মতামত

ষড়যন্ত্রের গুজব, অজ্ঞতায় বিশ্বাস!

কবীর চৌধুরী তন্ময়

Advertisement

আমাদের সমাজে এখনো এমন কিছু মানুষ আছে, যারা তির্যক রোদের আলোতেও বলতে পারে, কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি হবে। আবার ঘড়ির কাঁটা না দেখেই বলতে পারে, এখন বেলা বারোটা। এই কথাগুলো বলার কারণ, শিক্ষা আপনাকে ভালো-মন্দের সূত্র মেলাতে সাহায্য করবে আর অভিজ্ঞতা আপনাকে সঠিক পথ ও মত বুঝের দিকে নিয়ে যাবে।

কুমিল্লা মহানগর নানুয়া দীঘির পাড় অস্থায়ী পূজা মণ্ডপকে ঘিরে যে ষড়যন্ত্র হয়েছিল- এটি রীতিমত খোলা চোখে কিংবা সাধারণ চিন্তায় অনুমান করা সম্ভব নয়। বেশ গভীর থেকেই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে রীতিমত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে, যার ক্যাম্পেইন শুরু করা হয়েছে পূজার বেশ আগ থেকে।

গুজব ছড়ানো ভিডিও কিংবা ফেসবুক লাইভগুলো যারা দেখেছেন, যারা সুচিন্তক-বিষয়টি তাদের অনুধাবন হওয়ার কথা। যেমন, ফাহিম নামের এক যুবক যার চোখে গোলাকার ফ্রেমের চশমা ছিলো, ফেসবুক লাইভে এসে সে কী কী বলেছিল, নিশ্চয়ই মনে আছে? হয়তো অনেকে আবেগ দিয়ে বিচার করেছেন। আর এটাই ফাহিমসহ ষড়যন্ত্রকারীরা চেয়েছেন। কারণ, বিবেক দিয়ে ধ্বংস নয় বরং সৃষ্টি করা হয়। আর আবেগকে কাজে লাগিয়ে বা ব্যবহার করে মূলত ধ্বংস করা সহজ যা পবিত্র কুরআন অবমাননার গুজবটিও আবেগের বিষয়টিকে এখানে ব্যবহার করা হয়েছে।

Advertisement

আসুন, ফাহিমের ভিডিওর কথোপথনের সাথে মিলিয়ে দেখি।

ফাহিম : ইতোমধ্যেই আমি যেখানে আছি, সে জায়গাটা হচ্ছে, একটা ভাইয়ের বাসা, নানুয়া দীঘির পাড়। আমরা এখানে কয়েকজন লুকাইয়া আছি।

মন্তব্য : সে জায়গাটা হচ্ছে, একটা ভাইয়ের বাসা, নানুয়া দীঘির পাড়-কুমিল্লায় বেড়ে উঠা কোনো ছেলে এইভাবে কথা বলবে না এবং ফাহিমের কথা বলার ধরনে প্রতীয়মান হয়, হয় ফাহিম কুমিল্লায় ভাড়া থাকে, অন্যথায় নতুন করে কুমিল্লায় গিয়েছে-আমার জন্ম ও বেড়ে উঠার স্থান কুমিল্লা শহরের অভিজ্ঞতা থেকেই আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।

ফাহিম : মূলত কাহিনী হচ্ছে, হিন্দুদের সাথে আজ মুসলমানের কত বছর, কত সুন্দর মিল। কখনো এমন কাহিনী আমরা দেখিনাই, আমাদের চোখে পড়েনি, কুমিল্লার কোনো পূজা মণ্ডপে এভাবে দেবতার পায়ের নিচে কুরআন শরীফ। এই প্রথম নানুয়া দীঘির যে পূজা মণ্ডপটা আছে, সেটাতে কুরআন শরীফ দেখা গেছে। সরাসরি সুষ্পষ্টভাবে তারা দেবতার পায়ের নিচে কুরআন শরীফটি রেখেছে!

