খেলাধুলা

ভাইয়ের তারকাখ্যাতি ডাকছে তরুণ টমকে

সব ক্রিকেটারেরই আজন্ম লালিত স্বপ্ন বিশ্বকাপ মঞ্চে অন্তত একবার হলেও দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। সেই গৌরব অনেকটা সৌভাগ্যবসতঃ পেতে যাচ্ছেন টম কুরান। প্রথমে তিনি ছিলেন ইংল্যান্ডের রিজার্ভ দলে। তবে আপন ভাই স্যাম কুরানের চোট তার জন্য খুলে দেয় বিশ্বকাপের দরজা।

Advertisement

একে তো অকল্পনীয়ভাবে দলে ঢোকা, তার অপর টমের গল্পটা হতে পারত অন্য রকমেরও। তার বাবা কেভিন কুরানের জন্ম জিম্বাবুয়েতে। খেলেছেনও দেশটির জাতীয় দলের হয়ে। তবে চার বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার বাদে পুরোটা সময়ই তিনি খেলেছেন ইংল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকায়। ছোট দু’জন স্যাম, বেনের ইংল্যান্ডে জন্ম হলেও, টমের জন্ম আবার দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে। তবে পিতৃভূমি বা জন্মভূমি নয়, বর্তমান আবাস ইংল্যান্ডের হয়েই বিশ্বকাপ মঞ্চে নাম লেখাতে যাচ্ছেন তিনি।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু টমের। তবে স্যামের মতো অলরাউন্ডার নয়, মিডিয়াম পেস করেন তিনি। অবশ্য মাঝেমধ্যে ব্যাটিংটাও খারাপ করেন না। তিন বছরের বড় হলেও, জাতীয় দলে তার চেয়ে বেশি পছন্দের ছিলেন স্যাম। তবে ছোট ভাইয়ের দুঃস্বপ্ন, পথ খুলে দিলো টমের।

ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের দলে ছিলেন কেপ টাউনে জন্ম নেয়া এই ক্রিকেটার। তবে খেলা হয়নি একটি ম্যাচও। আগে কখনো থ্রি লায়ন্সের হয়ে বড় মঞ্চে না খেলা এই পেসার তাই উদীয়মান তারকাদের একজন হয়েই বিশ্বমঞ্চে নাম লেখাবেন। এই তকমাটা অবশ্য ২০১৫ সাল থেকেই তার নামের সঙ্গে লেপ্টে আছে। ওই বছর ইংল্যান্ড কাউন্টি ক্রিকেটের বর্ষসেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কার পান তিনি।

Advertisement

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাম লিখিয়ে এখনো সে রকম বড় তারকার খ্যাতি পাওয়া হয়নি। তবে খুব অল্প বয়স থেকেই চেষ্টাটা চলছে তার। দাদা-বাবা দুজনেই ক্রিকেট খেলতেন বলে, ছোট বেলা থেকেই ব্যাট-বল টানত টমকে। দক্ষিণ আফ্রিকার কাজুলু-নাটাল ইনল্যান্ডের বয়সভিত্তিক সবগুলো দলের হয়ে নিজেকে ধীরে ধীরে পরিণত করেন তিনি।

এরপর ইংলিশ কাউন্টি ক্লাব সারের নজরে আসেন। স্কুল ক্রিকেট খেলার সময় সারের সাবেক অধিনায়ক ইয়ান গ্রেগের নজরে আসেন। গ্রেগের সহায়তায় সারের হয়ে খেলতে শুরু করেন টম।

ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকের পর অবশ্য পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন টম। ২০১৮ সালে জনপ্রিয় ফ্যাঞ্চাইজি লিগ আইপিএল থেকে ডাক পড়ে তার। মিচের স্টার্কের পরিবর্তে তাকে দলে ভেড়ায় কলকাতা নাইট রাইডার্স। এরপর রাজস্থান রয়্যালস হয়ে এখন দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে খেলেন তিনি।

২০১৭ সালে টি-টোয়েন্টি অভিষেকেই তিন উইকেট পকেটে পুরেছিলেন টম। প্রথম ওভারেই পেয়েছিলেন এক উইকেট। পরের সিরিজে ইংল্যান্ডের হয়ে তাই ওয়ানডে অভিষেকও হয়ে যায় তার। এরপর একই বছর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বক্সিং ডে টেস্টে সাদা পোশাকের ক্রিকেটেও নাম লিখিয়ে ফেলেন এই বোলার।

Advertisement

সব ফরম্যাটে অভিজ্ঞতা নিলেও সংক্ষিপ্ত ওভারের ক্রিকেটে টমের স্বাচ্ছন্দ্য যেন একটু বেশি। নতুন বল হাতে সুইং জাদুতে শুরুতেই দলকে উইকেট এনে দেয়া অথবা স্লগ ওভারে প্রতিপক্ষের রান আটকে রাখা-দুই জায়গাতেই পারদর্শী তিনি।

কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে দলের প্রয়োজন বেশ ভালো করে মেটাতে পারেন বলেই, অলরাউন্ডার ভাই স্যামের পরিবর্তে বোলার টমকেই ডেকেছে ইংল্যান্ডের নির্বাচকরা।

ইংল্যান্ড এবার তাদের বিশ্বকাপ দলে ছয়জন পেসার রেখেছে। যাদের মধ্যে একজন টম। বাকিরা হলেন টাইমাল মিলস, ক্রিস ওকস, মার্ক উড, ক্রিস জর্ডান, ডেভিড উইলি।

তবে ছয় পেসারের মধ্যে বিশ্বকাপের যেখানে হবে সেই আরব আমিরাতে আইপিএলের সুবাদে আছেন টম। বিশ্বকাপ ভেন্যু সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেলছেন বলে, দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের খোঁজে থাকা ইংল্যান্ড অবশ্যই চাইবে আমিরাতের উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া টমের কাছ থেকে বাড়তি কিছু পেতে।

টম নিজেও চাইবেন স্যামের বদলে বিশ্বমঞ্চে খেলার সুযোগটা কাজে লাগাতে। তবেই তো, উদীয়মান ক্রিকেটারের তকমা ঝেরে তারকা ক্রিকেটার হিসেবে খ্যাতিটা নামের পাশে পাবে শোভা।

এসএস/আইএইচএস/