমিজি)
Advertisement
এ আমলটি ইবাদত বন্দেগির জন্য ফরজ কাজ। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে মানুষকে এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন যে-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا قُمۡتُمۡ اِلَی الصَّلٰوۃِ فَاغۡسِلُوۡا وُجُوۡهَکُمۡ وَ اَیۡدِیَکُمۡ اِلَی الۡمَرَافِقِ وَ امۡسَحُوۡا بِرُءُوۡسِکُمۡ وَ اَرۡجُلَکُمۡ اِلَی الۡکَعۡبَیۡنِ ؕ وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوۡا ؕ وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ اَوۡ جَآءَ اَحَدٌ مِّنۡکُمۡ مِّنَ الۡغَآئِطِ اَوۡ لٰمَسۡتُمُ النِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡهِکُمۡ وَ اَیۡدِیۡکُمۡ مِّنۡهُ ؕ مَا یُرِیۡدُ اللّٰهُ لِیَجۡعَلَ عَلَیۡکُمۡ مِّنۡ حَرَجٍ وَّ لٰکِنۡ یُّرِیۡدُ لِیُطَهِّرَکُمۡ وَ لِیُتِمَّ نِعۡمَتَهٗ عَلَیۡکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ
‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াবে তখন তোমরা তোমাদের পুরো মুখ, উভয় হাত কনুইসহ ধুয়ে নাও এবং তোমাদের মাথা মসেহ কর এবং দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোও। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায় খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।’ (সুরা মায়িদাহ : আয়াত ৬)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, যথাযথভাবে অজু করার মাধ্যমে সব সময় পবিত্র থাকা। হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি আত্মিক পবিত্রতা ও নিষ্পাপ হিসেবে নিজেকে তৈরি করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নিয়মিত অজুর আমল যথাযথভাবে করার তাওফিক দান করুন। অজু করার পর হাদিসের নির্দেশনা আমল করার তাওফিক দান করুন। শারীরিক সুস্থতা ও নিষ্পাপ জীবন লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস