কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটলে রাজউক, কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টরা কেউ দায় নিতে চায় না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর (এফ) রহমান।
Advertisement
মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) মিলনায়তনে কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনারোধ এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণে গঠিত সমন্বিত পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণ টিমের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
সালমান এফ রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে যখন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটা ঘটলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এটা নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হলো। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আমাকে বললো, রানা প্লাজার মতো আবার শুরু হলো। তার পরের দিন আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দেখা। তিনি আমাকে বললেন, এটা আমরা বন্ধ করতে পারছি না কেন? আমি প্রধানমন্ত্রীকে বললাম, গার্মেন্টসে অ্যাকোর্ড-অ্যালায়েন্সের মাধ্যমে সফলতার সঙ্গে শ্রমিকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পেরেছি। গার্মেন্টেসে যদি পারি, নন-গার্মেন্টসে কেন পারবো না?
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নিদেশর্না অনুযায়ী বিডা ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে কারখানার তথ্য সংগ্রহের জন্য জাতীয় কমিটি করেছি। কলকারখানায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে শ্রম মন্ত্রণালয়ের ওপর প্রথম চাপ পড়ে। মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা আমাকে বলেছেন, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথমেই জিজ্ঞেস করা হয়, ডাইফে (কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর) কী করেছে? শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ডাইফের ইন্সপেকশন সম্পকে আমরা জানি। ফায়ারের দায়িত্ব আমার না, অনুমোদন দেওয়ার দায়িত্ব আমার না, কারখানার পরিবেশ দেখার দায়িত্ব আমার না। এখানেই একটি বড় কন্ট্রাডিকশন রয়ে গেছে। এই জন্যই প্রধানমন্ত্রী জাতীয় কমিটি করেছেন। আবার রাজউককে জিজ্ঞেস করলে, তারা বলছে, আমরা তো স্ট্রাকচারাল পারমিশন দেই না। আমরা শুধু প্ল্যান পাশ করি। বিল্ডিং ধপাস করে পড়ে যাচ্ছে তার দায়-দায়িত্ব কারোরই নেই। রাজউক বলতেছে, সেটা তো আমি দেখবো না। এজন্য জাতীয় কমিটির মাধ্যমে আগে আমরা কারখানার তথ্য সংগ্রহ করবো।
Advertisement
হাসেম ফুডসের দুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেশের শিল্প-কারখানাগুলোয় পরিদর্শন কার্যক্রম শুরু করা নিয়ে একটি অনুশাসনে বলা হয়- এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষ ও সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে বিডার নেতৃত্বে অবিলম্বে সব শিল্প-কারখানা সরেজমিন পরিদর্শনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিদর্শন চলাকালে শিল্প-কারখানাগুলোর অবকাঠামোগত পরিস্থিতি এবং অগ্নি ও অন্যান্য দুর্ঘটনা নিরোধে বিদ্যমান প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা পর্যালোচনা করা হবে। এ পর্যালোচনার ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্বও সুনির্দিষ্টভাবে বিডাই পালন করবে। সেই অনুশাসনের পর সালমান এফ রহমানকে সভাপতি করে একটি জাতীয় কমিটি গঠনের তথ্য জানানো হয়। ২৭ সদস্যের কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব। অন্য সদস্যরা হলেন- বাণিজ্যমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট সংসদীয় এলাকার সংসদ সদস্য, সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন/পৌরসভার মেয়র, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব প্রমুখ।
কমিটির সদস্যদের উদ্দেশে সালমান এফ রহমান বলেন, আপনাদের কাজ কারখানার তথ্য সংগ্রহ করা। এর বেশি কিছু না। কারখানায় কী আছে কী নেই সেই তথ্য মালিকদের সঙ্গে বসে সংগ্রহ করবেন।
অনুষ্ঠানে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য আমরা কমপ্লায়েন্স করবো, নিজেদের প্রতিষ্ঠানে করবো না; এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। নন গার্মেন্টস, গার্মেন্টস যা আছে সবাইকে কমপ্লায়েন্স করতে হবে। কমিটির সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, একদিনে সব কিছু পরিবর্তন করা যাবে না। এই দায়িত্ব আমি, আপনি নেইনি। আপনারা তথ্য নিয়ে আসেন তার ভিত্তিতে বিডা ও জাতীয় কমিটি কমপ্লায়েন্সের সুপারিশমালা তৈরি করবে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহছানে এলাহীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
Advertisement
এসএম/এমআরআর/জিকেএস