Advertisement

মন্তব্য : দেখুন, এখানে ফাহিম বুঝাতে চেয়েছেন যে হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবতার পায়ের নিচে পবিত্র কুরআন শরীফ রাখা হয়েছে। আসলেও কি তাই? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ছবি ভাইরাল হয়েছে, সেখানে স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়েছে পূজা মণ্ডপের হনুমান দেবতার কোলে একটি কুরআন শরীফ দেখা যাচ্ছে। আবার ফাহিম (সরাসরি সুষ্পষ্টভাবে তারা দেবতার পায়ের নিচে কুরআন শরীফটি রেখেছে) খুব জোর দিয়েই বলছে, হিন্দুরা তাদের দেবতার পায়ের নিচেই কুরআন শরীফটি রেখেছে যা মুসলিম ধর্মপ্রাণ মানুষের আবেগ তৈরি করার ক্ষেত্রে ফাহিমের এমন মন্তব্য প্রতীয়মান হয়েছে।

ফাহিম : তখন তাদেরকে বলা হয়েছিল যে দেখেন, এটা তো এক প্রকার ধর্ম অবমাননা হচ্ছে। তারা বললো যে না, সেটা তো আমাদের, যে আমাদের যে দেবতা আছেন, তিনি সকল ধর্ম গ্রন্থের উপরে, তাই ঐ হিসেবে আমরা রেখেছি।

মন্তব্য : ফাহিমের এমন মন্তব্যে নানা রকম প্রশ্ন আসে। ফাহিম এতো ভোরে পূজা মণ্ডপে কেন গিয়েছিল? পূজা মণ্ডপে কার-কার সাথে কথা বলেছে? হিন্দু সম্প্রদায় যেখানে জানে-বুঝে যে, মুসলমান সম্প্রদায়ের পবিত্র কুরআন শরীফ পূজা মণ্ডপে রাখলে তাঁদের পূজাই হবে না, সেখানে এ কথা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক কেন বলতে যাবে? আরেকটি কথা, সুকৌশলে ফাহিম উল্লেখ করে মুসলিম সম্প্রদায়কে উস্কে দিয়েছিল যে, ''তিনি (হনুমান দেবতা) সকল ধর্ম গ্রন্থের উপরে, তাই ঐ হিসেবে আমরা রেখেছি"!

দেখুন, আজকের সময়ে সবার হাতে হাতে মোবাইল। ফাহিম সব কিছু করতে পারলো, কুরআন অবমাননার ছবি তুললো, পুলিশের দৌড়ানির মধ্যেও ফেসবুক লাইভ করতে পারলো, কিন্তু কার সাথে কী কথা বলেছে- এটির ভিডিও করতে পারলো না কেন?

ফাহিম : কিন্তু তারা যে আমাদের কথা ছিল, সেটা তারা মানেনি। তারপর যে উৎসক জনতা ছিলো, তারা এক আওয়াজে সরাসরিভাবে আন্দোলনে নেমে যায়। নেমে যাওয়ার পরে সেখানে সকাল থেকেই পুলিশের গাড়ি ছিল পাঁচ/ছয়টা, তারা টহল দিচ্ছিলো।

মন্তব্য : এখানেই ফাহিম উস্কে দিয়েছে যে, আমরা বলার পরেও পবিত্র কুরআন শরীফ সরিয়ে নেয়নি। আমাদের কথা মানেনি। ধরে নিলাম ফাহিমের কথা রাখেনি! কিন্তু উৎসক জনতা এতো সকাল-সকাল কোত্থেকে আসলো? ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার আগে এই জনতা জানলো কিভাবে? আর এতো-এতো জনতা যেহেতু ছিল, সেখানে ফাহিম নিজেই দায়িত্ব নিয়ে পবিত্র কুরআন শরীফটি পূজা মণ্ডপ থেকে নামিয়ে পাশেই মসজিদ ছিলো, সেখানে রাখতে পারতো। আর যেখানে পুলিশ টহল দিচ্ছে, সেখানে ফাহিমের উচিত ছিলো না যে, পুলিশের সহায়তা নেওয়া? আর ছবি, ভিডিও থাকার পর সোজা থানায় গিয়ে ওই পূজা মণ্ডপের আয়োজকদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া? কিন্তু ফাহিম সেটি করেনি বরং ঈমানি দায়িত্ব পালন করতে মাঠে নেমে পড়ল... !

দেখুন, এখানে ফাহিমের কথার সাথে গ্রেফতারকৃত ফায়েজের ভিডিও এর কোথাও কোনো মিল নেই। ফায়েজের ভিডিও এর দৃশ্যায়ণে আমরা দেখেছি, থানার ওসি কুরআন হাতে নিয়ে রেখেছে আর ফায়েজ চিৎকার দিয়ে বলছে, জেগে উঠো মুসলমান। অর্থাৎ, ফায়েজ আর ফাহিম তাদের ভিডিও এর মাধ্যমে মুসলিমদের জাগিয়ে তুলেছে। কি বলেন..?

