ইসতিয়াক আহমেদ
Advertisement
ঢাকার ভেতরেই অসাধারণ সুন্দর সব স্থান আছে। যেখানে পরিবার ও বন্ধুসহ গিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন একদিনেই। যারা ঢাকার ভেতরেই বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের সন্ধান করেন, তারা চাইলেই একদিনে ঘুরে আসতে পারেন কেরানীগঞ্জের দর্শনীয় ৩ স্থানে।
সেখানখার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান আপনার মন কাড়বে। নদী, নৌকা, কাশফুল, ঐতিহাসিক মসজিদ, বিশাল মাঠ, ইট ভাটাসহ খোলামেলা পরিবেশে গিয়ে কিছু সময় কাটাতে শহরবাসীরা ভিড় জমান সেখানে। তাই এক বিকেল কাটাতে বেড়িয়ে পড়ুন ঢাকার অদূরেই কেরানীগঞ্জে-
সাউথ টাউন, কেরানীগঞ্জ
Advertisement
প্রথমেই ছুটতে পারেন কেরানীগঞ্জের সাউথ টাউন মসজিদে। চারপাশে কাঁশফুল ঘেরা এক অসাধারণ স্থাপনা। কেরানীগঞ্জের সাউথ টাউন আবাসিক প্রকল্পের মধ্যে অবস্থিত এই মসজিদ। নান্দনিক গঠন আর অপূর্ব স্থাপত্যশৈলীর কারণে মসজিদটি এরইমধ্যে মানুষের কাছে আকর্ষণীয় রুপে ধরা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের কর্ণধার মোস্তফা কামাল মঈনুদ্দিন হচ্ছেন এর উদ্যোক্তা। মসজিদটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে প্রায় ২ বছর। আধা বিঘা জমিতে নির্মিত হয়েছে মসজিদটি।
চারপাশের খোলামেলা জায়গার মাথা উঁচু করে নিজ সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি। যদিও আবাসন প্রকল্পটিতে এখনো সেভাবে জনবসতি গড়ে ওঠেনি। তাই মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা অনেক কম।
তবে মসজিদের নান্দনিকতার খবর পেয়ে অনেকেই এটি দেখতে আসেন। তারাই ওয়াক্ত হলে ফরজ ও নফল নামাজ আদায় করেন। চারদিকে তাকালে দেখা মিলবে বড় বড় ঘাস আর বিস্তৃত মাঠ।
Advertisement
কিছু দূরে দেখা যায় ইটভাটা। সেখানকার শ্রমজীবীরা এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন। একতলা মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় সাড়ে ৬০০ লোক জামাতে নামাজ পড়তে পারেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মসজিদ তৈরিতে প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এতে প্রধান ফটক আছে ৩টি। দুই পাশে আছে আরও ২টি দরজা। চারপাশে প্রচুর জানালা তৈরি করে আলো প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দু’স্তরের জানালার ফাঁক গলে আসা প্রকৃতির আলোয় ভেতরে চমৎকার এক পরিবেশ তৈরি হয়। জুড়িয়ে যায় চোখ। স্থপতির নন্দনভাবনার শৈলী ফুটে আছে গম্বুজের ভেতরের অংশেও।
দিনের আলো ঢোকার ব্যবস্থা আছে সেখানেও। সন্ধ্যার দিকে মসজিদের চারপাশের লাইটগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, তখন আরেক নান্দনিক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এর পাশেই মসজিদের ইমাম ও খাদেমদের থাকার জন্যে আলাদা একটি ভবন করা হয়েছে।
মসজিদের খাদেম হাফেজ জহিরুল ইসলাম জানান, ‘দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন মসজিদটি দেখতে আসেন। তবে আগে আরও অনেক সুন্দর ছিল। ইটভাটার ধোঁয়ার কারণে মসজিদ ও চারপাশের ফুলের গাছগুলো নষ্ট হয়ে গেছে।’
সাউথ টাউনে কীভাবে যাবেন?
