খেলাধুলা

বাংলাদেশকে হারালেই ‘বিপদে’ পড়ে ভারত!

২০১৫ সালের ১৯ মার্চ। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারদের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিপক্ষে যায়। বিতর্কিত সে সব সিদ্ধান্তের কারণে ১০৯ রানে হেরে সেবার বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান কোয়ার্টার ফাইনালে থেমে যায়।

Advertisement

এরপর থেকে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ হয়ে গেল ‘ভারত-পাকিস্তান ডার্বি’। আর বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট হলে তো কথাই নেই! তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে এই জয় যেন ভারতের কাছে এক বড় ‘কুফা’। বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতলেই পরের ম্যাচে বড় ব্যবধানে হেরে যায় ভারত। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে এখন পর্যন্ত এমন ঘটনা ঘটেছে দু’বার।

২০১৫ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল, ভেন্যু: মেলবোর্ন ভারত: ৩০২/৬, বাংলাদেশ ১৯৩/১০; ফল: ভারত ১০৯ রানে জয়ী।

সেমিফাইনাল, ভেন্যু: সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড অস্ট্রেলিয়া ৩২৮/৭, ভারত ২৩৩; ফল: অস্ট্রেলিয়া ৯৩ রানে জয়ী।

Advertisement

মেলবোর্নে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশকে ১০৯ রানে হারিয়ে সিডনিতে সেমিফাইনালে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় ভারত। সিডনিতে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় অসিরা। দলীয় ১৫ রানে স্বাগতিকরা হারায় ডেভিড ওয়ার্নারের উইকেট।

তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামা স্টিভেন স্মিথ শুরু থেকে চড়াও হন ভারতীয় বোলারদের ওপর। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫ রানের সেঞ্চুরির 'আক্ষেপ' স্মিথ ঘোচালেন সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি করে। আরেক ওপেনার ফিঞ্চও কম যাননি। ফিঞ্চ-স্মিথ মিলে ২য় উইকেটে যোগ করেন ১৮২ রান।

এরপর শেষের দিকে মিচেল জনসনের অপরাজিত ৯ বলে ২৭ রানের ঝড়ো ইনিংসে ৭ উইকেটে ৩২৮ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া। ৩২৯ রান তাড়া করতে নেমে ভারতীয় ওপেনাররা দুর্দান্ত সূচনা করেন। রোহিত শর্মা ধীরস্থির ব্যাটিং করলেও শিখর ধাওয়ান স্বাগতিক বোলারদের ওপর চড়াও হচ্ছিলেন।

৭৬ রানের ওপেনিং জুটির পর ভারতীয় ইনিংসে ছোটখাট ধ্বস নামে। জস হ্যাজেলউডের বলে, ৭৬ থেকে ১০৮- এই ৩২ রান তুলতেই একে একে ড্রেসিংরুমে ফেরেন শিখর, রোহিত, বিরাট কোহলি,সুরেশ রায়না।

Advertisement

এরপর উইকেটে আসেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। আজিংকা রাহানের সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে ৭০ রানের জুটি গড়ে সাময়িক ধাক্কা সামাল দিলেও পরে আর তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। ৬৫ বলে ৬৫ রানের ইনিংস খেলে ভারতীয় উইকেটরক্ষক অধিনায়ক ব্যাটার ধোনি বিদায় নিলে খুব দ্রুতই গুটিয়ে যায় ভারতীয় দল। ৪৬.৫ ওভারে ২৩৩ রানে অলআউট হলে সেমিফাইনালেই থেমে যায় ভারতের বিশ্বকাপ মিশন।

২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি সেমিফাইনাল, ভেন্যু: এজবাস্টন বাংলাদেশ: ২৬৪/৭, ভারত ২৬৫/১; ফল: ভারত ৯ উইকেটে জয়ী।

ফাইনাল, ভেন্যু: দ্য ওভাল, লন্ডন পাকিস্তান ৩৩৮/৪, ভারত ১৫৮ অলআউট; ফল: পাকিস্তান ১৮০ রানে জয়ী।

এজবাস্টনে বাংলাদেশের দেওয়া ২৬৫ রানের টার্গেট ৯ উইকেট ও ৫৯ বল হাতে রেখে তাড়া করে হেসেখেলে ফাইনালে ওঠে ভারত। লন্ডনের ওভালে মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত এবং পাকিস্তান।

শক্তিমত্তার বিচারে ভারতকে তখন অনেকেই এগিয়ে রেখেছিলেন। অনেকেই ভারতের হাতে টানা দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দেখতে পাচ্ছিলেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলের সঙ্গে যখন ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ তকমা, তাদের ব্যাপারে কী আগেভাগে কিছু আঁচ করা যায়?