ফাহিম : এখন ইতিপূর্বে আমরা যতটুকু জানতে পারি, ঐ জায়গায় ছিলাম, অনেকগুলো ছিটা বুলেট আমার শরীরে পড়ছে, যে ছিটা বুলেট্টা আমার এখানে লেগেছে, আমাকে আল্লাহ রক্ষা করেছে যে আমার চোখে পড়েনি। এই বুলেট্টা আমাকে খুব পেইন দিচ্ছে এবং শরীরে অনেকগুলো বুলেট পড়েছে।

মন্তব্য : এখানেও ফাহিমের কৌশলটা চমৎকার। কুরআন অবমাননা করায় পূজা মণ্ডপ ও প্রতিমা ভাঙ্গার ঈমানি দায়িত্ব পালন করতে এসে গুলি খেয়েছি, কিন্তু আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছেন। আপনিও ঈমানি দায়িত্ব পালন করুন। আল্লাহ আপনার সাথে আছেন।

ফাহিম : আমরা এসেছি মূলত এইটা সমাধান করার জন্য। আমরা হিন্দু ভাইদের সাথে কোনো মনোমালিন্য নাই। আমাদের সাথে যতজন আছে, সবাই জানে আমরা কেমন। মুসলমান কখনো এমন করতে পারে না। যে কোনো ধর্মের পূজোতে এতো বড় আয়োজনের মধ্যে আমরা ডিস্টাব করবো!

মন্তব্য : আর হ্যাঁ! ফাহিম এসেছিল, তবে কোত্থেকে এসেছিল-এটিও সময়ের সাথে-সাথে জানা যাবে বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত ফাহিমের কাছে যে তথ্য-উপাত্ত আছে, এটি খতিয়ে দেখা এবং ফাহিমের মুখোমুখি হওয়া। আর ফাহিম সমাধান করতে এসেছিল, নাকি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে এসেছিল-এটি এখন আর সুচিন্তকের কাছে অজানা নয়। যদিও ফাহিম তার ফেসবুক থেকে লাইভ করা ভিডিওটি সরিয়ে ফেলেছে, কিন্তু আমাদের কাছে ভিডিও ডাউনলোড করা আছে। ফাহিমের নম্বরে কল করেও জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু ফাহিমের মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ রেখেছে। ‘সত্য’ কি ভয় পায়? ভিডিও কেন ডিলেট করা হয়েছে?

ফাহিম : ধর্ম যার যার। উৎসবও তার তার।

মন্তব্য : এই স্লোগানটি নতুন না? কারা করেছে- একটু চিন্তা করে দেখুন তো! কারা ফেসবুকে এই স্লোগান পূজার বহু আগ থেকেই দেওয়া শুরু করেছে-আপনার ফেসবুক নিউজ ফিডে চোখ রাখলেই দেখতে পাবেন।

আমার এক সিনিয়র বন্ধু কবি জাহাঙ্গীর সাহেব, যিনি এখন পরলোক গমন করেছেন, তিনি একদিন আমাকে বলেছিলেন, ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। ধর্ম যার যার উৎসব সবার’-এটি তাঁর কবিতার পঙক্তিমালা যা আমরা দীর্ঘকাল থেকেই এটিকে স্লোগান হিসেবে ব্যবহার করে আসছি ধর্মীয় সম্প্রীতি ও মানবতাবোধ বজায় রাখতে।

তাহলে ফাহিম হঠাৎ করে ‘ধর্ম যার যার, উৎসবও তার তার’-এই স্লোগান নিয়ে আসলো কেন? কে এই ফাহিম? কী তার উদ্দেশ্য?

ফাহিম : সেখানে আমরা গিয়ে যে তাদের উৎসব নষ্ট করবো তা আমাদের লক্ষ্য না। আমাদের কথা একটাই, যে আপনারা অতি শীঘ্রই এটি সরিয়ে নিন। যেহেতু কুরআন শরীফটা আছে, এটা মুছে দিলেই শেষ হয়ে যায়, সমাধান হয়ে যায়। তারা সে সমাধান করছে না। তারা বলতেছে যে তাদের পূজো শেষ হওয়ার পর সে কাজটা করবে।

মন্তব্য : বাহ! ফাহিম খুব দায়িত্ব নিয়ে পূজা মণ্ডপে গিয়েছিল কুরআন শরীফটি মুছে ফেলার জন্য। আসলেও কি মুছে ফেলা সম্ভব? নাকি সরিয়ে ফেলা সম্ভব-এটি আপনি নিজ গুণে বুঝে নিবেন। কিন্তু ফাহিম যে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর দোষ চাপিয়ে ফেসবুক লাইভ শুরু করেছিল, সেই দোষ রেখেই ফেসবুক লাইেভর শেষ মিনিটে এসে দাঁড়িয়েছেন।

