প্রবাস

বর্তমান প্রেক্ষাপটে লালন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক

সভ্যতার উৎকর্ষের এমন সময়েও সঠিক শিক্ষার আলো আর মানবিক মূল্যবোধ পৌঁছে দেওয়া যায়নি পৃথিবীর অনেক জায়গায়। যে কারণে এখনো ধর্ম কিংবা উঁচু নিচু জাত দিয়ে মানুষকে বিচার করা হয়, এ নিয়ে নির্মম সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে একে অপরে।

Advertisement

বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের শিক্ষা যদি অন্তরে ধারণ করে তা সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া যেতো, তাহলে হয়তো মানুষে মানুষে হানাহানি কমিয়ে আনা যেত অনেকটাই।

নিউইয়র্কে আয়োজিত লালন সাঁইজির ১৩১তম তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

রোববার সন্ধ্যায় জ্যামাইকার একটি মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘কুষ্টিয়া ফ্রেন্ডস সোসাইটি’। সংগঠনের সভাপতি শামীম হাসানের সঞ্চালনায় লালন সন্ধ্যায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অনিন্দিতা কাজী, লেখক ও সাংবাদিক শামীম আল আমিন, সাংবাদিক ও নাট্যকার তোফাজ্জল লিটন।

Advertisement

এছাড়া সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মোমিন হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টা আসাদুজ্জামান বাবু বক্তব্য দেন। তবে অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিলেন খ্যাতিমান লালন সঙ্গীতের শিল্পী মেলাল শাহ।

অনুষ্ঠানে অনিন্দিতা কাজী বলেন, বর্তমান সময়ে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্প যখন আমাদের গভীরভাবে সংকটে ফেলে দিয়েছে, তখন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন লালন সাঁইজি।

তিনি নজরুল এবং লালনের কাজ ও চিন্তার মিল নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করে বলেন, এই দুই মহামনিষী তাদের জীবন ও কর্মের মধ্য দিয়ে মানবতার গান গেয়েছেন। বিশেষ করে সকল জাতের উর্ধ্বে উঠে তারা মানুষের জয়গান গেয়েছেন। সমাজে এই চিন্তার সঠিক প্রতিফলন জরুরি।

লেখক ও সাংবাদিক শামীম আল আমিন বলেন, এমন একটি সময়ে এই আয়োজন, যখন ধর্মান্ধতা কিংবা অসভ্যতা সমাজকে কলুষিত করছে। লালন আমাদের অন্তরের মানুষ। কিন্তু আমরা সবাই লালনকে ঠিকভাবে বুঝতে পারি না।

Advertisement

তিনি বলেন, আমরা যদি লালনের ভাবধারাকে ঠিকভাবে অনুদিত করতে পারতাম, তাহলে হয়তো সমাজের অনেক অনিষ্ঠ চিন্তা থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকতে পারতাম। সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী লালনের দর্শন ছড়িয়ে দেওয়ার উপর গুরুত্ব দেন তিনি।

সাংবাদিক ও নাট্যকার তোফাজ্জল লিটন সম্প্রতি বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনাকে তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, আজকে যদি লালনের বাণী ও আদর্শ বাংলাদেশে সঠিকভাবে প্রচার করা হতো, তাহলে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটতো না। তাই আমি জোর দাবি জানাচ্ছি বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে লালনের চেতনা ছড়িয়ে দেয়া হোক।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বেশ কয়েকটি লালন সঙ্গীত শোনান শিল্পী মেলাল শাহ। গানের ফাঁকে ফাঁকে তিনি লালনের দর্শন নিয়েও কথা বলেন।

শিল্পী বলেন, আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে এই অনুষ্ঠানটি করছি। যেটা লালন সাঁইজী তার বাণীতে বলে গেছেন। তার সেই বাণীর পথ ধরেই আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়ে তুলতে চাই।

এমআরএম/এএসএম