টসে জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বিরাট কোহলির ভারত। কোহলির সিদ্ধান্তকে প্রায় সঠিক প্রমাণ করেই ফেলেছিলেন জসপ্রিত বুমরাহ। ব্যক্তিগত তিন রানে ফাখর জামানকে বুমরাহ কট-বিহাইন্ড করালেও নো-বলের কারণে বেঁচে যান ফাখর। ‘উপহার’ পাওয়া জীবন বেশ ভালোই উপভোগ করেন পাকিস্তানি ওপেনার।

মাত্র চতুর্থ ওয়ানডে ম্যাচে তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি, তাও আবার কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে! শেষের দিকে মোহাম্মদ হাফিজের অপরাজিত ঝড়ো ফিফটিতে পাকিস্তান দাঁড় করায় ৪ উইকেটে ৩৩৮ রানের মতো বিশাল সংগ্রহ।

৩৩৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা চোখে রীতিমতো সর্ষে ফুল দেখতে থাকতেন। ভারতীয় টপ অর্ডার একাই ধসিয়ে দিয়েছিলেন মোহাম্মদ আমির। ৯ বলে ৫ রান করে বড় মঞ্চে আরও একবার ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন বিরাট কোহলি। ফাখরের মতো সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বিরাট।

৭২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ভারতের পরাজয় যখন সময়ের ব্যাপার, তখন ধ্বংসস্তুপ থেকে ভারতকে আশা দেখাচ্ছিলেন হার্দিক পান্ডিয়া। শাদাব খানকে টানা তিনটি ছক্কা মেরে গ্যালারিতে থাকা ভারতীয় দর্শকদের হৃদয়ে আশার সঞ্চার করতে থাকেন হার্দিক।

তবে রবিন্দ্র জাদেজার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে হার্দিক রান আউটে কাটা পড়লে ভারতের প্রতিরোধ ওখানেই শেষ হয়ে যায়। ৩০.৩ ওভারে ১৫৮ রানে অলআউট করে ১৮০ রানের বিশাল জয়ে প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ঘরে তোলে পাকিস্তান। ১৯৯২, ২০০৯ এর পর ২০১৭ সালে তৃতীয়বার বৈশ্বিক কোনো শিরোপার স্বাদ পায় পাকিস্তান।

কাল থেকে শুরু হচ্ছে সপ্তম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। বরাবরের মতো ভারত নিশ্চয়ই এবারও নকআউট পর্বে বাংলাদেশের মুখোমুখি হতে চাইবে না। কারণ বাংলাদেশকে হারালে পরের ম্যাচেই যে তাদের পা হড়কে যায়!

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

আরও একবার এমন ঘটেছিল। তবে বাংলাদেশের কাছে হারের পরের ম্যাচে নয়, মাঝে এক ম্যাচ বিরতি দিয়ে হারতে হয়েছিল ভারতীয়দের। এবং ওই হারে টুর্নামেন্ট থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল ভারতকে।

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টেন পর্বে গ্রুপ ‘২’-এ ব্যাঙ্গালুরুতে শেষ মুহূর্তে ভারতের কাছে হেরে যেতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। মাত্র ১ রানের ওই জয়ের পর ভারত সেমিফাইনালে উঠেছিল। সুপার টেনের গ্রুপ পর্বে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও জিতেছিল ভারত। কিন্তু সেমিফাইনালে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৯২ রান করার পরও ৭ উইকেটে হেরে যায় ভারত। এই পরাজয় কী বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই জয়ের কারণেই ঘটেছে? হলেও হতে পারে।

সুপার টুয়েলভে যেতে পারবে বাংলাদেশ?

তবে এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এখন সেটা সুদুর পরাহতই মনে হচ্ছে। কারণ, বাছাই পর্বের উদ্বোধনী দিনে স্কটল্যান্ডের কাছে ৬ রানের লজ্জাজনক পরাজয়ের পর সুপার টুয়েলভে যাওয়াটা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের জন্য বেশ কঠিনই হয়ে গেলো।

পরের দুই ম্যাচে ওমান এবং পাপুয়া নিউগিনিকে হারালেও অনেক ‘যদি’ ‘কিন্তু’র অবকাশ তৈরি হবে। এরপর হয়তো সুপার টুয়েলভে খেলা হবে। তাতেও কোন গ্রুপ নিশ্চিত হবে, তার কোনো ঠিক নেই।

আইএইচএস/