দেশজুড়ে

ছেলের প্রতীক্ষায় এক যুগ

‘বাইত্তে থাকলে সংসার চালাইতো উঁ, এক যুগ অয়্যা গেলো আমার পুলাডা আর আইলো না।’ মলিন মুখে এ কথা বলছিলেন সন্তানের প্রতীক্ষায় এক যুগ পার করে দেওয়া তারামন বেগম। স্বামীহারা এ বৃদ্ধার ছেলে প্রায় ১২ বছর আগে নিখোঁজ হন। পরিবারে আর কেউ না থাকায় হয়নি কোনো পুলিশি অভিযোগও। ভিক্ষা করতে করতে এত বছর ধরে ছেলেকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন তিনি। আশা করেন ছেলে ফিরে আসবেন, সংসারের দায়িত্ব নিয়ে মায়ের দুঃখ ঘোচাবেন।

Advertisement

নিখোঁজ ওই ব্যক্তির নাম বাবর আলী। তিনি ঢাকার ধামরাইয়ের গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বড়নালাই গ্রামের মৃত কচিম উদ্দিনের ছেলে। দুই ভাই এক বোনের পরিবারের মধ্যে বাবর আলী ছিল সবার ছোট। ১৯৯৫ সালে তার বাবার মৃত্যু হয়। ভাই ও বোন বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি থাকা শুরু করলে মায়ের সঙ্গেই থাকেন বাবর আলী। তবে ২০০৭ সালে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এরপর ২০০৯ এ নিখোঁজ হন তিনি। বাবর আলী নিখোঁজের পর থেকেই বিপাকে পড়েন বৃদ্ধা মা তারামন বেগম। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক জরাজীর্ণ দোচালা ঘর।

অসুস্থ হয়ে ন্যুব্জ হয়ে পড়া তারামন বেগম জানান, বাবর আলীর বাবা মারা যায় ২৫ বছর আগে। এরপর মানুষের বাড়ি কাজ করে বড় ছেলে ও মেয়ের বিয়ে দেন। বিয়ের পর ছেলে শ্বশুর বাড়ি থাকা শুরু করে। তারও আর্থিক অবস্থা ভালো না। অন্যদিকে মেয়েরও স্বামী মারা যায় দুই সন্তান রেখে। এ কারণে পুরো পরিবার পড়ে বিপাকে। এর মধ্যে বাবর আলী স্কুলে পড়ার সময়ই কাজে যোগ দেন। সংসারের হাল ধরেন। কিন্তু ২০০৭ সালের দিকে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এরপর আবারো মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করা শুরু করেন তারামন বেগম।

তিনি বলেন, ‘আমার পুলাডা হঠাৎ কইরা আরায়া গেলো গা। আমি এতো বিচরাইল্যাম, পাইল্যাম না। অনেকে কয় উঁ মইরা গেছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস উঁ আইবো। মায়ের দুঃখ মিটাইপো।’

Advertisement

কোন আইনি ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তারামন বেগম বলেন, ‘আমাগো তো কেউ নাই। ক্যাড়া খাটপো আমাগোর লাইগা। আমি নিজেই বিচরাইছি অরে। অহনো বিচরাই।’

তার প্রতিবেশী শহীদুল ইসলাম বলেন, কোনো কর্মক্ষম কেউ না থাকায় পরিবারটি খুবই অসহায় অবস্থায় আছে। একা ঘরেই থাকেন তিনি। ছেলেটা হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভিক্ষা করেই নিজের ভরণপোষণ চালান।

এ সময় প্রশাসন ও সমাজের বিবেকবানদের তারামন বেগমের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

নিখোঁজের বিষয়ে জানতে চাইলে ধামরাই থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) আতিক রহমান বলেন, বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Advertisement

এ বিষয়ে গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাদের মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে দ্রুত খবর নিয়ে সহায়তা করার চেষ্টা করবো।

এসজে/এএসএম