ঢাকার গুলিস্তান থেকে বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে উঠতে হবে। এরপর রাজেন্দ্রপুর যেতে হবে।
রাজেন্দ্রপুরের নতুন কারাগারের একটু পরে হাতের ডান দিকেই সাউথ টাউন প্রকল্প। এই আবাসন প্রকল্পের প্রধান ফটক থেকে ৮-১০ মিনিট হেঁটে ভেতরে ঢুকতেই দূর থেকে চোখে পড়বে এই মসজিদ।
দোলেশ্বর হানিফিয়া জামে মসজিদ
ঢাকার কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ। প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অপূর্ব নিদর্শনের মসজিদটি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহু ইতিহাস আর ঘটনার সাক্ষী।
বাংলা ১২৭৫ (ইংরেজি ১৮৬৮; হিজরি ১২৮৫) সালে এটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন দারোগা আমিনউদ্দীন আহম্মদ। তাই এটি পরিচিত ছিলো ‘দারোগা মসজিদ’ নামেও। তার ছেলে মইজ উদ্দিন আহম্মদ ছিলেন মসজিদের প্রথম মোতোয়ালি।
বংশ পরম্পরায় মসজিদটির নির্মাণ ও সংস্কার কাজে নিয়োজিত ছিলেন, খিদির বক্স-কাদের বক্স নামে দুই সহোদর ও মইজ উদ্দিনের পরিবার। কাদের বক্সের দৌহিত্র সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক হামিদুর রহমান ১৯৬৮ সালে মিনারসহ মসজিদটির বর্ধিতাংশ নির্মাণ করেন।
পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় ও মূল অবকাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখে মসজিদটির ব্যাপক সংস্কার করেন অধ্যাপক হামিদুর রহমানের ছেলে বর্তমান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
স্থানীয়দের কাছে এটি অত্যন্ত পবিত্র একটি স্থান। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকার পর্যটকরা কেরানীগঞ্জে গেলে একবার অন্তত দেখে আসেন মসজিদটিকে।
প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো মসজিদটির অবকাঠামো ঠিক রেখেই সুনিপুণ হাতে পুনর্নির্মাণের কাজ করেছেন স্থপতি আবু সাঈদ এম. আহমেদ।
দোলেশ্বর হানিফিয়া জামে মসজিদ যাওয়ার উপায়
ঢাকার যে কোনো স্থান থেকে পোস্তগোলা ব্রিজ ধরে সহজেই যেতে পারবেন দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ কম্পলেক্সটি দেখতে। পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে নেমে ২০ টাকা অটো ভাড়ায় চলে আসতে পারেন (দোলেশ্বর) মসজিদে।
সারিঘাট
সারিঘাট হচ্ছে বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রোজেক্টের পেছনের একটি স্থান। যা আইন্তা ও আড়াকুল গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি খালের অংশবিশেষ। খালের পাশ দিয়ে সারি ধরে করই গাছ আছে। এ কারণেই জায়গাটি সারিঘাট নামে বেশি পরিচিত।
খালের নব্যতা বাড়াতে ড্রেজিং করা হয়েছিল ও রিভার প্রজেক্টের বালু আড়াকুল গ্রামের দিকে ফেলার কারণে এখানে শরৎকালের দেখা মেলে বিস্তীর্ণ কাশবন। খাল-বিল আর গাছপালার কারণে সেখানকার পরিবেশ অনেকটাই গ্রামীণ। যা একটু হলেও মনে প্রশান্তি এনে দিবে আপনাকে।
সেখানে গেলে খালের ধারে দেখা মিলবে প্রায় কিলোমিটার পর্যন্ত গাছের সারি। একইসঙ্গে কিছু অস্থায়ী খাবারের দোকানও পাবেন। কাশবন ছাড়াও সারিঘাটে পাবেন, কায়াকিং ও নৌ ভ্রমণের সুযোগ।
সারিঘাটের শুরুতেই পড়বে কায়াকিং, ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ টাকা। বিকেল বেলা ভিড় থাকে, তাই কায়াকিং করতে চাইলে পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে যাবেন। এছাড়াও নৌকা ভাড়া করলে ঘণ্টা প্রতি ১০০ টাকা গুনতে হবে। তবে আগেই ভালোভাবে দামাদামি করে নেবেন।
সারিঘাটে কীভাবে যাবেন?
ঢাকার যে কোনো স্থান থেকে কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ বাস স্ট্যান্ডে যাবেন। কিংবা পোস্তগোলা ব্রিজের কেরানীগঞ্জ প্রান্তে গিয়ে ব্রিজের গোড়া থেকেই রিকশা নেবে।
৩০ টাকা ভাড়ায় সারিঘাট পৌঁছে যাবেন। ছুটির দিনে ৪০ টাকাও নিতে পারে। ভিড় বেশি থাকলে ভাড়া বেশি নিতে পারে। কাশবনে যেতে চাইলে সারিঘাটের শেষ দিক দিয়ে হেঁটে যেতে পারেন। আর যদি তাড়াহুড়া থাকে তবে নৌকায় পার হতে পারবেন।
জেএমএস/জেআইএম