দেখুন, মজার বিষয় হচ্ছে- এখানে ফাহিম বুঝাতে চেয়েছে, ফাহিম যে কথিত লোকের সাথে কথা বলেছেন, তাদের এতো করে বলার পরেও তারা কুরআন শরীফটি সরায়নি, সমাধান করেনি বরং উল্টো বলেছে যে তাদের পূজো শেষ হওয়ার পর সে কাজটা করবে! আর এইসব কথার মধ্য দিয়েই ফাহিম তার উদ্দেশ্যটা সুকৌশলে বাস্তবায়ন করেছেন।

ফাহিম : ইতিপূর্বেই উৎসুক জনতারা, আপনারা ভালো করেই জানেন, ধর্ম-বর্ণ, ধর্ম একটা আবেগের জায়গা, সেখানে কিছু করলে সাথে-সাথে ইমোশন সৃষ্টি হয়ে যায়। মানুষ আর নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারে না। তখন মানুষ ভিতর দিয়ে যত কিছু আসে, সব কিছু দিয়ে নেমে পড়ে প্রতিবাদ করার জন্য। আমরা মুসলমান জাতি। আমরা চাই সুষ্পষ্টভাবে সমাধানে আসুক। আমরা চাই না, হিন্দু ভাইদের সাথে এতো বছরের সম্পর্ক মনোমালিন্য হয়ে যাক। আমরা চাই, এটার একটা সমাধান।

মন্তব্য : এখানেও ফাহিম সুকৌশলে প্রণয়ন করা নীল নকশার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন বলে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। আমরা মুসলমান জাতি, ধর্ম একটা আবেগের জয়গা, মানুষ তার নিজেকে ধরে রাখতে পারে না, যার যা আছে তা নিয়েই নেমে পড়ে প্রতিবাদ করতে-এসব কথা বলার মাধ্যমে ফাহিম মূলত আবেগতাড়িত মুসলিম সম্প্রদায়কে উস্কে দিয়েছে এবং মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর করতে উদ্বুদ্ধ করেছে।

ফাহিম : সবাই ভালো থাকবেন। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। এখনো এই জায়গায় আছি। চতুর পাশে পুলিশ আমাদেরকে ঘেরাও করে রাখছে। আল্লাহ জানে কী হয়। আল্লাহ হাফেজ।

মন্তব্য : এখানেও ফাহিম তার সুকৌশলে প্রণয়ন করা উদ্দেশ্য হাসিল করতে আবেগতাড়িত যুবকদের মাঠে নামার আহ্বান জানিয়েছেন। চারপাশে পুলিশ আর গুলি থাকার পরেও ফাহিমদের মতন যুবকরা ইসলামের জন্য যেখানে মাঠে, সেখানে তোমরা ঘরে থাকবে কেন?

পাঠক! অতীতের সকল গুজবের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর গুজব হচ্ছে- কারাগারে সাজা ভোগ করছেন মানবতাবিরোধী অপরাধী কুখ্যাত রাজাকার দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে। আর এই মিথ্যাচার-গুজব ছড়িয়ে দেশের সহজ-সরল মানুষদের বিশ্বাসকে ব্লাকমেইল করে স্বাধীনতাবিরোধীগোষ্ঠি যেভাবে মানুষকে হত্যা করেছে, জানমালে অগ্নিসংযোগ করেছে-এই ভয়ঙ্কর গুজব বিশ্বাসকারীগণ আজও নিজেকে ক্ষমা করতে পারেনি, লজ্জিত হন।

আর তাই উপরের লাইনেই যুক্ত করেছি, আপনার দক্ষতা আপনাকে আলোর পথের সন্ধান দিবে। সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু একটা ভাইরাল হলে, এটি বিশ্বাস ও শেয়ার করার আগে আপনি আপনার হাতের মোবাইল দিয়েই কিছুটা স্টাডি করতে পারেন। প্রথম সারির অনলাইনগুলোতে ওই বিষয়ের উপর নিউজ খোঁজে দেখতে পারেন। কারণ, গণমাধ্যম সব সময় দায়িত্বশীল এবং আইনের কাছে দায়বদ্ধ।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)।

এইচআর/এএসএম